সূরায়ে ফাতিহার ফজিলত :
সাহাবি আবু সাইদ ইবনে মুআল্লা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন :
“আমি তোমাকে কুরআনের একটি সুমহান সূরা শিখাব। সেটা হলো সূরা আল ফাতেহা। যার প্রথমাংশ আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। এটা সাবউল মাসানী বা সাতটি প্রশংসাযুক্ত আয়াত এবং এক মহান কুরআন যা আমাকে দান করা হয়েছে।”
সম্ভবত এ সব ফজিলতের কারণে সূরা ফাতেহার সালাতের মধ্যে পাঠ করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পাঠ করল না, তার সালাত শুদ্ধ নয়।”
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, কিন্তু সূরা ফাতেহা পাঠ করল না, তার সালাত ত্র“টিপূর্ণ। তিনি কথাটি তিনবার বলেছেন।” তখন আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কে জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা তো ইমামের পিছনে থাকি ? তিনি বললেন, মনে মনে পড়বে।”
সূরা বাকারা ও সূরায়ে আলে-ইমরানের ফজিলত :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“তোমরা দু’টি যাহরাবীন তথা পুষ্প পাঠ কর, যথা সূরা আল-বাকারা ও সূরা আলে ইমরান। কারণ এ দু’টি সূরা কেয়ামতের দিন মেঘমালার মত অথবা দু’দল পাখির ঝাঁকের ন্যায় সারিবদ্ধভাবে উড়বে। এরা উভয়ে পাঠকের পক্ষ গ্রহণ করবে। তোমরা সূরা বাকারা পাঠ কর। কারণ তার পাঠ করা বরকতের কারণ, তার পাঠ ত্যাগ করা হতাশা। অলসরা তা করতে পারবে না। মুআবিয়া বলেন, আমার শ্র“ত হয়েছে যে, বাতালার অর্থ জাদু।”
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
“যে ঘরে সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না।”
শয়তান ঘরে প্রবেশ না করার কারণ হচ্ছে তাতে আয়াতুল কুরসী রয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত :
জিব্রীল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থাকা অবস্থায় বলেন, দেখুন, এটা আকাশের একটি দরজা যা এই মাত্র খোলা হল। ইতিপূর্বে কখনো তা খোলা হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর ঐ দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা রাসূলের নিকট এসে বললেন, আপনি দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনার পূর্বে কোন নবিকে দেয়া হয়নি। সেটা হল, সূরা ফাতেহা ও সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলোর সুসংবাদ। আপনি এ দু’টো তিলাওয়াত করে যে কোন হরফ দ্বারা যা চাইবেন, তা আপনাকে দেয়া হবে।”
সূরা ইখলাসের ফজিলত :
আবু সাইদ খুদরি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন, সূরা ইখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।”
ফজিলতের ক্ষেত্রে সূরায়ে এখলাস কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। এ কথার অর্থ এই নয় যে, এ সূরা পুরো কুরআনের মোকাবিলায় যথেষ্ট। কারণ, কোন কিছু ফজিলতের দিক দিয়ে অন্য কোন বিষয়ের সমপর্যায়ের হলে এটা জরুরি নয় যে, এর ফলে অন্যটা না হলেও চলবে। সুতরাং কেউ সালাতে সূরা ফাতেহা ছেড়ে সূরা এখলাস তিনবার পড়লে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। যেমন হাদিসে এসেছে, আবু আইউব আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীচের দোআর ফজিলতের ব্যাপারে বলেছেন :
“যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তার কোন শরিক নেই, সকল রাজত্ব তার, তার জন্য সকল প্রশংসা। এ দুআ ১০ বার পড়ল, সে যেন ইসমাইল আলাইহিস সালামের সন্তানদের মধ্য থেকে চারজনকে মুক্ত করল।”
এ দু-আর ফজিলত জানার পর কেউ যদি কাফ্ফারার ৪ জন কৃতদাস মুক্ত করার পরিবর্তে এ জিকির করে, তবে তা গ্রহনযোগ্য হবে না। কারণ, এখানে তাকে গোলাম-ই আজাদ করতে হবে।
সূরায়ে নাস ও সূরায়ে ফালাকের ফজিলত :
উকবা ইবনে আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
“তুমি কি দেখনি আজ রাতে অবতীর্ণ হয়েছে এমন কিছু আয়াত, যেরূপ আয়াত আর লক্ষ্য করা যায়নি? তা হল সূরা ফালাক ও সূরা নাস।”
ইমাম নাসায়ি রহ. বর্ণনা করেন :
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উকবা রাদিআল্লাহু আনহু কে নির্দেশ দিলেন, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করার জন্য। তারপর তিনি বললেন, এ দু’টি সুরার ন্যায় অন্য কোন জিনিসের মাধ্যমে কেউ প্রার্থনা করেনি, আর এ দু’টি সুরার ন্যায় অন্য কোন জিনিসের মাধ্যমে কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেনি।”
প্রত্যেক বছর রমজান মাসে জিব্রীল আলাইহিস সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একবার পুরো কুরআন দাউর করতেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের বছর দু’ বার পুরো কুরআন দাউর করেন। যাতে কুরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হৃদয়ে স্থায়ী ও স্থিরভাবে বদ্ধ মূল হয়ে যায়। উলামায়ে কেরাম, সালফে সালেহিন রমজান ও রমজান ছাড়া অন্য মাসে কুরআন বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন। ইমাম যুহরি রাদিআল্লাহু আনহু রমজান মাস আগমন করলে বলতেন, এটা কুরআন তিলাওয়াতের মাস এবং খাদ্য দানের মাস। রমজান মাসে ইমাম মালেক রাদিআল্লাহু আনহু হাদিস পাঠ ও এলমি আসর পরিত্যাগ করতেন এবং পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতে আত্মনিয়োগ করতেন।
কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু সপ্তাহে একবার কুরআন খতম করতেন। রমজানে প্রতি ৩ দিনে একবার খতম করতেন এবং রমজানের শেষ দশকে প্রতি দিন এক খতম কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
প্রিয় পাঠক! আপনাদের উপর আল্লাহ রহম করুন, আপনারা এ সকল নেককারদের অনুসরণ করুন। মহা পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য দিন রাতের সদ্ব্যবহার করুন। কারণ, আয়ু খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে।
হে আল্লাহ! আমাদের এমন তিলাওয়াতের তওফিক দান করুন, যাতে আপনার সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হই। কুরআনকে আমাদের জন্য সুপথ ও সহজ-সরল নির্ভেজাল পথ প্রদর্শক রূপে বানিয়ে দিন। কুরআনের রশ্মি ও আলোর মাধ্যমে আমাদেরকে বক্রতা, পথভ্রষ্টতা ও অন্ধকারের অতল গহ্বর থেকে উজ্জ্বল জ্যোতিময় আলোর সন্ধান দিন। এ কুরআনের মাধ্যমে আমাদের সম্মান বৃদ্ধি করুন। আমাদেরকে গোপনীয় দোষ-ত্র“টি ও অপরের দোষ চর্চা করা থেকে বিরত রাখুন এবং আমাদের যাবতীয় গোপনীয় গুনাহ গোপন রাখুন। হে পরম করুণাময় ও দয়ালু প্রভু! আমাদের পিতা-মাতা ও শান্তি প্রিয় সকল মুসলমানকে ক্ষমা করুন। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবি মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ও তার পরিবারসহ সকল সাহাবি ও অনুসরণকারীদের উপর।