Friday, 9 February 2018

হজ্জ নিয়ে ইসলামিক হাদীস-৩ [ বুখারী শরীফ ]

হজ্জ নিয়ে ইসলামিক হাদীস-৩ [ বুখারী শরীফ ]

১৬২৩। মুহাম্মদ ইবনু আবূ বাকার (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এসে সাহাবীদের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন বায়তুল্লাহ এবং সাফা ও মারওয়ার তাওয়াফ করে। এরপর মাথার চুল মুড়িয়ে বা চুল ছেটে হালাল হয়ে যায়।

১৬২৪। ইয়াহইয় ইবনু বুকাইর (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করলাম। এ সময় সাফিয়্যা (রাঃ)-এর হায়েয দেখা দিল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে তা ইচ্ছা করছিলেন যা একজন পুরুষ তার স্ত্রীর সঙ্গে ইচ্ছা করে থাকে। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তিনি তো হায়েযা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে তো সে আমাদের আটকিয়ে ফেলবে। তারা বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সাফিয়্যা (রাঃ) তো কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত করে নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে রওয়ানা হও। কাসিম, ‘উরওয়া ও আসা’দ (রহঃ) সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, সাফিয়্যা কুরবানীর দিন তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করেছেন।

১৬২৫। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে যবেহ করা, মাথা কামান ও কংকর মারা এবং (এ কাজগুলো) আগে-পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই।

১৬২৬। ‘আলী ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিনাতে কুরবানীর দিন জিজ্ঞাসা করা হত, তখন তিনি বলতেনঃ কোন দোষ নেই। তাঁকে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করে বললেন, আমি যবেহ (কুরবানী) করার আগেই মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ যবেহ করে নাও, এতে দোষ নেই। সাহাবী আরো বললেন, আমি সন্ধ্যার পর কংকর মেরেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন দোষ নেই।

১৬২৭। ‘আবদুল্লাহ‌ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ‌ ইবনু ‘আমরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাওয়ারীতে) অবস্থান করছিলেন, তখন সাহাবীগণ তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেনঃ একজন জিজ্ঞাসা করলেন, আমি জানতাম না, তাই কুরবানী করার আগেই (মাথা) কামিয়ে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তুমি কুরবানী করে নাও, কোন দোষ নেই। তারপর অপর একজন এসে বললেন, আমি না জেনে কংকর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি ইরশাদ করলেনঃ কংকর মেরে নাও, কোন দোষ নেই। সেদিন যে কোন কাজ আগে পিছে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই।

১৬২৮। সা’ইদ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ‘আরদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর খুতবা দেওয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বলেলন, আমার ধারণা ছিল অমুক কাজের আগে অমুক কাজ, আমি কুরবানী কারার আগে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। আর কংকর মারার আগে কুরবানী করে ফেলেছি। এরূপ অনেক কথা জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই। সব কটির জবাবে তিনি এ কথাই কললেন। সেদিন তাঁকে যা-ই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, উত্তরে তিনি বলেনঃ করে নাও, কোন দোষ নেই।

১৬২৯। ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উটনীর উপর অবস্থান করছিলেন। তারপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। যুহরী (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় মা’মার (রহঃ) সালেহ (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

১৬৩০। ‘আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশ্যে একটি খুত্‌বা দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! আজকের এ দিনটি কোন্‌ দিনঃ সকলেই বললেন, সম্মানিত দিন। তারপর তিনি বললেনঃ এ শহরটি কোন্‌ শহর? তাঁরা বললেন, সম্মানিত শহর। তারপর তিনি বললেনঃ এ মাসটি কোন্‌ মাস? তারা বললেনঃ সম্মানিত মাস। তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের ইয্‌যত-হুরমত তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত, যেমন সম্মানিত তোমাদের এ দিনটি, তোমাদের এ শহরে এবং তোমাদের এ মাসে। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি কি (আপনার পয়গাম) পৌছিয়েছি? হে আল্লাহ! আমি কি পৌছিয়েছি? ইবনু ‘আব্বস (রাঃ) বলেন, সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই এ কথাগুলো ছিল তাঁর উম্মতের জন্য অসীয়ত। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেনঃ) উপস্থিত ব্যাক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে পৌছিয়ে দেয়। আমার পরে তোমরা কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।

১৬৩১। হাফ্‌স ইবনু ‘উমর (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ‘আরাফাত ময়দানে খুত্‌বা দিতে শুনেছি। ইবনু ‘উয়াইনা (রহঃ) ‘আম্‌র (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় বর্ণনায় শু’বা (রাঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

১৬৩২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের খুত্‌বা দিলেন এবং বললেনঃ তোমরা কি জানো আজ কোন্‌ দিন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। আমরা ধারণা করলাম সম্ভাবত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম পেল্টিয়ে অন্য নামে নামকরণ করবেন। তিনি বললেনঃ এটা কি যিলহাজ্জের (হজ্জ) মাস নয়? আমরা বললাম, হাঁ। তারপর তিনি বললেনঃ এটি কোন্‌ শহর? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) -ই সবচাইতে বেশী জানেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। ফলে আমরা ভাবতে লাগলাম, হয়ত তিনি এর নাম বদলিয়ে অন্য নামকরণ করবেন। তিনি বললেনঃ এ কি সম্মানিত শহর নয়? আমরা বললাম, নিশ্চয়ই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের জন এবং তোমাদের মাল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত এমন সম্মানিত যেমন সম্মান রয়েছে তোমাদের এ দিনের, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের শহরে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ শোন! আমি কি পৌছিয়েছি তোমাদের কাছে? সাহাবীগণ বললেন, হাঁ (ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )। তারপর তিনি বললেনঃ প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যাক্তির কাছে (আমার দাওয়াত) পৌছিয়ে দেয়। কেননা, কোন কোন মুবাল্লাগ শ্রবণকারী থেকে কখনো কখনো অধিক সংরক্ষণকারী হয়ে থাকে। তোমরা আমার পরে কুফরীর দিকে প্রত্যাবর্তন করো না যে, পরস্পর পরস্পরকে হত্যা করবে।

১৬৩৩। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রাঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় অবস্থানকালে বললেনঃ তোমরা কি জানো, এটি কো্‌ন দিন? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত দিন। (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্‌ শহর? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) সবচাইতে বেশী জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত শহর। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা কি জানো এটি কোন্‌ মাস? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল) ই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এটি সম্মানিত মাস। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ মাসে, এ শহরে, এ দিনটি তোমাদের জন্য যেমন সম্মানিত, তেমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জানো, তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের ইয্‌যত-আবরুকে তোমাদের পরস্পরের জন্য সম্মানিত করে দিয়েছেন। হিশাম ইবনু গায (রহঃ) নাফি’ (রহঃ)-এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) আদায়কালে কুরবানীর দিন জামারাতের মধ্যবর্তী স্থলে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলেছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন যে, এটি হল হাজ্জে (হজ্জ) আকবরের দিন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে লাগলেনঃ ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। এরপর তিনি সাহাবীগণকে বিদায় জানালেন। তখন সাহাবীগণ বললেন, এ-ই বিদায় হাজ্জ (হজ্জ)। ১০৯৩ পরিচ্ছেদঃ (হাজীদের) পানি পান করানোর ব্যবস্থাকারীদের ও অন্যান্য লোকদের (ওজর বশত) মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থান করা।

১৬৩৪। মুহাম্মদ ইবনু ‘উবাইদ ইবনু মায়মূন, ইয়াহইয়া ইবনু মূসা ও মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইর (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আব্বাস (রাঃ) পানি পান করারনোর জন্য মিনার রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থানের ব্যাপারে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম —এর নিকট অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। আবূ উসামা, ‘উক্‌বা ইবনু খালিদ ও আবূ যামরা (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনায় মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমাইরের অনুসরণ করেছেন।

১৬৩৫। আবূ নু’আইম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কখন কংকর মারব? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যখন কংকর মারবে, তখন তুমিও মারবে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষা করতাম, যখন সূর্য ঢলে যেত তখনই আমরা কংকর মারতাম।

১৬৩৬। মুহাম্মদ ইবনু কাসীর (রহঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বাতন ওয়াদী থেকে কংকর মারেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! লোকেরা তো এর উচ্চুস্থান থেকে কংকর মারে। তিনি বলেলেন, সে সত্তার কসম! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ লেই, এটা সে স্থান, যেখানে সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ওয়ালীদ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে এরূপ বর্ণনা করেন।

১৬৩৭। হফস ইবনু ‘উমর (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বড় জামরার কাছে গিয়ে বায়তুল্লাহকে বামে ও মিনাকে ডানে রেখে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। আর বলেন, যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে তিনিও এরূপ কংকর মেরেছেন।

১৬৩৮। আদম (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি যাস’ঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলেন। তখন তিনি বায়তুল্লাহকে নিজের বামে রেখে এবং মিনাকে ডানে রেখে বড় জামরাকে সাতটি কংকর মারতে দেখেছেন। এর পর তিনি বললেন, এ তাঁর দাঁড়াবার স্থান যাঁর প্রতি সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে।

১৬৩৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে মিম্বারের উপর এরূপ বলতে শুনেছি, যে সূরার মধ্যে বাকারার উল্লেখ রয়েছে, যে সূরার মধ্যে আলে ‘ইমরানের উল্লেখ রয়েছে এবং যে সূরার মধ্যে নিসা-এর উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ সে সূরা বাকারা, সূরা আলে ‘ইমরান ও সূরা নিসা পছন্দ করত না। বর্ণনাকারী আ’মাশ (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারটি আমি ইবরাহীম (রহঃ)-কে বললাম। তিনি বললেন, আমার কাছে ‘আবদুর রাহমান ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জামরায়ে ‘আকাবাতে কংকর মারার সময় তিনি ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বাতন ওয়াদীতে গাছটির বরাবর এসে জামরাকে সম্নে রেখে দাঁড়ালেন এবং তাকবীর সহকারে কংকর মারলেন। এরপর বললেন, সে সত্তার কসম যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ লেই, এ স্থানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি, যাঁর উপর নাযিল হয়েছে সূরা বাকারা (অর্থাৎ সূরা বাকারা বলা বৈধ)।

১৬৪০। ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবা (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি প্রথম জামরায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ করতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কেবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং তাঁর উভয় হাত তুলে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় কংকর মারতেন এবং একটু বাঁ দিকে চলে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাঁর উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। এরপর বাতন ওয়াদী থেকে জমরায়ে ‘আকাবায় কংকর মারতেন। এর কাছে তিনি বিলম্ব না করে ফিরে আসতেন এবং বলতেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এবূপ করতে দেখেছি।

১৬৪১। ইসমা’ঈল ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) নিকটবর্তী জামরায় সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সাথে তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। তারপর মধ্যবর্তী জামরায় অনুরূপভাবে কংকর মারতেন। এরপর বাঁ দিক হয়ে সমতল ভূমিতে এসে কিবলামুখী হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতেন এবং এর কাছে তিনি দেরী করতেন না। তিনি বলতেন, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি অনুরূপ করতে দেখেছি।

১৬৪২। মুহাম্মদ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মসজিদে মিনার দিক থেকে প্রথমে অবস্থিত জমরায় যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কংকর মারতেন, সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রত্যেকটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। এরপর সামনে এগিয়ে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন এবং এখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেন। তারপর দ্বিতীয় জামরায় এসে সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলতেন। তারপর বাঁ দিকে মোড় নিয়ে ওয়াদীর কাছে এসে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতেন এবং উভয় হাত উঠিয়ে দু’আ করতেন। অবশেষে ‘আকাবার কাছের জামরায় এসে তিনি সাতটি কংকর মারতেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তাকবীর বলতেন। এরপর ফিরে যেতেন, এখানে বিলম্ব করতেন না। যুহরী (রহঃ) বলেন, সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ)-কে তাঁর পিতার মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। (রাবী বলেন) ইবনু ‘উমর (রাঃ)-ও তাই করতেন।

১৬৪৩। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার এ দু’হাত দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে খুশবু লাগিয়েছি, যখন তিনি ইহ্‌রাম বাঁধার ইচ্ছা করেছেন এবং তাওয়াফে যিয়ারতের পূর্বে যখন তিনি ইহরাম খুলে হালাল হয়েছেন। এ কথা বলে তিনি তাঁর উভয় হাত প্রসারিত করলেন।

১৬৪৪। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেওয়া হয় যে, তাদের শেষ কাজ যেন হয় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তবে এ হুকুম ঋতুবতী মহিলাদের জন্য শিথিল করা হয়েছে।

১৬৪৫। আসবাগ ইবনু ফারজ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে উপত্যকায় কিছুক্ষণ গুয়ে থাকেন। তারপর সাওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহর দিকে এসে তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেন। লায়স (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর মাধ্যমে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ হাদীস বর্ণনায় ‘আমর ইবনু হারিস (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন।

১৬৪৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী সাফিয়্যা বিনত হুয়াই (রাঃ) হায়েযা হলেন এবং পরে এ কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে অবগত করানো হয়। তখন তিনি বললেনঃ সে কি আমাদের আটকিয়ে রাখবে? তারা বললেন, তিনি তাওয়াফে যিয়ারত সমাধা করে নিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তো আর বাধা নেই।

১৬৪৭। আবূ’নু’মান (রহঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাওয়াফে যিয়ারতের পর হায়েয এসেছে এমন মহিলা সম্পর্কে মদিনাবাসী ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাদের বললেন, সে রওয়ানা হয়ে যাবে। তারা বললেন, আমরা আপনার কথা গ্রহণ করব না এবং যায়দের কথাও বর্জন করব না। তিনি বললেন, তোমরা মদিনায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে নেবে। তাঁরা মদিনায় এসে জিজ্ঞেস করলেন। যাঁদের কাছে তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উম্মে সুলাইম (রাঃ)-ও ছিলেন। তিনি তাঁদের সাফ্যিয়া (উম্মুল মু’মিনীন) (রাঃ)-এর ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। হাদিসটি খালিদ ও কতাদা (রহঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন।

১৬৪৮। মুসলিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাওয়াফে যিয়ারত আদায় করার পর ঋতুবর্তী মহিলাকে রওনা হয়ে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সে মহিলা রওয়ানা হতে পারবে না। পরবর্তীতে তাঁকে ই কথাও শুনেছি যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন।

১৬৪৯। আবূ নু’মান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে বের হলাম। হাজ্জ (হজ্জ)ই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌছে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা ও মারওয়ার সা’য়ী করলেন। তবে ইহরাম ফেলেননি। তাঁর সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার ছিল। তাঁর সহধর্মিণী ও সাহাবীগণের মধ্যে যারা তাঁর সঙ্গে ছলেন তাঁরাও তাওয়াফ করলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল না, তাঁরা হালাল হয়ে গেলেন। এরপর ‘আয়িশা (রাঃ) ঋতুবর্তী হয়ে পরলেও (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা হাজ্জের (হজ্জ) সমুদয় হুমুম-আহকাম আদায় করলাম। এরপর যখন লায়লাতুল-হাসবা অর্থাৎ রওয়ানা হওয়ার রাত হল, তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি ব্যতীত আপনার সকল সাহাবী তো হাজ্জ (হজ্জ) ও উমরা করে ফিরছেন। রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমরা যে রাতে এসেছি সে রাতে তুমি কি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করনি? আমি বললাম, না। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তান’ঈম (নামক স্থানে) চলে যাও এবং সেখান থেকে ‘উমরার ইহরাম বেঁধে নাও। আর অমুক অমুক স্থানে তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের ওয়াদা থাকল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-এর সঙ্গে তান’ঈমের দিকে গেলাম এবং ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম। আর সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে বিরক্ত হয়ে বলেনঃ তুমি তো আমাদেরকে আটকিয়ে ফেললে। তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করছিলে? তিনি বললেন, হাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে কোন বাধা নেই, রওয়ানা হও। [‘আয়িশা (রাঃ) বলেন] আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মিলিত হলাম। এমতাবস্থায় যে, তিনি মক্কার উপরের দিকে উঠছিলেন, আর আমি নিচের দিকে নামছিলাম। অথবা আমি উঠছিলাম আর তিনি নামছিলেন। মূসা’দ্দাদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় এ হাদীসে (হাঁ)-এর পরিবর্তে ‘লা’ (না) রয়েছে। রাবী জারীর (রহঃ) মনসূর (রহঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণনায় সুসা’দ্দাদ (রহঃ)-এর অনুরূপ ‘লা’ (না) বর্ণনা করেছেন।

১৬৫০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফা’য় (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তামি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মনে রেখেছেন এমন কিছু কথা আমাকে বলুন। তারবিয়ার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত (নামায/নামাজ) কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, আবতাহ নামক স্থানে। (তারপর বললেন, )তুমি তাই কর যেভাবে তোমার শাসকগণ করেন।

১৬৫১। ‘আবদুল মুতা’আলী ইবনু তালিব (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহর, ‘আসর, মাগরিব ও ‘ইশার সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের পর মুহাস্‌সাবে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকেন, পরে সাওয়ার হয়ে বায়তুরল্লাহর দিকে গেলেন এবং রায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন।

১৬৫২। আবূ নু’আইম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তা হল একটি মানযিল মাত্র, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করতেন, যাতে বেরিয়ে যাওয়া সহজতর হয় অর্থাৎ আবতাহ।

১৬৫৩। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুহাস্‌সাবে অবতরণ করা (হাজ্জের (হজ্জ)) কিছুই নয়। এ তো শুধু একটি মানযিল, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।

১৬৫৪। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) দু’ পাহাড়ের মধ্যস্থিত যু-তুয়া নামক স্থানে রাত যাপন করতেন। এরপর মক্কায় উঁচু গিরিপথের দিক থেকে প্রবেশ করতেন। হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা আদায়ের জন্য মক্কা আসলে তিনি মসজিদে হারামের দরজার সামনে ব্যতীত কোথাও উট বসাতেন না। তারপর মসজিদে প্রবশ করে হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন এবং সেখান থেকে তাওয়াফ আরম্ভ করতেন এবং সাত চক্কর তাওয়াফ করতেন। তিনবার দ্রুতবেগে আর চারবার স্বভাবিক গতিতে। এরপর ফিরে এসে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং নিজের মনযিলে ফিরে যাওয়ার আগে সাফা-মারওয়ার মধ্যে সা’য়ী করতেন। আর যখন হাজ্জ (হজ্জ) বা ‘উমরা থেকে ফিরতেন তখন যুল-হুলাইফা উপত্যকার বাতহা নামক স্থানে অবতরণ করতেন, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবতরণ করেছিলেন।

১৬৫৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল ওয়াহ্‌হাব (রহঃ) খালিদ ইবনু হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-কে মুহাসসাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি নাফি’ (রহঃ) থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমর ও ইবনু ‘উমর (রাঃ) সেখানে অবতরণ করেছেন। নাফি’ (রহঃ) থেকে আরো বর্ণিত রয়েছে যে, ইবনু ‘উমর (রাঃ) মুহাসসাবে যোহর ও ‘আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আমার মনে হচ্ছে, তিনি মাগরিবের কথাও বলেছেন। খালিদ (রাঃ) বলেন, ‘ইশা সম্পর্কে আমার কোন সন্দেহ নেই এবং তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নিদ্রা যেতেন। এ কথা ইবনু ‘উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই বর্ণনা করতেন।

১৬৫৬। ‘উসমান ইবনু হায়সাম (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যুল-মাজায ও ‘উকায লোকদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। ইসলাম আসার পর মুসলিমগণ যেন তা অপছন্দ করতে লাগ, অবশেষে এ আয়াত নাযিল হয়ঃ ‘তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করাতে তোমাদের কোন পাপ নেই হাজ্জের (হজ্জ) মৌসুমে’ (২:১৯৮)।

১৬৫৭। ‘উমর ইবনু হাফস (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যাবর্তনের দিন সাফিয়্যা (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিলে তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছে আমি তোমাদেরকে আটকিয়ে ফেললাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে ‘আকরা’, ‘হালকা’ বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন এবং বললেনঃ সে কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছে? বলা হল, হাঁ। তিনি বললেনঃ তবে চল। আবূ ‘আবদুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহঃ)] অন্য সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা (মক্কায়) আসলাম, তখন আমাদের হালাল হওয়া নির্দেশ দেন। তারপর প্রত্যাবর্তনের রাত এলে সাফিয়্যা বিন্ত হুয়াই (রাঃ)-এর ঋতু আরম্ভ হল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হালকা’ আকরা’, বলে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেনঃ আমার ধারণা, সে তোমাদের আটকিয়েই ফেলবে। তারপর বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন তাওয়াফ করেছিলে? সাফিয়্যা (রাঃ) বললেন, হাঁ। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তবে চল। আমি বললাম ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো (‘উমরা আদায় করে) হালাল হইনি। তিনি বললেনঃ তাহলে এখন তুমি তান’ঈম থেকে ‘উমরা আদায় করে নাও। তারপর তাঁর সঙ্গে তার ভাই (‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ)] গেলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, (‘উমরা আদায় করার পর) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়, যখন তিনি শেষ রাতে (বিদায় তওয়াফের জন্য) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ অমুক স্থানে তোমার সাক্ষাত করবে।

১৬৫৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এক ‘উমরার পর আর এক ‘উমরা উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হল হাজ্জে (হজ্জ) মাবরূরের প্রতিদান।

১৬৫৯। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ‘ইা ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা আদায় করা সম্পর্কে করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বললেন, এতে কোন দোষ নেই। ‘ইকরিমা (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা আদায় করেছেন। ইবরাহীম ইবনু সা’দ (রহঃ) ইবনু ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘ইা ইবনু খালিদ (রহঃ) বলেছেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। পরবর্তী অংশ উক্ত হাদীসের অনুরূপ।

১৬৬০। ‘আমর ইবনু ‘আলী (রহঃ) ‘ইা ইবনু খলিদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। অবশিষ্ট অংশে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ।

১৬৬১। কুতায়বা (রহঃ) মুজাহিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এবং ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার পাশে বসে আছেন। ইতিমধ্যে কিছু লোক মসজিদে সালাত (নামায/নামাজ)ুদ্দোহা আদায় করতে লাগল। আমরা তাঁকে এদের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এটা বিদ’আত। এরপর ‘উরোয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) তাঁকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ‘উমরা আদায় করেছেন? তিনি বললেন, চারবার। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। আমরা তাঁর কথা রদ করা পছন্দ করলাম না। আমরা উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরার ভিতর থেকে তাঁর মিসওয়াক করার আওয়াজ গুনতে পেলাম। তখন ‘উরওয়া (রাঃ) বললেন, হে আম্মাজানো, হে উম্মুল মুমিনীন! আবূ ‘আব্দুর রাহমান কি বলেছেন, আপনি কি শুনেন নি? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি কি বলছেন? ‘উরওয়া (রহঃ) বললেন, তিনি বলছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার ‘উময়া আদায় করেছেন। এর মধ্যে একটি রজব মাসে। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আবূ ‘আবদুর রাহমানের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কোন ‘উমরা আদায় করেননি, যে তিনি তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখনো ‘উমরা আদায় করেননি।

১৬৬২। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাসে কখন ‘উমরা আদায় করেননি।

১৬৬৩। হাসসান ইবনু হাস্‌সান (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার ‘উমরা আদায় করেছেন? তিনি বললেন, চারবার। তন্মধ্যে হুদায়বিয়ার ‘উমরা যু-কা’দা মাসে মুশরিকরা তাঁকে মক্কা প্রবেশ করতে বাঁধা দিয়ছিল। পরবর্তী বছরের যুল-কা’দা মাসের ‘উমরা, যখন মুশরিকদের সাথে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল জী’রানার ‘উমরা, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গনীমতের মাল, সম্ভবতঃ হুনায়নের যুদ্ধে বন্টন করেন। আমি বললাম, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতবার হাজ্জ (হজ্জ) করেছেন? তিনি বললেন, একবার।

১৬৬৪। আবূল ওয়ালীদ হিশাম ইবনু ‘আবদুল মালিক (রহঃ) কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার ‘উমরা করেছেন যখন তাঁকে মুশরিকরা ফিরিয়ে দিয়েছিল। তার পরবর্তী বছর ছিল হুদায়বিয়ার (চুক্তি অনুযায়ী) ‘উমরা, (তৃতীয়) ‘উমরা (জী’রানা) যুল-কা’দা মাসে আর হাজ্জের (হজ্জ) মাসে অপর একটি ‘উমরা করেছেন।

১৬৬৫। হুদাবা ইবনু খালিদ (রহঃ) হাম্মাম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারটি ‘উমরা করেছেন। তন্মধ্যে হাজ্জের (হজ্জ) মাসে যে ‘উমরা করেছেন তা ছাড়া বাকী সব ‘উমরাই যুল-কা’দা মাসে করেছেন অর্থাৎ হুদায়বিয়ার ‘উমরা, পরবর্তী বছরের ‘উমরা, জী’রানার ‘উমরা যেখানে তিনি হুনায়নের মালে গনীমত বন্টন করেছিলেন এবং হাজ্জের (হজ্জ) মাসে আদায়কৃত মাসে আদায়কৃত ‘উমরা।

১৬৬৬। আহমদ ইবনু ‘উসমান (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-কা’দা মাসে হাজ্জের (হজ্জ) আগে ‘উমরা করেছেন। রাবী বলেন, আমি বারা’ ইবনু ‘আযিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) করার আগে দু’বার যুল-কা’দা মাসে ‘উমরা করেছেন।

১৬৬৭। মূসা’দ্দাদ (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করতে তোমার বাঁধা কিসের? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহিলার নাম বলেছিলেন কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছি। মহিলা বলল, আমাদের একটি পানি বহনকারী উট ছিল। কিন্তু তাতে অমুকের পিতা ও তার পুত্র (অর্থাৎ মহিলার স্বামী ও ছেলে) আরোহণ করে ছলে গেছেন। আর মাদের জন্য রেখে গেছেন পানি বহনকারী আরেকটি উট যার দ্বারা আমরা পানি বহন করে থাকি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আচ্ছা, রমযান এলে তখন ‘উমরা করে নিও। কেননা, রমযানের একটি ‘উমরা একটি হাজ্জের (হজ্জ) সমতুল্য। অথবা সেরূপ কোন কথা তিনি বলেছিলেন।

১৬৬৮। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণীত, তিনি বলেন, আমরা সাসূলুল্লাহ –এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম যখন যিলহাজ্জ আগত প্রায়। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ তোমাদের মধ্যে যে হাজ্জের (হজ্জ) ইবহাম বাঁধাতে চায়, যে যেন হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধে নেয়। আর যে ‘উমরার ইহরাম বাঁধতে চায় সে যেন ‘উমরার ইহরাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আমতাম তা হলে অবশ্যি আমি ‘উমরার ইহ্‌রাম বাঁধতাম। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ ‘উমরার ইহ্‌রাম বাঁধালেন, আবার কেউ হাজ্জের (হজ্জ)। যারা ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের একজন। ‘আরাফার দিন এল, তখন আমি ঋতুবর্তী ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তা জানালাম। তিনি বললেনঃ ‘উমরা ছেড়ে দাও এবং মাথায় বেনী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধ। যখন মুহাসসাবের রাত হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সঙ্গে (আমার ভাই) ‘আবদুর রাহমানকে তান’ঈমে পাঠালেন এবং আমি ছেড়ে দেওয়া ‘উমরার স্থলে নতুনভাবে ‘উমরার স্থলে নতুনভাবে ‘উমরার ইহ্‌রাম বাঁধলাম।

১৬৬৯। ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ বাকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সাওয়ারীর পিঠে ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বসিয়ে তান’ঈম থেকে ‘উমরা করানোর নির্দেশ দেন। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) একবার বলেন, এ হাদীস আমি ‘আমরের কাছে বহুবার শুনেছি।

১৬৭০। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বেঁধেছিলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তালহা (রাঃ) ছাড়া কারো সাথে কুরবানীর পশু ছিল না। আর ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে এলেন এবং তাঁর সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। তিনি বলেছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিষয়ের ইহরাম বেঁদেছেন, আমিও তার ইহ্‌রাম বাঁধলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ইহ্‌রামকে ‘উমরায় পরিণত করতে এবং তাওয়াফ করে এরপর মাথার চুল ছোট করে হালাল হয়ে যেতে নির্দেশ দিলেন। তবে যাদের সঙ্গে কুরবানীর জানোয়ার রয়েছে (তারা হালাল হবে না) তাঁরা বললেন, আমরা মীনার দিকে রওয়ানা হবো এমতাবস্থায় আমাদের কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এসেছে। এ সংবাদ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট পৌছলে তিনি বললেনঃ যদি আমি এ ব্যাপার পূর্বে জানতাম, যা পরে জানতে পারলাম, তাহলে কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে আনতাম না। আর যদি কুরবানীর পশু আমার সঙ্গে না থাকত অবশ্যই আমি হালাল হয়ে যেতাম। তার (একবার) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ঋতু দেখা দিল। তিনি বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া হাজ্জের (হজ্জ) সব কাজই সম্পন্ন করে নিলেন। রাবী বলেন, এরপর যখন তিনি পাক হলেন এবং তাওয়াফ করেলেন, তখন বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার তো হাজ্জ (হজ্জ) এবং উমরা উভয়টি পালন করে ফিরছেন, আমি কি শুধু হাজ্জ (হজ্জ) করেই ফিরব? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আব্দুর রাহমাইবনু আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন তাকে সঙ্গে নিয়ে তান’ঈমে যায়। তারপর যিলহাজ্জ মাসেই হাজ্জ (হজ্জ) আদায়ের পর ‘আয়িশা (রাঃ) ‘উমরা আদায় করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জামরাতুল ‘আকাবায় কংকর মারছিলেন তখন সুরাকা ইবনু মালিক ইবনু জু’শুম (রাঃ)-এর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সাক্ষাত হয়। তিনি বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এ হাজ্জের (হজ্জ) মাসে ‘উমরা আদায় করা কি আপনাদের জন্য খাস? রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ না, এতো চিরদিনের (সকলের) জন্য।

১৬৭১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন যিলহাজ্জ মাস আগত প্রায়, তখন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে ব্যাক্তি ‘উমরার ইহ্‌রাম বাঁধতে চায়, সে যেন ‘উমরার ইহ্‌রাম বেঁধে নেয়। আর যে ব্যাক্তি হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্‌রাম বাঁধতে চায় সে যেন হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্‌রাম বেঁধে নেয়। আমি যদি কুরবানীর জানোয়ার সঙ্গে না আনতাম তাহলে অবশ্যই আমি ‘উমরার ইহ্‌রাম বাঁধতাম। তাই তাঁদের কেউ ‘উমরার ইহ্‌রাম বাঁধলেন আর কেউ হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্‌রাম বাঁধলেন। যারা ‘উমরার ইহ্‌রাম বেঁধেছিলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন। এরপর মক্কা পৌঁছার আগেই আমার ঋতু দেখা দিল। ‘আরাফার দিবস চলে এল, আর আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম। তারপর তামার এ অসুবিধার কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট বললাম। তিনি বললেনঃ ‘উমরা ছেড়ে দাও। আর বেনী খুলে মাথা আঁচড়িয়ে নাও। তারপর হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্‌রাম বেঁধে নাও। আমি তাই করলাম। সুহাস্‌সাবের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সাথে ‘আবদুর রাহমানকে তান’ঈম পাঠালেন। (রাবী বলেন) ‘আবদুর রাহমান (রাঃ) তাঁকে সাওয়ারীতে নিজের পেছনে বসিয়ে নিলেন। তারপর ‘আয়িশা (রাঃ) আগের ‘উমরার স্থলে নতুন ‘উমরার ইহ্‌রাম বাঁধলেন। এমনিভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা উভয়টই পুরা করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এর কোন ক্ষেত্রেই কুরবানী বা সাদাকা দিতে কিংবা সিয়াম পালন করতে হয়নি।

১৬৭২। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আসোয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সাহাবীগণ ফিরছেন দু’টি নুসূক (অর্থাৎ হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরা) পালন করে আর আমি ফিরছি একটি নুসূক (শুধু হাজ্জ (হজ্জ)) আদায় করে। তাঁকে বলা হল, অপেক্ষা কর। পরে যখন তুমি পবিত্র হবে তখন তান’ঈমে গিয়ে ইহ্‌রাম বাঁধবে এরপর অমুক স্থানে আমাদের কাছে আসবে। এ’উমরা (এর সওয়াফ) হবে তোমার খরচ বা কষ্ট অনুপাত।

১৬৭৩। আবূ নু’আয়ম (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম্‌ বেঁধে বের হলাম, হাজ্জের (হজ্জ) মাসে এবং হাজ্জের (হজ্জ) অনুষ্ঠানাদি পালনের উদ্দেশ্যে। যখন সারিফ নামক স্থানে অবতণ করলাম, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে বললেনঃ যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার নেই এবং সে এই ইহরামকে ‘উমরায় পরিণত করতে চায়, সে যেন তা করে নেয় (অর্থাৎ ‘উমরা করে হালাল হয়)। আর যার সাথে কুরবানীর জানোয়ার আছে সে এরূপ করবে না (অর্থাৎ হালাল হতে পাওরবে না)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর কয়েকজন সমর্থ সাহাবীর নিকট কুরবানীর জানোয়ার ছিল তাঁদের ‘উমরা হয়নি। [‘আয়িশা (রাঃ) বললেন] আমি কাঁদছিলাম, এমতাবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আপনি আপনার সাহাবীগণকে যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি। আমি তো ‘উমরা থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার কি অবস্থা? আমি বললাম, আমি তো সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছি না। তিনি বললেনঃ এতে তোমার ক্ষতি হবে না। তুমি তো একজন আদম কন্যাই। তাদের অদৃষ্টে যা লেখা ছিল তোমার জন্যও তা লিখিত হয়েছে। সুতরাং তুমি তোমার হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর। সম্ভাবতঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাকে ‘উমারাও দান করবেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি এ অবস্থায়ই থেকে গেলাম এবং পরে মিনা থেকে প্রত্যাবর্তন করে মুহাস্‌সাবে অবতরণ করলাম। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আবদুর রাহমান (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ তুমি তোমায়াফ করে নিবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। আমরা মধ্যরাতে এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি তাওয়াফ সমাধা করেছ? আমি বললাম, হাঁ। এ সময় তিনি সাহাবীগণকে রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা দিলেন। তাই লোকজন এবং যাঁরা ফজরের পূর্বে তাওয়াফ করেছিলেন তাঁরা রওয়ানা হলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা অভিমুখে রওয়ানা হলেন।

১৬৭৪। আবূ নু’আইম (রহঃ) ই’য়ালা ইবনু উমায়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জি’ররানাতে ছিলেন। এ সময় জুব্বা পরিহিত একব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এসে বললেন, আপনি ‘উমরাতে আমাকে কি কাজ করার নির্দেশ দেন? লোকটির জুব্বাতে খালূক বা হল্‌দে রঙের দাগ ছিল। এ সময় আল্লাহ তা’আলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর অহী নাযিল করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাপড় দিয়ে আচ্ছাদিত করে দেওয়া হল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহ তাঁর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম র প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখতে চাই। ‘উমরা (রাঃ) বললেন, এসো, আল্লাহ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি অহী নাযিল করছেন, এমতাবস্থায় তুমি কি তাঁকে দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম, হাঁ। তারপর ‘উমর (রাঃ) কাপড়ের একটি কোণ উঁচু করে ধরলেন। আমি তাঁর দিকে নজর করলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আওয়াজ করছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলছিলেন, উটের আওয়াজের মত আওয়াজ। এ অবস্থা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দূরীভুত হলে তিনি বললেনঃ ‘উমরা সম্পর্কে পেশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার থেকে জুব্বাটি খুলে ফেল, খালুকের চিহ্ন ধুয়ে ফেল এবং হলদে রঙ পরিষ্কার করে নাও। আর তোমার হাজ্জে (হজ্জ) যা করেছ ‘’উমরাতে তুমি তা-ই করবে।

১৬৭৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘উরওয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আল্লাহর বানীঃ সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কা’বাগৃহের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা ‘উমরা সম্পন্ন করে এ দু’টির মধ্যে সা’য়ী করে, তার কোন পাপ নেই। (২:১৫৮) তাই সাফা-মারওয়ার সা’য়ী না করা আমি কারো পক্ষে অপরাধ মনে করি না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, বিষয়টি এমন নয়। কেননা, তুমি যেমন বলছ, ব্যাপারটি তেমন হলে আয়াতটি অবশ্যই এমন হতঃ অর্থাৎ এ দু’টির মাঝে তাওয়াফ না করলে কোন পাপ নেই। এ আয়াত তো আনসারদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। কেননা তারা মানাতের জন্য ইহ্‌রাম বাঁধত। আর মানাত কুদায়দের সমানে ছিল। তাই আনসাররা সাফা-মারওয়া তাওয়াফ করতে দ্বিধাবোধ করত। এরপর ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেনঃ ‘সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতারাং যে কা’বাগৃহের হাজ্জ (হজ্জ) কিংবা ‘উমরা সম্পন্ন করে এ দু’টির মধ্যে সা’য়ী করে, তার কোন পাপ নেই। সুফিয়ান ও আবূ মু’আবিয়া (রাঃ) হিশাম (রহঃ) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাফা-মারওয়ার তাওয়াফ না করলে আল্লাহ কারো হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরাকে পূর্ণাঙ্গ গন্য করেন না।

১৬৭৬। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘উমরা করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ‘উমরা করলাম। তিনি মক্কা প্রবেশ করে তাওয়াফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে তাওয়াফ করলাম। এরপর তিনি সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে সা’য়ী করলাম। আর আমরা তাঁকে মক্কাবাসীদের থেকে লুকিয়ে রাখছিলাম যাতে কোন মুশরিক তাঁর প্রতি কোন কিছু নিক্ষেপ করতে না পারে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার এক সাথী তাঁকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কা’বা শরীফে প্রবেশ করেছিলেন? তিনি বললেন, না। প্রশ্নকারী তাঁকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদিজা (রাঃ) সম্বন্ধে কি বলেছেন? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ খাদীজাকে বেহেশতের মাঝে একটি মোতি দিয়ে নির্মিত এমন একটি ঘরের সুসংবাদ দাও যেখানে কোন শোরগোল থাকবে না এবং কোন প্রকার কষ্ট ক্লেশও থাকবে না।

১৬৭৭। হূমায়দী (রহঃ) ‘আমার ইবনু দীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমরার মাঝে বায়তুল্লাহর তাওয়াফের পর সাফা-মারওয়র তাওয়াফ না করে যে স্ত্রীর নিকট গমন করে, এমন ব্যাক্তি সম্পর্কে আমরা ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) এসে বায়তুল্লাহ সাতবার তাওয়াফ করে মাকামে ইব্‌রাহীমের পাশে দু’রাক’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এরপর সাতবার সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’য়ী করেছেন। আর তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ তো রয়েছে আল্লাহর রাসূল -এর মাঝেই। (রাবী) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) বলেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কেও আমরা জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেছেন, সাফা-মারওয়ার মাঝে তাওয়াফ না করা পর্যন্ত কেউ তার স্ত্রীর নিকট অবশ্যই যাবে না।

১৬৭৮। মুহাম্মদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) আবূ মূসা আল-আশ্‌’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় বাতহায় অবতারণ করলে আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি বললেনঃ তুমি কি হাজ্জ (হজ্জ) করেছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেনঃ তুমি কিসের ইহ্‌রাম বেঁধেছিলে? আমি বললাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইহারামের মত আমিও ইহ্‌রামের তালবিয়া পাঠ করেছি। তিনি বললেনঃ ভাল করেছ। এখন বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে হালাল হয়ে যাও। তারপর আমি বায়তুল্লাহ এবং সাফা-মারওয়ার সা’য়ী করে কায়স গোত্রের এক মিহিলার কাছে গেলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হাজ্জের (হজ্জ) ইহরাম বাঁধলাম এবং ‘উমর (রাঃ)-এর খিলাফত পর্যন্ত আমি এভাবেই ফতোয়া দিতে থাকি। ‘উমর (রাঃ) বললেন, যদি আমরা আল্লাহর কিতাব গ্রহণ করি তা তো আমাদের পূর্ণ করার নির্দেশ দেয়। আর যদি আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণী গ্রহণ করি তাহলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর জানোয়ার তার স্থানে পৌছার পূর্ব পর্যন্ত হালাল হননি।

১৬৭৯। আহমদ (রহঃ) আবূল আসওয়াদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বাকর (রাঃ)-এর কন্যা আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন, যখনই আসমা (রাঃ) হাজ্জ (হজ্জ)ন এলাকা দিয়ে গমন করতেন তখনই তাঁকে বলতেন শুনেছেন আল্লাহ তাঁর রাসূল) -এর প্রতি রহমত নাযিল করুন, এ স্থানে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে অবতরণ করেছিলাম। তখন আমাদের বোঝা ছিল খুব অল্প, যানবাহন ছিল একেবারে নিগণ্য এবং সম্বল ছিল খুবই কম। আমি, আমার বোন ‘আয়িশা (রাঃ), যুবাইর (রাঃ) এবং অমুক অমুক ‘উমরা আদায় করলাম। তারপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে আমরা সকলেই হালাল হয়ে গেলাম এবং সন্ধ্যাকালে হাজ্জের (হজ্জ) ইহ্‌রাম বাঁধলাম।

১৬৮০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন জিহাদ, বা হাজ্জ (হজ্জ) অথবা ‘উমরা থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন তখন তিনি প্রত্যেক উঁচু ভূমিতে তিনবার তাকবীর বলতেন এবং পর বলতেনঃ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সর্বময় ক্ষমতা এবং সকল প্রশংসা কেবল তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী ও তাওবাকারী, ‘ইবাদতকারী, আমাদের প্রভুর উদ্দেশ্যে সিজদাকারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, নিজ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই সকল শত্রুদল্কে পরাজিত করেছেন।

১৬৮১। মু’আল্লা ইবনু আসা’দ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় এলে ‘আবদুল মুত্তালিব গোত্রীয় কয়েকজন তরুণ তাঁকে খোশ-আমদেদ জানায়। তিনি একজনকে তাঁর সাওয়রীর সামিনে ও অন্যজনকে পেছনে তুলে নেন।

১৬৮২। আহমদ ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ‘মসজিদে শাজারাতে’ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর যখন ফিরতেন, যুল-হুলাইফার বাতনুল-ওয়াদীতে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং এখানে সকাল পর্যন্ত রাত যাপন করতেন।

১৬৮৩। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে কখনো পরিবারের কাছে প্রবেশ করতেন না। তিনি সকাল কিংবা বিকালে ছাড়া পরিবারের কাছে প্রবেশ করাতেন না।

১৬৮৪ মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জাবির ইর্‌ন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা পরিবারের কাছে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।

১৬৮৫। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারাইয়াম (রহঃ) হুমায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে যখন মদিনার উঁচু রাস্তাগুলো দেখতেন তখন তিনি তাঁর উটনী দ্রুতগতিতে চালাতেন তার বাহন অন্য জানোয়ার হলে তিনি তাকে তাড়া দিতেন।

১৬৮৬। কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন (উচু রাস্তা)-এর পরিবর্তে (দেয়ালগুলো) সব্দ বলেছেন। হারিস ইবনু ‘উময়র (রহঃ) ইসমা’ঈল (রহঃ)-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, হারিস ইবনু ‘উমায়র হুমায়দ (রহঃ) সূত্রে তাঁর বর্ণনায় আরো বাড়িয়ে বলেছেন, মদিনার মহব্বতে তিনি বাহনকে দ্রুত চালিত করতেন।

১৬৮৭। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) আবূ ইসহাক (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি বাবা’ (রাঃ)-কে বলতে শুনেদি, এ আয়াতটি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। হাজ্জ (হজ্জ) করে এসে আনসারগণ তাদের বাড়িতে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেন। এক আনসার ফেরে এসে তার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে তাকে এ জন্য লজ্জা দেওয়া হয়। তখনই নাযিল হয়ঃ পশ্চাৎ দিক দিয়ে তোমাদের গৃহ-প্রবেশ করাতে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ আছে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। সুতরাং তোমরা (সামনের) দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর। (২:১৮৯)

১৬৮৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সফর ‘আযাবের অংশ বিশেষ। তা তোমাদের যথাসময় পানাহার ও নিদ্রায় বাধা সৃষ্টি করে। তাই প্রত্যেকেই যেন নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অবলম্বনে আপন পরিজনের কাছে ফিরে যায়।

১৬৮৯। সা’ঈদ ইবনু আবূ মারইয়াম (রহঃ) আসলাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মক্কার পথে আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। সাফিয়্যা বিনত আবূ ‘উবায়দ (রাঃ)-এর গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সংবাদ তাঁর কাছে পৌছল। তখন তিনি গতি বাড়িয়ে দিলেন। (পশ্চিম আকাশের) লালিমা অদৃশ্য হবার পর সাওয়ারী থেকে নেমে মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করেন। তারপর বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দেখেছি, সফরে দ্রুত চলার প্রয়োজন হলে তিনি মাগরিবকে বিলম্ব করে মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করতেন।

১৬৯০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) নাফি’ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, হাঙ্গামা চলাকালে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) ‘উমরার নিয়ত করে মক্কায় রওয়ানা হওয়ার পর বললেন, বায়তুল্লাহর পথে বাধাগ্রস্ত হলে, তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও হুদায়বিয়ার বছর ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন।

১৬৯১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) নাফি’ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) উভয়ই তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন, যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ) বাহিনী ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, সে সময়ে তাঁরা উভয়ে কয়েকদিন পর্যন্ত ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ)-কে বুঝালেন। তাঁরা বললেন, এ বছর হাজ্জ (হজ্জ) না করলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না। আমরা আশষ্কা করছি, আপনার ও বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বললেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর সঙ্গে রওয়ানা হয়েছিলাম। কিন্তু বায়তুল্লাহর পথে কাফির কুরায়শরা আমাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর পশু যবেহ করে মাথা মুড়িয়ে নিয়েছিলেন। এখন আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার নিজের জন্য ‘উমরা ওয়াজিব করে নিয়েছি। আল্লাহ চাহেন তো আমি এখন রওয়ানা হয়ে যাব। যদি আমার এবং বায়তুল্লাহর মাঝে বাধা না আসে তাহলে আমি তাওয়াফ করে নিব। কিন্তু যদি আমার ও আয়তুল্লাহর মাঝে বাধা সৃষ্টি করা হয় তাহলে আমি তখনই সেরূপ করব যেরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছিলেন আর আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তারপর তিনি যুল-হুলাইফা থেকে ‘উমরার ইহরাম বেধেঁ কিছুক্ষণ চললেন, এরপরে বললেন, হাজ্জ (হজ্জ) এবং ‘উমরার ব্যাপার তো একই। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, নিশ্চয়ই আমি আমার ‘উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)ও নিজের জন্য ওয়াজিব করে নিলাম। তাই তিনি হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরা কোনটি থেকেই হালাল হননি। অবশেষে কুরবানী দিন কুরবানী করলেন এবং হালাল হলেন। তিনি বলতেন, আমরা হালাল হব না যতক্ষণ পর্যন্ত না মক্কায় প্রবেশ করে একটি তাওয়াফ করে নই।

১৬৯২। মূসা ইবনু ইসমা’ঈল (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর কোন এক ছেলে তাঁর পিতাকে বললেন, যদি আপনি এ বছর বাড়িতে অবস্থান করতেন (তাহলে আপনার জন্য কতই না কল্যাণকর হত)!

১৬৯৩। মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হুদায়বিয়াতে) বাধাপ্রাপ্ত হন। তাই তিনি মাথা কামিয়ে নেন। স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হন এবং প্রেরিত জানোয়ার কুরবানী করেন। অবশেষে পরবর্তী বছর ‘উমরা আদায় করেন।

১৬৯৪। আহমদ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) সালিম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ‘উমর (রাঃ) বলতেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সুন্নাতই কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? তোমাদের কেউ যদি হাজ্জ (হজ্জ) করতে বাধাপ্রাপ্ত হয় যে যেন (‘উমরার জন্য) বায়তুল্লাহর ও সাফা-মারওয়ার মধ্যে তাওয়াফ করে সব কিছু থেকে হলাল হয়ে যায়। অবশেষে পরবর্তী বছর হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করে নেয়। তখন সে কুরবানী করবে আর যদি কুরবানী দিতে না পারে তবে সিয়াম পালন করবে। ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

১৬৯৫। মাহামুদ (রাঃ) মিসওয়ার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা কামানোর আগেই কুরবানী করেন এবং সাহাবাদের অনুরূপ করার নির্দেশ দেন।

১৬৯৬। মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদূর রহীম (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, ‘আবদুল্লাহ এবং সালিম (রাঃ) উভয়ই ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ‘উমরার নিয়ত করে আমরা রওয়ানা হলে যখন কুরায়শের কাফিররা বায়তুল্লাহর অনতিদূরে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উট কুরবানী করেন এবং মাথা কামিয়ে ফেলেন।

১৬৯৭। ইসমা’ঈল (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, (মক্কা মুকার্‌রামায়) গোলযোগ চলাকালে ‘উমরার নিয়ত করে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) যখন মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন, তখন বললেন, বায়তুল্লাহ থেকে যদি আমি বাধাপ্রাপ্ত হই তাহলে তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধাপ্রাপ্ত হই তাহলে তাই করব যা করেছিলাম আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে। তাই তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধালেন। করাণ, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - ও হুদায়বিয়ার বছর ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন। তারপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) নিজের ব্যাপারে ভেবেচিন্তে বললেন, উভয়টি তো একই রকম। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি আমার উপর ‘উমরার সাথে হাজ্জ (হজ্জ)কে ওয়াজিব করে নিলাম। তিনি উভয়টির জন্য একই তাওয়াফ করলেন এবং এটাই তাঁর পক্ষ থেকে যথেষ্ট মনে করেন, আর তিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়েছিলেন।

১৬৯৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বোধ হয় তোমার এই কীটেরা (উকুন) তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হাঁ, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে আহার করাও কিংবা একটি বকরী কুরবানী কর।

১৬৯৯। আবূ নু’আইম (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে দাঁড়ালেন। এ সময় আমার মাথা থেকে উকুন ঝরে পরেছিল। রাসূলল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার এই কীটগুলো (উকুন) কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হাঁ, তিনি বললেনঃ মাথা মুড়িয়ে নাও অথবা বললেন, মুড়িয়ে নাও। কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) বলেন, আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে এই আয়াতটিঃ তোমাদের মধ্যে যদি পীড়িত হয় কিংবা মাথায় ক্লেশ থাকে (২ : ১৯৬)। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তিনদিন সিয়াম পালন কর কিংবা এক ফরক (তিন সা’ পরিমাণ) ছয়জন মিসকীনের মধ্যে সা’দকা কর, অথবা কুরবানী কর যা তোমার জন্য সহজসাধ্য।

১৭০০। আবূল ওলীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা’কিল (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা’ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ)-এর পাশে বসে তাঁকে ফিদ্‌য়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, এ আয়াত বিশেষভাবে আমার সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। তবে এ হুকুম সাধারণভাবে তোমাদের সকলের জন্যই। রাসূলল্লাহ -এর কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। তখন আমার চেহারায় উকুন বেয়ে পড়ছে। তিনি বললেনঃ তোমার কষ্ট বা পীড়া যে পর্যায়ে পৌছেছে দেখতে পাচ্ছি, আমার তো আগে ই ধারণা ছিল না। তুমি কি একটি বকরীর ব্যবস্থা করতে পারবে? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি তিন দিন সিয়াম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনকে অর্ধ সা’করে খাওয়াও।

১৭০১। ইসহাক (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চেহারায় উকুন হজরে পড়তে দেখে তাঁকে বল্লেনঃ এই কিটগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বলেন, হাঁ। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মাথা কামিয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় ছিলেন। এখানেই তাঁদের হালাল হয়ে যেতে হবে এ বিষয়টি তখনো তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়নি। তারা মক্কায় প্রবেশের আশা করছিলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা ফিদ্যার হুকুম নাযিল করলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এক ফরক খাদ্যশস্য ছয়জন মিস্কীনের মধ্যে দিতে কিংবা একটি বকরী কুরবানী করতে অথবা তিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দিলেন। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) কা’ব ইবনু ‘উজারা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এমতবস্থায় দেখলেন যে, তাঁর চেহারার উপর উকুন পড়ছে। এর বাকি অংশ উপরের হাদীসের উনুরুপ।

১৭০২ সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করল এবং স্ত্রী সহবাস করল না এবং অন্যায় আচরন করল না, সে প্রত্যাবর্তন করবে মাতৃগর্ভ থেকে প্রসূত শিশুরু মত হয়।

১৭০৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি এ ঘরের হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করল, অশ্লীলতায় লিপ্ত হলনা এবং আল্লাহর নাফরমানী করল না, সে মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য প্রসূত শিশুরু মত হয়ে (হাজ্জ (হজ্জ)) প্রত্যাবর্তন করবে।

১৭০৪। মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার পিতা হুদায়বিয়ার বছর (শত্রুদের তথ্য অনুসন্ধানের জন্য)বের হলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী গন ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলা হল, একটি শত্রুদল তাঁর সাথে যুদ্ধ করতে চায়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। এ সময় আমি তাঁর সাবীদের সাথে ছিলাম। হঠাত দেখি যে, তারা একে অন্নের দিকে তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। অমনি আমি বর্শা দিয়ে আক্রমন করে তাঁকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগীতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করল। এরপর আমরা সকলেই ঐ জংলী গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশংকা করলাম। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখোন আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝরাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকে রসাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় রেখে এসে এসেছ? সে বললো তা’হিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুক্যা নামক স্থানে কায়লূলায় (দুপুরের বিশ্রামে)আছেন। আমি বললাম হে , আল্লাহর রাসূল! আপনার সাহাবীগন আপনার প্রতিসালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছে। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তাঁর বাকি অনশটুকু আমার কাআছে রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তারা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।

১৭০৫। সা’ঈদ ইবনু রাবী (রহঃ) আবূ কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যাত্রা করলাম। তাঁর সকল সাহাবীই ইহরাম বেঁধেছিলেন কিন্তু আমি ইহরাম বাঁধিনি। এরপর আমাদেরকে গায়কা নামক স্থানে শত্রুর উপস্থিতি সম্পরকে খবর দেয়া হলে আমরা শত্রুর অভিমুখে রওনা হলাম। আমার সঙ্গী সাহাবীগন একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলেন।। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। অমনি আমি বর্শা দিয়ে আক্রমন করে তাঁকে ধরাশায়ী করে ফেলি। সঙ্গীদের নিকট সহযোগীতা কামনা করলে সকলে আমাকে সহযোগীতা করতে অস্বীকার করল। এরপর আমরা সকলেই ঐ জংলী গাধার গোশত খেলাম। এতে আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার আশংকা করলাম। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারীম এর সন্ধানে আমার ঘোড়াটিকে কখনো দ্রুত কখোন আস্তে চালাচ্ছিলাম। মাঝরাতের দিকে গিফার গোত্রের এক লোকে রসাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথায় রেখে এসে এসেছ? সে বললো তা’হিন নামক স্থানে আমি তাঁকে রেখে এসেছি। এখন তিনি সুক্যা নামক স্থানে কায়লূলায় (দুপুরের বিশ্রামে)আছেন। আমি বললাম হে , আল্লাহর রাসূল! আপনার সাহাবীগন আপনার প্রতিসালাম পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা করছে। তাই আপনি তাঁদের জন্য অপেক্ষা করুন। তারপর আমি পুনরায় বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি বন্য গাধা শিকার করেছি। এখনো তাঁর বাকি অনশটুকু আমার কাআছে রয়েছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাওমের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা খাও। অথচ তারা সকলেই তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।

১৭০৬। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ও আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ কাতাদা (রহঃ) হতে বর্নিত তিনি বলেন, মদিনা থেকে তিন মারহালা দূরে অবস্থিত কাহা নামিক স্থানে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমাদের কেউ ইহরামধারী ছিলেন আর কেউ ছিলেন ইহরামবিহীন। এ সময় আমি আমার সাথী সাহাবীদের দেখলা তাররা একে অন্যকে কিছু দেখাচ্ছেন। আমি তাকাতেই একটি জংলী গাধা দেখতে পেলাম। (রাবী বলেন) এ সময় তাঁর চাবুকটি পড়ে গেল। (তিনি আনিয়ে দেওয়ার কথা বললে) সকলেই বললেন, আমরা মুহরিম। তাই এ কাজে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারব না। অবশেষে আমি নিজেই উঠিয়ে তা একটি নিলাম এরপর টিলার পিছনদিক থেকে গাধাটির কাছে এস্তা শিকার করে তা সাহাবীদের কাছে নিয়ে আসলাম। তাঁদের কেউ বললেন, খাও, আবার কেউ বললেন, খেও না। সুতরাং গাধাটি আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসলাম। তিনি আআমাদের সকলের আগে ছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বল্ললেন, খাও, এতো হালাল। সুফিয়ান (রাঃ) বলেন, আমাদেরকে ‘আমর ইবনু দীনার বললেন, তোমরা সালিহ (রহঃ) এবং অন্যান্যের নিকট গিয়ে এ সম্মন্ধে জিজ্ঞাসা কর। তিনি আমাদের এখানে আগমন করেছিলেন।

১৭০৭। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্নিত, তাঁকে তাঁর পিতা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জে (হজ্জ) যাত্রা করলে তাঁরাও সকলে যাত্রা করলেন। তাঁদের থেকে একটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য পথে পাঠিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে আবূ কাতাদা (রহঃ) ও ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সমুদ্র তীরের রাস্তা ধরে অগ্রসর হবে আমাদের পরশপর সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত। তাই তাঁরা সকলেই সমুদ্র তীরের পথ ধরে চলতে থাকেন। ফিরার পথে তাঁরা সবাই ইহরাম বাঁধলেন কিন্তু আবূ কাতাদা (রহঃ) ইহরাম বাঁধলেন না। পথে চলতে চলতে তাঁরা কিছু বন্য গাধা দেখতে পেলেন। আবূ কাতাদা (রাঃ) গাদা হুলোর উপর হামলা করে একটি মাদী হত্যা করে ফেললেন। এরপর একস্থানে অবতরন করে তাঁরা সকলেই এর গোসত খেলেন। তারপর বললেন, আমরা ও মহরিম, এ অবস্থায় আমরা কি শিকার জন্তুর গোশত খেতে পারি? তাই আমরা গাধাটির অবশিষ্ট অংশ উঠিয়ে নিলাম। তাঁরা রাসুলুল্লাহ এর নিকট পৌঁছে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা ইহরাম বেধেছিলাম কিন্তু আবূ কাতাদা (রহঃ) ইহরাম বাধেনি। এ সময় আমরা কতগুলো বন্যগাধা দেখতে পেলাম। আবূ কাতাদা (রহঃ) এগুলোর উপর আক্রমন করে একটি মাদী গাধা হত্যা করে ফেলেন। এক স্থানে অবতরন করে আমরা সকলেই এর গোশত খেয়ে নেই। এরপর বললাম। আমরা তো মুহরিম, এ অবস্থায় কি আমরা শিকারকৃত জানোয়ারের গোশত খেতে পারি? এখন আমরা এর অবশিষ্ট গোশত নিয়ে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এর উপর আক্রমন করতে তাঁকে আদেশ বা ইশারা করেছঃ তাঁরা বললেন, না, আমার আর তা করিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে বাকি গোশত তোমরা খেয়ে নাও।

১৭০৮। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সা’ব ইবনু জাসসামা লায়সী (রহঃ) থেকে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবোয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থানকালে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (শ) কে একটি জংলী গাধা হাদিয়া দিলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চেহারায় মলিনতা লক্ষ্য করে বললেনঃ তা আমি কখনো তোমার নিকত নিকট ফিরিয়ে দিতাম না যদি না আমি মুহরিম না হতাম।

১৭০৯। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী হত্যা করা মুহরিমের জন্য দূষনীয় নয়। ‘আদবুল্লাহ ইবনু দীনার ও মূসা’দ্দাদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীনীগনের একজন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেন যে মুহরিম ব্যাক্তি (নির্দিষ্ট) প্রানী হত্যা করতে পারবে। আসবাগ ইবনু ফারাজ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সুত্রে হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী হত্যা করাতে তাঁর কোন দোষ নেই। যেমনঃ কাক, চিল, ইদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর।

১৭১০। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার প্রানী এত ক্ষতিকর যে এগুলো হারম শরীফেও হত্যা করা যেতে পারে। (যেমন) কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্ছু ও পাগলা কুকুর।

১৭১১। উমর ইবনু হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মিনাতে পাহাড়ের কোন এক গুহায় আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এমতবস্থায় নাজিল হল তাঁর উপর রাওয়াল মুরসালাত (নামায/নামাজ)। তিনি সূরাটি তিলোয়াত করিছিলেন। আর আমি তাঁর পবিত্র মুখ থেকে গ্রহন করছিলাম। তাঁর মুখ (তিলোয়াতের ফলে)সিক্ত ছিল। এমতবস্থায় আমাদের সামনে একটি একটি সাপ লাফিয়ে পড়ল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একে মেরে ফেল। আমরা দৌড়িয়ে গেলে সাপটি চলে গেল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রক্ষা পেল সাপটি তোমাদের অনিষ্ট থেকে যেমন তোমরা রক্ষা পেলে এর অনিষ্ট থেকে। আবূ আবদুল্লাহ [বুখারী (রহঃ)] বলেন, এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে মিনা হারাম শরীফের অন্তর্ভুক্ত এবং তারা সাপ মারাকে দোষ মনে করতেন না।

১৭১২। ইসমাইল (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মীনি ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন, রাসুল কাঁকলাস কে ক্ষতিকর বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু একে হত্যা করার আদেশ দিতে আমি তাঁকে শুনিনি।

১৭১৩। কুতায়বা (রহঃ) আবূ সুরাইয়া (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি ব’আমর ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) কে বললেন। যখন আমর মক্কায় সেনাবাহিনী প্রেরন করেছিলেন, হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিন। আমি আপনাকে এমন কহতা শোনাব যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়য়ের পরের দিন ইরশাদ করেছিলেন। আমার দু’টি কান ঐ কথা গুলো শুনেছে, হৃদয় সেগুলো স্মৃতিতে একে রেখেছে এবং আমার চোখ দু্টো তা প্রত্যক্ষ করেছে। যখন তিনি কথা গুলো বলেছিলেন, তখন তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে মহাসম্মানিত করেছেন। কোন মানুষ তাঁকে মহাসম্মানিত করেনি। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মানুষের জন্য মক্কায় রক্তপাত করা বা এর কোন গাছ কাঁটা বৈধ নয়। আল্লাহর রাসুল কর্তৃক লড়াই পরিচালনার কারনে যদি কেউ যুদ্ধ করার অনুমতি দেয় তাহলে তাঁকে তোমরা বলে দিও, আল্লাহ তাঁর রাসুল কে তো অনুমতি দিয়েছিলেন। তোমাদেরকে তো আর তিনি অনুমতি দেননি। আর এ অনুমতিও কেবল শুধু আমাকে দিনের কিছু সময়ের জন্য দেওয়া হয়েছিল। আজ (পরের দিন) পুনরায় নিষিদ্ধতা পূনর্বহাল করা হয়েছিল যেমনি ভাবগতকাল ছিল। অতএব প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তি যেন প্রত্যেক উপস্থিত ব্যাক্তির নিকট এই বার্তা পৌঁছে দেয়। আবূ সুরাইয়া (রাঃ) কে জিজ্ঞেসা করা হল, আপনাকে ‘আমর কি জবাব দিয়েছিলেন? তিনি বললেন, ‘আমর বলেছিলেন, হে আবূ শুরু ায়হ! এর বিষয়টি আমি তোমার থেকে ভাল জানি। হারম কোন অপরাধীকে, হত্যা করে পলাতক ব্যাক্তিকে এবং চুরি করে পলায়নকারী ব্যাক্তিকে আশ্রয় দেয় না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, শব্দের অর্থ হল ফিতনা – ফাসা’দ।

১৭১৪। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং তা আমার পূর্বে কারো জন্য হালাল ছিল না এবং আমার পরেও কারো জন্য হালাল হবে না। তবে আমার জন্য তা কেবল কিছুদিনের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছিল। তাই এখানকার ঘাস, লতাপাতা কাঁটা যাবে না। কোন শিকার জন্তুকে তাড়ান যাবে না এবং কোন হারানো বস্তুকেও হস্তগর করা যাবে না। অবশ্য ঘোষনাকারী ব্যাক্তি এ নিয়মের ব্যতক্রম। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! স্বর্ণকার এবং আমাদের কবরে ব্যবহারের জন্য ইযখির ঘাস গুলোকে বাদ রাখুন। তিনি বল্ললেনঃ হাঁ ইযখির কে বাদ দিয়েই। খালিদ (রাঃ) ‘ইকরিমা (রহঃ) থেকে বর্ননা করেছেন, তিনি বলেছেন হারমের শিকার জানোয়ারকে তাড়ানো যাবে না, এর অর্থ তুমি কি যান? এর অর্থ হল ছায়া থেকে তাঁকে তাড়িয়ে তাঁর স্থানে অবতরন করা।

১৭১৫। ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেনঃ এখন থেকে আর হিজরত নেই, রয়েছে কেবল জিহাদ এবং নিয়ত। সুতরাং যখন তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাকা হবে, এ ডাকে তোমরা সাড়া দিবে। আসমান- যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহ তা’আলা এ শহরকে মহাসম্মানিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারনেই কিয়ামত পর্যন্ত এ শহর থাকবে মহাসম্মানিত হিসেবে। এশহর লড়াই করা আমার পূর্বেও কারো জন্য বৈধ ছিল না এবং আমার জন্য ও কিছু অংশ ব্যতীত বৈধ হয়নি। আল্লাহ কর্তৃক সম্মানিত করার কারনে তা থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত মহাসম্মানিত হিসেবে। এর কাঁটা উপড়িয়ে ফেলা যাবে না, তাড়ান যাবে না এর শিকার জানোয়ারকে, ঘোষণা করার উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ এ স্থানে পড়ে থাকা কোন বস্তুকে উঠিয়ে নিতে পারবে না এবং কর্তন করা যাবে না এখানকার কাচা ঘাস ও তরুলতাকে। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইযখির বাদ দিয়ে। কেননা এ তো তাঁদের কর্মকারদের জন্য এবং তাঁদের ঘরে ব্যবহারের জন্য। বর্ননাকারী বলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হাঁ ইযখির বাদ দিয়ে।

১৭১৬। আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ রাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। অপর এক সুত্রে সুফিয়ান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ননা করেন। বর্ননাকারী বলেন, আমি বললাম, এ হাদিসটি ‘আমুর (রাঃ) ‘আতা এবং তাউস (রহঃ) উভয় থেকে শুনেছেন।

১৭১৭। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) ইবনু বুহায়না (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম বাধা অবস্থায় ‘লাহইয়ে জামাল’ নামক স্থানে তাঁর মাথার মধ্যখানে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন।

১৭১৮। আবূল মুগীরা ‘আব্দুল কুদ্দুস ইবনু হাজ্জাজ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরাম অবস্থায় মায়মুনা (রাঃ) কে বিবাহ করেছিলেন।

১৭১৯। ;আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহরাম অবস্থায় আপনি আমাদেরকে কী ধরনের কাপড় পরতে আসেশ করেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ জামা, পায়জামা, পাগড়ী ও টুপি পরিধান করবে না। তবে কারো যদি না থাকে তা হলে সে যেন মীজা পরিশান করে তাঁর গিরার নিচের অনশটুকু কেটে নেয়। তোমরা যাফ্রান এবং ওয়ারস লাগানো কোন কাপড় পরিধান করবে না। মুহরিম মহিলাগন মুখে নেকাব এবং হাতে হাত মোজা লাগাবে না। মূসা ইবনু ‘উকবা, ইসমাইল ইবনু ইব্রাহিম ইবনুু’উকবা, জিওয়ায়রিয়া, ইবনু ইসহাক (রহঃ) নেকাব এবং হাত মোজার বর্ননায় লায়স (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) এর স্থলে বলেছেন এবং তিনি বলতেন, ইহরাম বাধা মেয়েরা নেকাব ও হাত মীজা ব্যবহার করবে না। মালিক (রহঃ) নাফি (রহঃ) এর মাধ্যমে ইবনু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম বাধা মেয়েরা নেকাব ব্যবহার করবে না। লায়স ইবনু আবূ সুলায়ম (রহঃ) এ ক্ষেত্রে মালিক (রহঃ) এর অনুসরন করেছেন।

১৭২০। কুতায়বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক মুহরিম ব্যাক্তিকে তাঁর উষ্ট্রী ফেলে দেয়, ফলে তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় এবং মারা যায়। তাঁকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আনা হয়। তিনি বললেনঃ তোমরা তাঁকে গোসল করাও এনবগ কাফন পরাও। তবে তাঁর মাথা ঢেকে দিওনা এবং সুগন্ধি লাগিও না। তাঁকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় কিয়ামতের ময়দানে উঠানো হবে।

১৭২১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আবওয়া নামিক স্থানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এবং মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) এর মধ্যে মতানৈক্য হল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, মুহরিম ব্যাক্তি তা র মাথা ধৌত করতে পারবে আর মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, মুহরিম তাঁর মাথা ধৌত করতে পারবে না। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে আবূ আইয়ুব আনসারী (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। আমি তাঁকে কূপ থেকে পানি ঊঠানোর চরকার দু’খুটির মাঝে কাপড়ঘেরা অবস্থায় গোসল করতে দেখতে পেলাম। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, কে? বললাম, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ুন। মুহরিম অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে মাথা ধৌত করতে, এ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করার জন্য আমাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে আবূ আইয়ুব (রাঃ) তাঁর হাতটি কাপড়ের উপর রাখলেন এবং কাপড়টি নিচু করে দিলেন। ফলে তাঁর মাথাটি আমি পরিশকার দেখতে পেলাম। তারপর তিনি এক ব্যাক্তিকে, যে তাঁর মাথায় পানি ঢালছিল, বললেন, পানি ঢাল। সে তাঁর মাথায় পানি ঢালতে থাকল। তারপর তিনি দু’হাত দ্বারা মাথা নাড়া দিয়ে হাত দুখানা একবার সামনে আনলেন আবার পেছনের দিকে টেনে নিলেন। এরপর বললেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরুপ করতে দেখেছি।

Load comments