Monday, 12 February 2018

ইসলাম ধর্মে জন্মদিন পালনের বিধান কি?

আসসালামু আলাইকুম!

আশা করি সবাই ভালো আছেন। মাঝে মাঝে কিছু
ব্লগার ধর্মীয় ব্যপারে এমন কিছু পোষ্ট দেন যা
সাধারনত সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্যে
পরিনত করেন। এটা একটা বড় ধরনের গোনাহের কাজ,
যদি ধর্ম সম্পর্কে সঠিক এবং সহীহ কোন দলীল খুঁজে
না পাওয়া যায় তার প্রচার এবং প্রসার থেকে
আমাদের অবশ্যই সাবধান থাকা উচিত। মনে রাখতে
হবে যে ইসলাম পরিপূর্ণ ধর্ম এবং এখানে কোন কিছুর
নতুন সংযোজন বা বিয়োজনের সুযোগ নাই। সত্যের
জয় সর্বদাই হবে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হবেই কারন
মিথ্যা বিলুপ্ত হবার জন্যই।


আসুন মিলাদ এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস
সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেই
কোনটা সঠিক এবং বেঠিক। ইতিহাস না জানলে এই
সিদ্ধান্তে আসা বড়ই কষ্টকর।আমাদের সমাজে
বিদআ’ত এমন ভাবে ঢুকে গেছে যে তার বিরূদ্ধে কথা
বললে আলিম সমাজ ‘অমুসলিম’ বলে গালি দিতে
এবং ‘ইসলাম থেকে খারিজ’ করতে ডানে বায়ে
তাকায় না। এসব বিদআ’ত শরীরে টিউমারের মতো
জেগে উঠেছে আর আমাদের আলিম সমাজ এসকল
টিউমার অপারেশনের পরিবর্তে স্বাস্থ্যের অংশ
বলে প্রচার প্রসার করে বেড়াচ্ছেন, আর সাধারন
মুসলমানগণ ভাবছেন ‘আরে তাইতো, নিশ্চই টিউমার
সুস্বাস্থের অংশ!!”

আল কুরআনের কোন আয়াত বা কোন হাদীস দ্বারা
কারো জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কোনই প্রমাণ
পাওয়া যায় না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে যাঁর সবচেয়ে বেশী
ভালোবাসতেন সে সব সাহাবাগণ বিশ্বনবী (সাঃ)
এর জীবিতকালে অথবা তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর জন্ম বা
মৃত্যু বার্ষিকী পালন করেননি। এমনকি রাসূল (সাঃ)
এর একমাত্র পূত্র ইবরাহীম ছাড়া বাকী পুত্রগণ
তাদের জন্মের এক বছরের মধ্যেই মারা যায়। শুধু
মাত্র ইবরাহীম ষোল মাস বয়সে মারা যায়।এজন্য
নাবী (সাঃ) এতই দুঃখিত হন যে, তাঁর চোখ দিয়ে
পানি ঝরতে থাকে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) কিন্তু
এই আদরের ছেলেটির জন্মের দ্বিতীয় বছরে
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার “মৃত্যু” অথবা “জন্মোৎসব
পালন করেননি।

ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম দিবস,মৃত্যু দিবস পালন করা
এবং এ উপলক্ষে যে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন
করা হয় তা হারাম এবং বিদআত।জন্ম দিবস এবং মৃত্যু
দিবস পালনের কোন প্রমাণ কিংবা চর্চা রাসুল সা.
কিংবা তাঁর সাহাবী (রাঃ) দের মাধ্যমে হয়েছিল
বলে কোন প্রমাণ নাই।
ইসলামে সকল হুকুম আহকাম, আচার-অনুষ্ঠান
সুনির্ধারিত ও কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা
প্রমাণিত।কিন্তু নবী কারীম সা.এর জন্ম দিবস,মৃত্যু
দিবস পালনের কথা কোথাও নেই। এমনকি নবী
প্রেমের নজীরবিহীর দৃষ্টান স্থাপনকারি সাহাবায়ে
কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের কেহ এ ধরনের কাজ
করেছেন বলে কোন প্রমাণ নেই।

ইসলামে কম হলেও একলাখ চব্বিশ হাজার নবী,
তারপরে খুলাফায়ে রাশেদীন ও অসংখ্য সাহাবা,
মনীষি আওলিয়ায়ে কেরাম জন্ম গ্রহণ করেছেন ও
ইন্তেকাল করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস
পালন ইসলাম সমর্থিত হত বা সওয়াবের কাজ হত
তাহলে বছরব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনে ঘূর্ণাবর্তে
আবদ্ধ হয়ে যেতে হত আমাদের সকল মুলমানদের।
রাসূলুল্লাহ সা. এর সাহাবাগন ছিলেন
সত্যিকারার্থে নবীপ্রেমিক ও সর্বোত্তম অনুসারী।
নবী প্রেমের নজীর ও দৃষ্টান্ত তারাই স্থাপন
করেছেন। তারা কখনো নবী কারীম সা. এর জন্মদিনে
অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা করা ভাল হত ও
মহব্বতের পরিচায়ক হত তবে তারা তা অবশ্যই করতেন।
আর জন্মোৎসব পালন করার কালচার সম্পর্কে তাদের
কোন ধারণা ছিল না তা বলা যায় না। কেননা তাদের
সামনেই তো খৃষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর
জন্মদিন ( বড়দিন) উদযাপন করত।
তাছাড়া নবী কারীম সা. এর জন্মদিন পালনের
প্রস্তাব সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম
কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। যেমন হিজরী
ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত হওয়া সময় উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে
বৈঠকে বসলেন। কোন এক স্মরনীয় ঘটনার দিন থেকে
একটি নতুন বর্ষগণনা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে বলে
সিদ্ধান- নেয়া হয়। কেউ কেউ প্রস্তাব করলেন
রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্ম তারিখ থেকে সন গণনা শুরু
করা যেতে পারে। উমর রাঃ এ প্রস্তাব বাতিল করে
দিয়ে বললেন যে এ পদ্ধতি খৃষ্টানদের। উমার রাঃ এর
এ সিদ্ধানে-র সাথে সকল সাহাবায়ে কেরাম একমত
পোষণ করলেন। এবং রাসূলে কারীম সা. এর হিজরত
থেকে ইসলামী সন গণনা আরম্ভ করলেন।
যেহেতু রাসুল সা. এর জন্ম দিবস এবং মৃত্যু দিবস
পালন করা জায়েয নয় সেহেতু অন্য কারো
জন্মদিসবস,মৃত্যু দিবস পালন করা শরিয়ত সম্মত নয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় এগুলো ধর্মের নামে চালু করা
হয়েছে কিন্তু এসব আনুস্থানিকতা পালনে ইসলামের
কোন সমর্থন নেই।আমাদের সমাজে সমাজে পিতা-
মাতা, দাদা-দাদী সন্তান-সন্ততি,নেতা নেত্রীর
জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী নানা আনুস্থানিকতা এবং
অত্যন্ত জমজমাট ভাবে পালন করা হয়ে থাকে।
সেখানে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে বিশাল
খাবার-দাবারের আয়োজন ও অন্যান্য আনুস্থানিকতা
করা হয়ে থাকে,কিন্তু আমরা কজনে জানি বা
জানার চেষ্টা করি যে,জন্ম বার্ষিকী এবং
মৃত্যুবার্ষিকী আনন্দ উৎসব বা শোক পালন করা
ইসলামি চেতনার পরিপন্থি।

জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবস কেন্দ্রিক আচার অনুষ্ঠান
খৃষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য অমুসলিমদের
ধর্মীয়রীতি।তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য।
বিধর্মীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান যতই
ভাল দেখা যাক না কখনো তা মুসলিমদের জন্য গ্রহণ
করা জায়েয নয়।
রাসূলে কারীম সা. বলেছেন – “যে ব্যক্তি কোন
জাতির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করবে সে তাদের অনর্ভূক্ত
বলে গণ্য হবে।”
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবিতকালে ওয়াহী দিবস,
কুরআন নাযিল দিবস, পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ)
এর জন্ম বা মৃত্যু দিবস, মুসলিম জাতির পিতা
ইবরাহীম (আঃ) এর জন্ম বা মৃত্যু দিবস এসেছে কিন্তু
রাসূল (সাঃ) এভাবে কোন নবীর স্মরণে বা কোন
সাহাবার শাহাদাত দিবস অথবা কোন জিহাদের
দিবস পালন করেন নাই এবং নির্দেশও দেন নাই। বরং
তিনি বলে গেছেন , আমার পরে আমার শরীআ’তের
মধ্যে যে সকল নতুন কাজকর্ম আবিষ্কার হবে, আমি
তা হতে সম্পর্কহীন এবং ঐ সকল কাজকর্ম মারদূদ
পরিত্যাজ্য ও ভ্রষ্ট। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) তাই
মীলাদুন্নবী ও মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা কোন জীবিত ও
মৃত ব্যক্তির জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন
করা কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে বিদ’আত তথা
মনগড়া কাজ। আর ইতিহাসের দৃষ্টিতে ইয়াহুদী,
খৃষ্টান ও অগ্নিপুজকদের অন্ধ অনুসরণ তথা ইসলাম
বিরোধী কাজ। আর এসব জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালন
কার তো বৈধ নয়ই বরং এগুলো থেকে অবশ্যই বিরত
থাকা জরুরী।

Load comments