Monday, 12 February 2018

বিয়ের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ

বিয়ের ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ ছিল সহজ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। বিয়ের ঘোষণা দেয়া ও বিয়ের খবর প্রচার করা। খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করা। ওয়ালিমা বা বৌভাতের আয়োজন করা ও দাওয়াত দেয়া। দাওয়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি কেউ রোযা থাকলে তবুও তিনি হাযির হয়ে নিমন্ত্রণকারীর জন্য দোয়া করবেন; তবে খাবার গ্রহণ করা অপরিহার্য নয়।

এরপর স্বামী-স্ত্রী সৎভাবে সংসার করবে এবং সদভাবে সংসার করার যাবতীয় উপকরণ গ্রহণ করবে।
সংক্ষিপ্তভাবে এটাই নবীজির আদর্শ; এবার বিস্তারিত আলোচনায় আসুন:
এক: মোহরানা সাধ্যের মধ্যে হওয়া
বাইহাকী (১৪৭২১) বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা”। একই হাদিস আবু দাউদ (২১১৭) বর্ণনা করেছেন এ ভাষায়: “সর্বোত্তম বিবাহ হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা”[আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলা হয়েছে-
أيسره শব্দের অর্থ হচ্ছে- মোহরানা ও অন্যান্য খরচ কমানো, যাতে করে পুরুষের জন্য সহজসাধ্য হয়। আল্লামা শাইখ আল-আযিযি বলেন: “মোহরানার পরিমাণ কম হওয়া কিংবা এমন হওয়া যাতে করে পাত্রের জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করা সহজ হয়”[সমাপ্ত]
ইমাম আহমাদ (২৩৯৫৭) ও ইবনে হিব্বান (৪০৯৫) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভ ধারণ সহজ হওয়া।”[‘সহিহুল জামে’ (২২৩৫) গ্রন্থে আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
সুনানে তিরমিযি গ্রন্থে (১১১৪) ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “সাবধান, তোমরা নারীদের মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। যদি মোহরানা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা দুনিয়াতে সম্মানের বিষয় হত কিংবা আল্লাহর কাছে তাকওয়া হত তাহলে তোমাদের নবী তা করতেন। আমার জানামতে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নারীদেরকে বিয়ে করেছেন কিংবা তাঁর মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন তাদের কারো মোহরানা ১২ উকিয়ার বেশি ছিল না।[আলবানী হাদিসটিকে সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে ‘সহিহ’ আখ্যায়িত করেছেন]
এক উকিয়া হচ্ছে- ৪০ দিরহাম। গ্রামের হিসেবে দিরহামের ওজন হচ্ছে- ২.৯৭৫ গ্রাম।
দুই: বিয়ের ঘোষণা দেয়া
তিরমিযি (১০৮৯) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা এ বিয়ের ঘোষণা দাও”[আলবানী তাঁর ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৭/৫০) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]
নাসাঈ (৩৩৬৯) মুহাম্মদ বিন হাতেব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “হালাল ও হারামের মাঝে ব্যবধান হচ্ছে- বিয়েতে দফ বাজানো ও চেঁচামেচি করা”[আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]
বিয়েতে দফ বাজানো নারীদের জন্য খাস।
ইবনে হাজার তার ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন: “মজবুত হাদিসগুলোতে দফ বাজানোর যে অনুমতি এসেছে সেটা নারীদের জন্য খাস। এ অনুমোদনের মধ্যে পুরুষেরা অন্তর্ভুক্ত হবে না। যেহেতু সাধারণভাবে পুরষদেরকে নারীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে”[সমাপ্ত]
তিন: ওয়ালিমা বা বৌভাত
বিয়ের ক্ষেত্রে ওয়ালিমার আয়োজন করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এটি বিয়ের প্রচারণার অন্তর্ভুক্ত এবং আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার শামিল।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) যখন বিয়ে করেছেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন: “একটি ছাগল দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালিমার আয়োজন কর”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
মুসনাদে আহমাদের হাদিসের কারণে কোন কোন আলেম ওয়ালিমার আয়োজন করাকে ওয়াজিব বলেন। ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আলী (রাঃ) যখন ফাতেমা (রাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বিয়ের ক্ষেত্রে ওয়ালিমা বা ভোজানুষ্ঠান থাকতেই হবে।”[আলবানী তাঁর ‘আদাবুয যিফাফ’ নামক গ্রন্থে (৭২) বলেন: হাদিসটির সনদ যেমনটি বলেছেন ইবনে হাজার: কোন অসুবিধা নেই][সমাপ্ত]
ওয়ালিমার দাওয়াত পেলে উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। তোমাদের কাউকে যখন ওয়ালিমার দাওয়াত দেয়া হয় তখন সে যেন সে দাওয়াতে যায়”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
ইবনে উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
আলেমগণ বলেন: বিয়ের প্রথম দাওয়াত কবুল করা ওয়াজিব। অর্থাৎ প্রথম ওয়ালিমার। যদি নিমন্ত্রণকারী কিংবা তার প্রতিনিধি কিংবা কার্ড পাঠানোর মাধ্যমে ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে দাওয়াত দেয়া হয়। তবে শর্ত হচ্ছে- এ অনুষ্ঠানে যেন শরিয়ত গর্হিত কোন কিছু না থাকে। আর যদি এ অনুষ্ঠানে শরিয়ত গর্হিত কোন কিছু থাকে তাহলে এর হুকুম ব্যাখ্যাসাপেক্ষ: যদি ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে এ গর্হিত কাজে নিষেধ করা সম্ভবপর হয় তাহলে এ ব্যক্তির জন্য উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব। আর যদি উপস্থিত হয়ে এ গর্হিত কাজে বাধা দেয়া সম্ভবপর না হয় তাহলে এ ব্যক্তির জন্য উপস্থিত হওয়া নাজায়েয।

Load comments