হজ্জ নিয়ে ইসলামিক হাদীস-৪ [ বুখারী শরীফ ]
১৭২২। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুহরিমদের উদ্দেশ্যে ;আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ যার চপ্পল নেই এ মীজা পরিধান করবে আর যার লুঙ্গি নেই সে পায়জামা পরিধান করবে।
১৭২৩। আহমদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) ’আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্নিত যে, মুহরিম ব্যাক্তি কপড় পরিধান করবে এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ মুহরিম ব্যাক্তি জামা। পাগড়ী, পায়জামা, টূপি এবং জাফরান মোজা দু’টি পায়ের গিরার নিচ থেকে কেটে নিবে।
১৭২৪। আদম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফার ময়দানে আমাদেরকে লক্ষ্য করে তাঁর ভাষনে বললেনঃ (মুহরিম অবস্থায়) যার লুঙ্গি নেই সে যেন পায়জামা পরিধান করে এবং যার চপ্পল নেই সে যেন মীজা পরিধান করে।
১৭২৫। ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) বারা’ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুল-কা’দা মাসে ‘উমরা আদায় করার নিয়তে রওয়ানা হলে মক্কাবাসী লোকেরা তাঁকে মক্কা প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে তিনি তাঁদের সাথে এই শর্তে চুক্তি করেন যে, সশস্ত্র অবস্থায় নয় বরং তলোয়ার কোষবদ্ধ অবস্থায় তিনি মক্কা প্রবেশ করবেন।
১৭২৬। মুসলিম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাবাসীদের জন্য ‘যুল-হুলাইফা, নাজদবাসীদের জন্য ‘কারনুল মানাযিল’ এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থানকে ইহরামের জন্য মীকাত নির্ধারিত করেছেন। এস্থান গুলোর অধিবাসীদের জন্য এবং হাজ্জ (হজ্জ) ও ‘উমরার সংকল্প করে বাইরে থেকে আগত যাত্রী, যারা এ স্থান দিয়ে অতিক্রম করবে, তাঁদের জন্য এ স্থানগুলো মীকার হিসেবে গণ্য হবে। আর মীকাতের অভ্যন্তরে অবস্থানকারী লোকেদের জন্য তাঁরা যেখান থেকে যাত্রা করবে সেটাই তাঁদের ইহরাম বাঁধার জায়গা। এমনকি মক্কাবাসী লোকেরা মক্কা থেকেই ইহরাম বাঁধবে।
১৭২৭। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, মক্কা বিজয়ের বছর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় (মক্কা) প্রবেশ করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিরস্ত্রাণটি মাথা থেকে খোলার পর এক ব্যাক্তি এসে তাঁকে বললেন, ইবনু খাতাল কাবার গিলাফ ধরে আছে। তিনি বললেনঃ তাঁকে তোমরা হত্যা কর।
১৭১৮। আবূল ওয়ালিদ (রহঃ) ইবনু ইয়া’লা (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একবার আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। এমতবস্থায় হলুদ বা অনুরুপ রঙে চিহ্ন বিশিষ্ট জামা পরিহিত এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন। আর ‘উমর (রাঃ) আমাকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি যখন অহী নাযিল হয় সে মূহুর্তে তুমি কি তাঁকে দেখতে চাও? এরপর (ঐ সময়ে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি অহী নাযিল হল। তারপর এ অবস্থার পরিবর্তন হলে তিনি (প্রশ্নকারীকে) বললেনঃ হাজ্জে (হজ্জ) তুমি যা কর ‘উমরাতেও তাই কর। এক ব্যাক্তি অন্য একজনের হাত কামড়িয়ে ধরলে তাঁর দু’টি দাত উৎপাটিত হয়ে যায়। এ সংক্রান্ত নালিশ তিনি বাতিল করে দেন।
১৭২৯। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাত তিনি তাঁর সওয়ারিথেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে অথবা বলেন তাঁর পরিধেয় দু’টি কাপড়ে তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের দিনে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
১৭৩০। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাত তিনি তাঁর সওয়ারি থেকেপড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তাঁর শরীরে সুগন্ধি মাখবে না আর তাঁর মাথা ঢাকবে না এবং হানূত ও লাগাবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের ময়দানে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
১৭৩১। ইয়া’কুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি ‘আরাফাত ময়দানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উকূফ (অবস্থান)করেছিলেন। হঠাত তিনি তাঁর সওয়ারিথেকে পড়ে যান এবং তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায় অথবা সওয়্যারটি তাঁর ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তাঁকে কুলগাছের পাতা দিয়ে সিদ্ধ পানি দ্বারা গোসল করাও এবং দুই কাপড়ে কাফন দাও। তবে তাঁর শরীরে সুগন্ধি মাখবে না আর তাঁর মাথা ঢাকবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাঁকে কিয়ামতের ময়দানে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
১৭৩২। মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জুহায়না গোত্রের একন মহিলা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আমার আম্মা হাজ্জের (হজ্জ) মানত করেছিলেন তবে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় না করেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে হাজ্জ (হজ্জ) করতে পারি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাত পক্ষ হতে তুমি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় কর। তুমি কি মনে কর যদি তোমার আম্মার উপর ঋন থাক্ত তা হলে তুমি কি তা আদায় করতে না? সুতরাং আল্লাহর হক আদায় করে দাও। কেননা আল্লাহর হকই সবচাইতে অধিক আদায়যোগ্য।
১৭৩৩। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ফাযল ইবনু ;আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা বললেন, (অপর সূত্রে) মূসা ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ননা করেন যে, বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) বছর খাস’আম গোত্রের একজন মহিলা এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আলাহ্র তরফ থেকে বান্দার উপর যে হাজ্জ (হজ্জ) ফরজ করা হয়েছে তা আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমন সময় ফরজ হয়েছে যখন তিনি সওয়ারীর উপর ঠিকভাবে বসে থাকতে সক্ষম নন। আমি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করলে তাঁর হাজ্জ (হজ্জ) আদায় হবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ (নিশ্চয়ই আদায় হবে)।
১৭৩৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আব্বাস) (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সওয়ারীতে তাঁর পেছনে বসা ছিলেন। এমতবস্থায় খাস’আম গোত্রের এক মহিলা আসলেন। ফযল (রাঃ) মহিলার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং মহিলাও তাঁর দিকে তাকাতে লাগলেন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযল (রাঃ) এর মুখটি অন্নদিকে ফিরিয়ে দিতে লাগলেন। এ সময় মহিলাটি বললেন, আমার পিতা বৃদ্ধ অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর উপর হাজ্জ (হজ্জ) ফরজ হয়েছে এমন সময়, যখন তিনি সওয়ারীর উপর বসে থাকতে পারছেন না। আমি কি তাঁর পক্ষ হতে হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করতে পারি? তিনি বললেনঃ হাঁ। এ ছিল বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়কার ঘটনা।
১৭৩৫। আবূন নু’মান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে মালপত্রের সাথে মুযদালিফা থেকে রাত্রিকালে প্রেরন করেছিলেন।
১৭৩৬। ইসহাক (রহঃ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আমার গাধীর পিঠে আরোহন করে (মিনায়) আগমন করলাম। তখন আমি সাবালক হওয়ার নিকটবর্তী ছিলাম। ঐ সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আসায় করছিলেন। আমি চলতে চলতে প্রথম কাতারের কিছু অংশ অতিক্রম করে চলে যাই। এরপর সওয়ারী থেকে নিচে অবতরন করি। গাধাটি চরে খেতে লাগল। আর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পেছনে লোকদের সাথে লোকদের সাথে কাতারে শামিল হয়ে যাই। ইউসুফ (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) সূত্রে তাঁর বর্ননায় “মিনা’ শব্দের পর ‘বিদায় হাজ্জের (হজ্জ) সময়’ কথাটি বর্ননা করেছেন।
১৭৩৭। ‘আব্দুর রাহমান ইবনু ইউনুস (রহঃ) সায়িব ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমার সাত বছর বয়সে আমাকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে হাজ্জ (হজ্জ) করানো হয়েছে।
১৭৩৮। ‘আমর ইবনু যুরারা (রহঃ) উমর ইবনু ‘আব্দুল ‘আযীয (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি সায়িব ইবনু সম্পর্কে বলতেন, সায়িবকে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সফর সামগ্রীর কাছে বসিয়ে হাজ্জ (হজ্জ) করানো হয়েছে।
১৭৩৯। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি বল্লামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশ করব না? তিনি বলেন, তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হল মাকবূল হাজ্জ (হজ্জ)। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হাজ্জ (হজ্জ) ছাড়ব না।
১৭৪৮। আবূন নু’মান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ মেয়েরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যতীত অন্য কারো সাথে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই এমতবস্থায় কোন পুরুষ কোন মহিলার নিকট গমন করতে পারবে না। এ সময় এক ব্যাক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হাজ্জ (হজ্জ) করতে যেতে চাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তাঁর সাথেই যাও।
১৭৪১। ‘আব্দান (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজ্জ (হজ্জ) থেকে ফিরে এসে উম্মে সিনান (রাঃ) নামক এক আনসারই মহিলাকে বললেনঃ হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করাতে তোমাকে কিসে বাধা দিলঃ তিনি বলেন, অমুকের আব্বা অর্থাৎ তাঁর স্বামী, কারন পানি টানার জন্য আমাদের মাত্র দু’টি উট আছে। এক্টিতে সওয়ার হয়ে তিনি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করতে গিয়েছেন। আর অন্য টিতে আমাদের জমিতে পানি সিঞ্চনের কাজ করছে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রমযান মাসে একটি ‘উমরা আদায় করা একটি ফরজ হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করার সমান অথবা বলেছেনঃ আমার সাথে একটি হাজ্জ (হজ্জ) আদায় করার সমান। হাদীসটি ইবনু জুরায়াজ (রহঃ) ’আতা (রহঃ) ও ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ)-এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন এবং ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) জাবির (রাঃ) এর সূত্রে এ হাদীসটি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করেছেন।
১৭৪২। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) যিয়াদের আযাদকৃত গোলাম কাযা’আ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ইদ (রাঃ) কে যিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বারটি যুদ্ধে অনশগ্রহন করেছিলেন, বলতে শুনেছি, চারটি বিষয় যা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি (অথবা) তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ননা করতেন। আবূ সা’ইদ (রাঃ) বলেন, এ বিষয় গুলো আমাকে আশ্চর্যানাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামত করে দিয়েছে এবং চমতকৃত করে ফেলেছে। (তা হল এই)স্বামী কিংবা মাহরাম ব্যতীত কোন মহিলা দুই দিনের পথ সফর করবে না। ‘ঈদুল ফিতর এবং ‘ঈদুল আযহা এ দুই দিন কেউ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করবে না। ‘আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত কেউ সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। মসজিদে হারাম, আমার মসজিদ এবং মসজিদে আকসা – এ তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের জন্য সফরের প্রস্তুতি গ্রহন করবে না।
১৭৪৩। মুহাম্মদ ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বৃদ্ধ ব্যাক্তিকে তাঁর দুই ছেলের উপর ভর করে হেটে যেতে দেখে বললেনঃ তাঁর কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, তিনি পায়ে হেটে হাজ্জ (হজ্জ) করার মানত করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ লোকটি নিজেকে কষ্ট দিক আল্লাহ তা’আলার এর কোন প্রয়োজন নেই। তাই তিনি তাঁকে সওয়ার হয়ে চলার জন্য আদেশ করলেন।
১৭৪৪। ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ’উকবা ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিন বলেন, আমার বোন পায়ে হেটে হাজ্জ (হজ্জ) করার মানত করেছিল। আমাকে এ বিষয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ফতোয়া আনার নির্দেশ করলে আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ পায়ে হেঁটেও চলুক, সওয়ার ও হোক। ইয়াযিদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) বলেন, আবূল খায়ের (রহঃ) ‘উকবা (রাঃ) থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হতেন না।
১৭৪৫। আবূ ‘আসিম (রহঃ) ‘উকবা (রাঃ) থেকেও এ হাদীস বর্নিত রয়েছে। ১৭৪৪ নম্বর হাদিস দেখুন।
১৭৪৬। আবূ’ন নু’মান (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনা এখান থেকে ওখান পর্যন্ত হারম (রুপে গন্য)। সুতরাং তাঁর গাছ কাঁটা যাবে না এবং কুরআন –সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ মদিনায় করা যাবে না। কেই যদি কুরআন -সুন্নাহর খেলাফ কোন কাজ করে তাহলে তাঁর প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং ফিরিশতাদের ও সকল মানুষের।
১৭৪৭। আবূ মা’মার (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে মসজিদ নির্মানের আদেশ দেন। তারপর বলেঃ হে বনূ নাজ্জার! আমার নিকট থেকে মূল্য নিয়ে (ভূমি) বিক্রি কর। তাঁরা বললেন। আমরা এর মূল্য কেবল আল্লাহর নিকট চাই। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে মুশরিকদের কব খুড়ে ফেলা হল এবং ধ্বংসাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছ গুলো কেটে ফেলা হল। কেবল মসজিদের কিবলার দিকে কিছু খেজুর গাছ সারিবদ্ধভাবে রাখা হল।
১৭৪৮। ইসমাইল ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার দু’পাথরে ভুমির মধ্যবর্তী স্থান আমার ঘোষনা মোতাবেক নর্ধারিত করা হয়েছে। বর্ননাকারী বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ হারিসার নিকট তাশরীফ আনেন এবং বলেনঃ হে বানূ হারিসা! আমার ধারনা ছিল যে তোমরা হারমের বাইরে অবস্থান করছ, তারপর তিনি সেদিকে দৃষ্টিপাত করে বললেনঃ (না তোমরা হারমের বাইরে নও)বরং তোমরা হারমের ভিতরেই আছো।
১৭৪৯। মুহাম্মদ ইবনু বাশশআর (রহঃ) ’আলী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত এই সহীফা ছাড়া আর কিছুই নাই। তিনি আরো বলেন, ’আয়ির নামক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত মদিনা হল হারম। যদি কেউ এতে কুরআন –সুন্নাহর খেলাফ অসঙ্গত কোন কাজ করে অথবা কুরআন- সুন্নাহর খেলাফ, আচরণকারী আশ্রয় দেয়, তাহলে তাঁর উপর আল্লাহর লা’নত এবং সকল ফেরেশতা এবং মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না। তিনি আরো বলেন, মুসলমান কর্তৃক নিরাপত্তাদানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান। তাই যে ব্যাক্তি কোন মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবে, তাঁর প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং সকল মানুষের ও ফিরিশতাদের। আর কবুল করা হবে না তাঁদের কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত। যে ব্যাক্তি তাঁর মাওলার (মিত্রের) অনুমতি ব্যতীত অন্য অন্য কাওমের সাথে বন্ধুত্ব করবে, তাঁর প্রতিও আল্লাহর লা’নত এবং সক ফেরেশতা ও মানুষের। সে ব্যাক্তির কোন নফল এবং ফরজ ইবাদাত কবুল করা হবে না। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘’আদলুন অর্থ বিনিময়।
১৭৫০। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আমি এমন এক জনপদে হিজরত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি, যে জনপদ অন্য সকল জনপদের উপর জয়ী হবে। লোকেরা তাঁকে ইয়াসরিব বলে থাকে। এ হল মদিনা। তা অবাঞ্ছিত লোকদেরকে এমনভাবে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে কামারের অগ্নিচুলা লোহার মরিচা দূর করে দেয়।
১৭৫১। খালিদ ইবনু মাখলাদ (রহঃ) আবূ হুমায়দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আমরা তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদিনায় নিকতবর্তী স্থানে পৌছলে, তিনি বললেনঃ এই হল তাবা।
১৭৫২। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলতেন, আমি যদি মদিনাতে কোন হরিণকে বেড়াতে দেখি তাহলে তাঁকে আমি তাড়াবো না। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মদিনার কংকরময় দুই এলাকার মধ্যবর্তী এলাকা হল হারম বা সম্মানিত স্থান।
১৭৫৩। আবূল ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলতে শুনেছি, তোমরা উত্তম অবস্থায় মদিনাকে রেখে যাবে। আর তখন জীবিকা অন্বেষনে বিচরণকারী অর্থাৎ পশু-পাখি এসে মদিনাকে আচ্ছন্ন করে নেবে। সবশেষে যাদের মদিনাতে একত্রিত করা হবে তাঁরা হল মুযায়না গোত্রের দু’জন রাখাল। তাঁরা তাঁদের বকরিগূলোকে হাক-ডাক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই মদিনাতে আসবে। এসে দেখবে মদিনা বন্য পশুতে ছেয়ে গেছে। এরপর তাঁরা সানিয়্যাতুল-বিদা নামক স্থানে পৌঁছতেই মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে।
১৭৫৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) সুফিয়ান ইবনু আবূ যুহায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদিনাই তাঁদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তাঁরা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদিনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদিনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত।
১৭৫৫। ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈমান মদিনাতে ফিরে আসবে যেমন সাপ তাঁর গর্তে ফিরে আসে।
১৭৫৬। হুসাইন ইবনু হুরায়স (রহঃ) সা’দ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ মদিনাবাসীর সাথে ষড়যন্ত্র বা প্রতারনা করবে, সে লবন যেভাবে পানিতে গলে যায়, সেভাবে গলে যাবে।
১৭৫৭। ‘আলী ইবনু আব্দুল্ললাহ (রাঃ) উসামানার কোন একটি টিলায় আরোহন করে বললেনঃ আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? তিনি বললেন বৃষ্টি বিন্দু পতিত হওয়ার স্থানসমূহের মত আমি তোমাদের গৃহসমূহের মাঝে ফিতনা স্থানসমূহ দেখতে পাচ্ছি। মা’মার ও সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহঃ) যুহরী (রহঃ) থেকে হাদীস বর্ননায় সুফিয়ানের অনুসরন করেছেন।
১৭৫৮। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আব্দল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনাতে দাযযালের ত্রাস ও ভীতি প্রবেশ করতে পারবে না। ঐ সময় মদিনার সাতটি প্রবেশ পথ থাকবে। প্রত্যেক পথে দু’জন করে ফিরিশতা (মোতায়েন) থাকবে।
১৭৫৯। ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদিনার প্রবেশ পথসমূহে ফিরিশতা প্রহরায় নিয়োজিত থাকবে। তাই প্লেগ এবং দাজ্জাল মদিনায় প্রবেশ কতে পারবে না।
১৭৬০। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) আবূ সা’ইদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাজ্জাল সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীস বর্ননা করেছেন। বর্নিত কথা সমূহের মাঝে তিনি এ কথাও বলেছিলেন যে, মদিনায় প্রবেশ পথে অনুপ্রবেশ অরা দাজ্জালের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে। তাই সে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মদিনার নিকতবর্তী কোন একটি লোনা জমিতে অবতরন করবে। তখন তাঁর নিকট এক ব্যাক্তি যাবে যে উত্তম ব্যাক্তি হবে বা উত্তম মানুষের একজন হবে এবং সে বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, তুমই হলে সে দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন। দাজ্জাল বলবে, আমি যদি তাঁকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করি তাহলেও কি তোমরা আমার ব্যাপারে সন্দেহ করবে? তাঁরা বলবে, না। এরপর দাজ্জাল লোকটিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। জীবিত হয়েই লোকটি বলবে আল্লাহর শপথ! আজকের চেয়ে অধিক প্রত্যয় আমার আর কখনো ছিলনা। তারপর দাজ্জাল বলবে , আমি লোকটিকে হত্যা করে ফেলব। কিন্তু সে লোকটিকে আর হত্যা করতে সক্ষম হবে না।
১৭৬১। ইবরাহীম ইবনু মুনযীর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মক্কা ও মদিনা ব্যতীত এমন কোন শহর নেই যেখানে দাজ্জাল অনুপ্রবেশ করবে না। মক্কা এবং মদিনার প্রত্যেকটি প্রবেশ পথেই ফিরিশতা গন সারিবদ্ধ ভাবে পাহারায় নিয়জিত থাকবে। এরপর মদিনা তাঁর অধিবাসীদেরকে তিন বার কেপে উঠবে। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা সমস্ত কাফির এবং মুনাফিকদেরকে বের করে দেবেন।
১৭৬২। ‘আমর ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে ইসলামের উপর বায়’আত গ্রহন করলো। পরদিন সে জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল , আমার (বাইয়’আত) ফিরিয়ে নিন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা প্রত্যাখান করলেন। এভাবে তিনবার হল। তারপর বললেনঃ মদিনা কামারের হাফরের মত, যা তাঁর আবর্জনা ও মরিচাকে দূরীভুত করে এবং খাঁটি ও নির্ভেজালকে পরিচ্ছন্ন করে।
১৭৬৩। সুলায়মান ইবনু হারব (রহঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে উহুদ যুদ্ধে যাতেয়া অরে তাঁর কতিপয় সাথী ফিরে আসলে একদল লোক বলতে লাগল, আমরা তাদেরকে হত্যা করব, আর অন্য দলটি বলতে লাগল, আনা, আমরা তাদেরকে হত্যা অরব না। এ সময়ই (তোমাদের কি হল, তোমরা মুনাফিকদের সম্পর্কে দু’দল হয়ে পড়েছ?) আয়াতটি নাযিল হয়। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ মদিনা লোকদেরকে বহিষ্কার করে দেয়, যেমনভাবে আগুন লোহার মরিচাকে দূর করে দেয়।
১৭৬৪। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মক্কাতে তুমি যে বরকত দান করেছ, মদিনাতে এর দ্বিগুণ বরকত দাও। ‘উসমান ইবনু ‘উমর (রহঃ) ইউনুস (রহঃ) থেকে হাদীসটি জাবীর (রাঃ) র মতই বর্ননা করেছেন।
১৭৬৫। কুতায়বা (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে আসার পথে যখন তিনি মদিনার প্রাচীর গুলোর দিকে তাকাতেন, তখন তিনি তাঁর উটকে দ্রুত চালাতেন আর তিনি অন্য কোন জন্তুর উপর থাকলে তাকেও দ্রুত চালিত করতেন, মদিনার ভালবাসার কারনে।
১৭৬৬। ইবনু সালাম (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বনূ সালিমা গোত্রের লোকেরা মসজিদের নববীর নিকটে চলে যাওয়ার সংকল্প করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনাকে জনশূন্য করা অপছন্দ করলেন, তাই তিনি বললেন হে বনূ সালিমা! মসজিদে নববীর দিকে তোমাদের হাটার সওয়াব কি তোমরা হিসাব কর না? এরপর তাঁরা সেখানেই রয়ে গেল।
১৭৬৭। মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার ঘর ও মম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটি হল জান্নাতের বাগানের একটি বাগান, আর আমার মিম্বরটি হল আমার হাউযের উপর অবস্থিত।
১৭৬৮। ‘উবায়দ ইবনু ইসমাইল (রহঃ) ’আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় শুভাগ্মন করলে আবূ বকর ও বিলাল (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আবূ বাকর (রাঃ) জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি এ কবিতা অংশটি আবৃত্তি করতেনঃ‘’প্রত্যেক ব্যাক্তই তাঁর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন, অথচ মৃত্যু তাঁর জূতার ফিতা চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। আর বিলাল (রাঃ) জ্বর উপশম হলে উচ্চস্বরে এ কবিতা অংশ আবৃত্তি করতেনঃ‘’হায় , আমি যদি মক্কার প্রান্তরে একটি রাত কাটাতে পারতাম এমনভাবে যে, আমার চারদিকে থাকবে ইযখির এবং জালীল নামক ঘাস। মাজানো্না নামক ঝর্নার পানি কোন দিন পান করার সুযোগ পাব কি? শামা এবং তাফীল পাহাড় আবার প্রকাশিত হবে কি?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি শায়বা ইবনু রাবী’আ, ‘উতবা ইবনু রাবী’আ এবং উমায়্যা ইবনু খালফের প্রতি লা’নত বর্ষন কর; যেমনি ভাবে তাঁরা আমাদেরকে আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! মদিনাকে আমাদের নিকট প্রিয় বানিয়ে দাও যেমন মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় বা এর চেয়ে বেশী। হে আল্লাহ! আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান কর এবং মদিনাকে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। স্থানান্তরিত করে দাও জুহফাতে এর জ্বরের প্রকোপ বা মহামারীকে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা যখন মদিনা এসেছিলাম তখন তা ছিল আল্লাহর যমীনে সর্বাপেক্ষা অধিক মহামারীর স্থান। তিনি আরো বলেন, সে সময় মদিনায় বুথান নামক একটি ঝর্না ছিল যার থেকে বিকৃত বর্ণ বিকৃত স্বাদের পানি প্রবাহিত হত।
১৭৬৯। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রাঃ) ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি এ বলে দু’আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরন করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর শহরে দাও। ইবনু যুরায়’ই (রহঃ) হাফসা বিনত, উমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে অনুরুপ বর্ননা করতে শুনেছি। হিশাম (রহঃ) বলেন, যায়দ তাঁর পিতার সূত্রে হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ‘উমর (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ‘’রাওহ তাঁর মায়ের সূত্রে এরুপ বলেছেন। ‘’
Friday, 9 February 2018
হজ্জ নিয়ে ইসলামিক হাদীস-৪ [ বুখারী শরীফ ]

Related Posts
- জানাজা নিয়ে ইসলামের হাদীস পর্ব ১-বুখারী শরীফ ১১৬৫ মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আবূ যার্ (গি
- জানাজা নিয়ে ইসলামের হাদীস পর্ব ১-বুখারী শরীফ ১১৬৫ মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আবূ যার্ (গি
- গিবত একটি আরবি শব্দ। গিবত অর্থ পরোক্ষ নিন্দা বা কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি প্রকাশ ক
- পরিচ্ছদঃ ১/ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রতি কিভাবে ওহী শুরু হয়েছিল ১) হুমায়দী (রহঃ) আলকামা
- ওহীর সূচনা অধ্যায় ১- হাদিস(১-৬) বুখারী শরীফ হাদিস ১: হুমায়দী (র)…’আলকামা ইবন
- হজ্জ নিয়ে ইসলামিক হাদীস-১ [ বুখারী শরীফ ] ১৪২৫। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ‘আবদু
Load comments
Subscribe to:
Post Comments (Atom)