Monday, 12 February 2018

ঈমানের পরিপূর্ণ ৭৭টি শাখা ও প্রশাখা!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, প্রিয় ভাই এবং বোনেরা ! মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি আমাকে এই পোষ্টটি করার তাওফিক দান করার জন্য।  আজ আমি এক ভাই এর ফেসবুক পেজ এ পোস্ট করা ঈমানের পরিপূর্ণ ৭৭টি শাখা ও প্রশাখা! আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
লিখেছেন- পরাগ আহমদ ভাই


আলহামদুলিল্লাহ ! অনেক কষ্ট হলেও হসপিটালে বসে ঈমানের পরিপূর্ন শাখা ও প্রশাখা গুলো নিম্নে ভাগে ভাগে উল্লেখ করার চেষ্টা করছিঃ

প্রথমে একটি হাদীস দিয়ে শুরু করিঃ
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,,, মহান আল্লাহর রাসূল (সঃ) বাণী প্রদান করেন— ঈমানের সত্তরটিরও অধিক শাখা-প্রশাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে- একথা বলা যে, মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহা নেই। আর তার মধ্যে ক্ষুদ্রতমটি হচ্ছে,, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বিশিষ্ট শাখা। (সহীয় বুখারী ও মুসলিম)

হাদীসে ঈমানের সত্তরটিরও ৭০ বেশি শাখার কথা বলা হয়েছে , এটা অধিক সংখ্যা বোঝাবার উদ্দেশ্যে। তাই হাদীস বিশারদগন ঈমানের শাখা বর্ননা করতে গিয়ে সর্বমোট ৭৭টি চিহ্নিত করেছেন যা ৫টি ভাগে বিভক্তঃ

১। বিশ্বাস সম্পর্কিত— ৩০টি ।
২। মোখিক কর্ম সম্পর্কিত– ৭টি।
৩। দৈহিক কর্ম সম্পর্কিত– ১৬টি।
৪। নিকটবর্তী লোকদের অধিকার বিষয়ক– ৬টি।
৫। মানবজাতির অধিকার বিষয়ক– ১৮টি।
( যোগফল=৭৭টি )

((১)) আকীদা বা বিশ্বাস বিষয়ক ৩০টি শাখা হলোঃ

১। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা।

২। ফেরেশতাদের অস্তিত্ব ও কর্মে বিশ্বাস করা।

৩। সকল আসমানী কিতাবের উপর বিস্বাস করা।

৪। আল্লাহর প্রেরিত সকল নবী-রাসূলের প্রতি বিশ্বাস।

৫। পরকালের হিসাব-নিকাশের প্রতি বিশ্বাস।

৬। তাকদীরের ভাল-মন্দের ওপর বিশ্বাস।

৭। মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের ওপর বিশ্বাস।

৮। বেহেশতের অস্তিত্বে বিশ্বাস।

৯। জাহান্নামের অস্তিত্বে বিশ্বাস।

১০। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালবাসা ও শোকর আদায় ।

১১। রাসূল (সঃ)-এর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম, আনসার ও মুহাজিরদেরকে ভালবাসা, সম্মান ও অনুসরণ করা।

১২। আল্লাহর গুণাবলীতে বিশ্বাস করা।

১৩। এখলাস বা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রার্থনা করা।

১৪। পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করা।

১৫। আল্লাহকে ভয় করা।

১৬। আল্লাহর রহমতের আশা করা।

১৭। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়া।

১৮। আল্লাহর শোকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

১৯। আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করা।

২০। বিপদে ধৈর্যধারন করা।

২১। বড়দেরকে ছোটদের সম্মান করা।

২২। ছোটদেরকে বড়দের স্নেহ করা।

২৩। মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

২৪। অহংকার না করা।

২৫। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা ভরষা করা।

২৬। হিংসা ও বিদ্বেষ ত্যাগ করা।

২৭। অশ্লীলতা ত্যাগ করা।

২৮। ক্রোধ পরিত্যাগ করা।

২৯। ধোঁকাবাজি পরিহার করা।

৩০। দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা।

((২)) মৌখিক কর্ম সম্পর্কিত ৭টি শাখা হচ্ছেঃ

৩১। মুখে আল্লাহর কালিমা উচ্চারন করা।

৩২। কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা।

৩৩। ইলম হাসিল করা।

৩৪। অপরকে ইলম শিক্ষাদান করা।

৩৫। নিজের জন্য ও অপরের জন্য মুক্তির জন্য দুআ করা।

৩৬। আল্লাহর যিকর ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।

৩৭। ক্রোধান্বিত বাক্য ত্যাগ করা।

((৩)) দৈহিক কর্ম সম্পর্কিত ১৬টি শাখাঃ

৩৮। পবিত্রতা অর্জন করা।

৩৯। আহকাম ও আরকান্সহ সালাত আদায় করা।

৪০। সাদকা, ফিতরা, যাকাত আদায় করা।

৪১। ফরয ও নফল সিয়াম পালন করা।

৪২। হজ্জ ও উমরা আদায় করা।

৪৩। ইলম অর্জনের জন্য এবং ইবাদতের জন্য ইতিকাফ করা।

৪৪। মান্নত আদায় করা।

৪৫। দ্বীন ইফাযতের জন্য হিযরত করা।

৪৬। শপথ রক্ষা করা।

৪৭। কাফফারা আদায় করা।

৪৮। নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঢেকে রাখা।

৪৯। কুরবানী আদায় করা।

৫০। জানাযার সালাত আদায় করা।

৫১। ঋন পরিশোধ করা।

৫২। বিনা সুদে ঋন প্রদান করা।

৫৩। গোপন না করে সত্য সাক্ষ দেওয়া।

((৪)) নিকটবর্তী লোকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কীয় ৬টি শাখাঃ

৫৪। বিবাহের মাধ্যমে অশ্লীলতা থেকে নিজকে পূত-পবিত্র রাখা।

৫৫। কর্মচারী ও খাদেমের হক আদায় করা।
৫৬। পিতার সাথে সন্তানের সম্মানের হক আদায় করা।

৫৭। পিথা কর্তৃক সন্তানদের ভালভাবে প্রতিপালন করা।

৫৮। নিকটবর্তী লকদের প্রতি দয়া করা।

৫৯। বড়দের নির্দেশ মান্য করা।

((৫)) মানবজাতির অধিকার বিষয়ক ১৮টি শাখা নিম্নে দেওয়া হলোঃ

৬০। ন্যায় বিচার করা।

৬১। সত্যবাদীদের সাথে থাকা।

৬২। শরীয়াতের বিধি-বিধানের
বিরুদ্ধাচারণ না করা।

৬৩। মানব-কল্যাণে ধন-সম্পদ
ব্যবহার করা।

৬৪। সৎ কাজে সাহায্য করা।

৬৫। অশ্লীলতা থেকে নিষেদ করা ।

৬৬। শান্তির বিধান প্রতিষ্টা করা।

৬৭। জিহাদ করা ও যুদ্ধে পরিখা
হিফাজত করা।

৬৮। আমানত আদায় করা ।

৬৯। ঋণ আদায় করা।

৭০। প্রতিবেশির হক আদায় করা
ও তাদের সম্মান করা।

৭১। বৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করা।

৭২। সম্পদকে সঠিক ভাবে ব্যয় করা।

৭৩। সালাম দেয়া ও উত্তর দেওয়া।

৭৪। হাঁচির উত্তর দেওয়া।

৭৫। দুনিয়াকে অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা।

৭৬। অনর্থক খেলাধুলা বর্জন ক ।

৭৭। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা। |||

সবশেষে কুরআনের কিছু আয়াত দিয়ে আমার লেখা শেষ করছিঃ
আল্লাহ বলেন—-||| তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তাআলা কালেমায়ে তায়্যেবার কি (সুন্দর) উপমা পেশ করেছেন ; যেন একটি উৎকৃষ্ট গাছ, যার মূল জমীনে সুদৃঢ়, যার শাখা-প্রশাখা আসমানে বিস্তৃত। (সূরা ইব্রাহীনঃ২৪) |||—-||| তোমরা পরিপূর্নভাবে ইসলামে প্রবেশ করো। (সূরা আল-বাকারাঃ২০৮) |||—||| যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারা সৃষ্টির সেরা জীব। (সূরা আল-বায়্যিনাঃ০৭) |||

উপরিউক্ত বিষয়াবলীর উপর ঈমান পোষণ করেই একজন পরহেজগার মানুষ জীবনের সর্বস্তরে উন্নতি, অগ্রগতি, মর্যাদাবোধ, সত্যের সন্ধান এবং সঠিক আমলের মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণতা
ও প্রশান্তিময় জীবন লাভ করা যায় দুনিয়া ও আখিরাতে |||

শেয়ার করুন

Load comments