গুরুত্বপূর্ণ সহীহ বাংলা হাদিস প্রয়োজনীয় হাদীস
জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করলেন। তাদের মোকাবেলা হল। মুশরিকদের এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত সাহসী। সে মুসলমানদের যাকে পেতো তাকেই হত্যা করতো। মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, তিনি তো উসামা ইবনে যায়েদ। (সুযোগ পেয়ে) তিনি যখন তরবারি উঠান, সে বলে উঠলো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। তদুপরি তিনি তাকে হত্যা কর ফেললেন। তারপর বিজয়ের সুসংবাদ বাহক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছল। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে সব অবহিত করলো, এমনকি সেই লোকটি কিরূপ করেছিল, তাও বললো। তিনি তাকে(উসামাকে) ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে হত্যা করলে কেন? তিনি বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তো মুসলমানদের মাঝে সন্ত্রাস ও ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে। তিনি কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি(সুযোগ পেয়ে) যখন আক্রমণ করি(সে তরবারি দেখে ফেলে), অমনি বলে উঠে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে? উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে? তিনি এর থেকে আর কোন কিছু বাড়িয়ে বলেননি যে, “কিয়ামতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি জবাব দিবে?
(ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়েত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 1/68 ( 97 ) ( 160 )]
[মুসলিম: ১/৬৮(৯৭)(১৬০)]
আব্দুল্লাহ উতবা ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মানুষকে ওহীর মাধ্যমে যাচাই করা হতো। আর এখন তো ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা এখন থেকে তোমাদের যাচাই করবো তোমাদের বাহ্যিক কাজ-কর্মের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভাল কাজের প্রকাশ ঘটাবে, আমরা তাত বিশ্বাস করবো এবংতাকে নিকটবর্তী বলে গ্রহণ করে নেবো, আর তার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার দেখার আমাদের দরকার নেই। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের প্রকাশ ঘটাবে অর্থাৎ বাহ্যত মন্দ কাজ করবে,তবে সে যদিও বলে যে, তার অভ্যন্তরীণ অবস্থা খুবই ভাল, তবুও আমরা তার কথা মানবো না এবং তার কথা বিশ্বাসও করবো না। (ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[أخرجه : البخاري 3/221 ( 2641 )]
[বুখারী: ৩/২২১ ( ২৬৪ )]
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বসমর্থিত সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেককে তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র আকারে জমা রাখা হয়। অতঃপর তা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়ে এই পরিমাণ সময় থাকে এবং পরে তা মাংসপিণ্ড আকারে অনুরূপ সময় জমা রাখা হয়। অতঃপর একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। তিনি তাতে আত্মা ফুঁকে দেন এবং চারটি বিষয় লেখার আদেশ করা হয়। তাহলোঃ তার রিযিক, তার হায়াত, তার আমল ও সে দুর্ভাগ্যবান হবে অথবা সৌভাগ্যবান হবে। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! তোমাদের কেউ জান্নাতবাসীদের আমল করবে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করবে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জান্নাতীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। (ইমাম বুখারী: ৩২০৮ ও ইমাম মুসলিম: ২৬৪৩ এ হাদীস রিওয়ায়েত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 9/165 ( 7454 ) ، ومسلم 8/44 ( 2643 ) ( 1 )]
[বুখারী: 9/165 ( 7454 ), মুসলিম: 8/44 ( 2643 )]
ইবনে মাসউদরাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম হবে, আবার প্রতিটি লাগামের জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে এবং এ লাগাম ধরে এটাকে টানবে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/149 ( 2842 ) ( 29 )]
[মুসলিম: 8/149 ( 2842 ) ( 29 )]
নুমান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/144 ( 6562 ) ، ومسلم 1/135 ( 213 ) ( 363 )و( 364 )]
[বুখারী: 8/144 ( ৬৫৬২ ), মুসলিম: 1/135 ( ২১৩ ) ( 363 ) ও ( 364 )]
সামুরা ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নামের আগুনে দোযখীদের কারো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো গলা পর্যন্ত পুড়তে থাকবে (প্রত্যেকে নিজ নিজ গুনাহ অনুযায়ী শাস্তিতে পতিত হবে)। (ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2845 ) ( 33 )]
[মুসলিম: 8/150 ( 2845 ) ( 33 )]
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে, সেদিন তাদের কেউ কেউ তার নিজের ঘামে কানের অর্ধাংশ পর্যন্ত ডুবে যাবে। [ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর রাশুহ্ অর্থ ঘাম।]
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/207 ( 4938 ) ، ومسلم 8/157 ( 2862 ) ( 60 )]
[বুখারী: 6/207 ( 4938 ), মুসলিম: 8/157 ( 2862 )]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন যার অনুরূপ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেনঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে পারতে, তবে নিশ্চয়ই খুব কম হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ কাপড়ে মুখ ঢেকে ফেললেন এবং ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কিছু শুনতে পেয়ে একটি।ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেনঃ আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। সেদিনের মতো ভালো আর মন্দ আর কখনো দেখিনি। আমি এ ব্যাপারে যা জানি, তোমরাও যদি তা জানতে পারতে তবে অবশ্যই হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে খুব বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদেও উপর এদিনের মতো কঠিন দিন আর আসেনি। তাই তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন। আল খানিন অর্থ নাকের বাঁশির শব্দসহ ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করা।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/68 ( 4621 ) ، ومسلم 7/92 ( 2359 ) ( 134 )]
[বুখারী: 6/68 ( 4621 ), মুসলিম: 7/92 ( 2359 ) ( 134 )]
মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এতো কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে যে, তা তাদের থেকে এক মাইলের ব্যবধানে অবস্থান করবে। এ হাদীসের রাবী সুলাইম ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানিনা, মাইল বলতে এটা কি জমিনের দূরত্ব বুঝানোর মাইল বলা হয়েছে নাকি চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা বুঝানো হয়েছে? (রাসূল সাঃ আরো বলেনঃ) অতঃপর মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামের ভেতর ডুবতে থাকবে। তাদের কেউ গোড়ালি পর্যন্ত, কেউ হাটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর তাদের মধ্যে কাউকে ঘামের লাগাম পড়ানো হবে। একথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত দিয়ে তার মুখের দিকে ইশারা করেন অর্থাৎ কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/158 ( 2864 ) ( 62 )]
[মুসলিম: 8/158 ( 2864 ) ( 62 )]
[1- أي مَعقِد الإزار . النهاية 1/417]
[1. @]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের এত ঘাম বেরুবে যে, তা জমীনে সত্তর গজ উঁচু হয়ে বইতে থাকবে এবং তাদেরকে ঘামের লাগাম পরানো হবে, এমনকি তা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/138 ( 6532 ) ، ومسلم 8/158 ( 2863 ) ( 61 )]
[বুখারী: 8/38 ( 6532 ), মুসলিম: 8/158 ( 2863 )]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি কোন বস্তুর গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কিসের শব্দ তা কি তোমরা জানো? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ এটা একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অদ্যাবদি তা জাহান্নামেই গড়াচ্ছিল এবং এখন গিয়ে তার গর্তে পতিত হয়েছে।তোমরা এর পতনের শব্দই শুনতে পেলে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2844 )]
[মুসলিম: 8/150 ( 2844 )]
[1- قال النووي في شرح صحيح مسلم 9/154 عقيب ( 2845 ) : (( معناها السّقطة ))]
[১. ইমাম নওয়াবী @]
আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথে তার রব কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডাইনে তাকিয়ে তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না এবং বাঁয়ে তাকিয়ে ও তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না, আর সামনে তাকিয়ে তার চোখের সামনে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। তাই তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো। (ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[انظر الحديث ( 139 )]
[দেখুন হাদীস নং ( 139 )]
আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছো না। আকাশ উচ্চঃস্বরে শব্দ করছে, আর এর উচ্চ স্বরে শব্দ করার অধিকার আছে। কেননা তাতে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই, বরং ফেরেশতারা তাতে আল্লাহর জন্য সিজদায় তাদের কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি, যদি তোমরা তা জানতে পারতে, তাহলে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম কাঁদতে বেশি; আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বিছানায় শুয়ে আমোদ-আহলাদও করতে না এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য বনে-জঙ্গলে বেরিয়ে যেতে। (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান। )
_____________________________
[أخرجه : ابن ماجه ( 4190 ) ، والترمذي ( 2312 ) وقال : (( حديث حسن غريب ))]
[ইবনে মাজাহ্: ( 4190 ), তিরিমিযী: ( 2312 ) তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]
আবূ বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দাহ তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ তার জীবনকাল কিরূপে অতিবাহিত করেছে, তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে এবং কিসে খরচ করেছে এবং তার শরীর কিভাবে পুরানো করেছে? (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীস টি হাসান ও সহীহ।)
_____________________________
[رواه الترمذي: 2417 ، وَقالَ : (( حديث حسن صحيح ))]
[তিরমিযী: ( 2417 ) তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ্।]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সেদিন তা(যমীন) তার সমস্ত বিষয় বর্ণনা করবে” (সূরা যিলযালঃ ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জানো সেদিন জমীন কি বর্ণনা করবে? উপস্থিত সবাই বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ যমীন যে বিষয় বর্ণনা করবে তা এই যে, তার উপরে নর-নারী কি কি করেছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তুমি এই দিন এই এই কাজ করেছ। এগুলো হলো তার বর্ণনা। [ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।]
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2429 ) ، والنسائي في " الكبرى " ( 11693 ) وقال الترمذي عنه : (( حديث حسن غريب صحيح )) على أنَّ سند الحديث ضعيف]
[তিরমিযী: ( 2429 ), নাসায়ী আলকোবরা: ( 11693 ) এবং তিরমিযী এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব সহীহ্ @]
সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্ত বসে থাকতে পারি? অথচ শিঙ্গাধারী ফেরেশতা (ইসরাফীল ) মুখে শিঙ্গা লাগিয়ে কান খুলে অপেক্ষা করছেন কখন তাকে ফুঁ দেয়ার আদেশ করা হবে, আর তিনি তাতে ফুঁ দিবেন? মনে হলো যেন একথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বলো, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ এবং তিনি খুবই উত্তম অভিভাবক। (ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2431 )]
[তিরমিযী: ( 2431 )]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহঃসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (শেষ রাতে শত্রুও লুটতরাজ কে) ভয় করে, সে সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয় এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয়, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখো, আল্লাহর সামগ্রী খুবই মূল্যবান। জেনো রাখো, আল্লাহর সামগ্রী হলো জান্নাত। (ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান হাদীস। )
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2450 ) وقال : (( حديث حسن غريب ))]
[তিরমিযী: ( 2450 ) তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]
হযরত আইশা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন লোকদের খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে এবং খাতনাহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,ইয়া রাসূলুল্লাহ! সমস্ত নারী-পুরুষ একসাথে হলে তো তারা একে অপরকে দেখবে? তিনি বলেনঃ হে আইশা! মানুষ যা কল্পনা করে সেদিনের পরিস্থিতি তার চাইতেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, মানুষ একে অপরের দিকে তাকানোর চাইতেও সেদিনের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/136 ( 6527 ) ، ومسلم 8/156 ( 2859 ) ( 56 )]
[বুখারী: 8/136 ( 6527 ), মুসলিম: 8/156 ( 2857 ) ( 56 )]
জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করলেন। তাদের মোকাবেলা হল। মুশরিকদের এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত সাহসী। সে মুসলমানদের যাকে পেতো তাকেই হত্যা করতো। মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, তিনি তো উসামা ইবনে যায়েদ। (সুযোগ পেয়ে) তিনি যখন তরবারি উঠান, সে বলে উঠলো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। তদুপরি তিনি তাকে হত্যা কর ফেললেন। তারপর বিজয়ের সুসংবাদ বাহক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছল। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে সব অবহিত করলো, এমনকি সেই লোকটি কিরূপ করেছিল, তাও বললো। তিনি তাকে(উসামাকে) ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে হত্যা করলে কেন? তিনি বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তো মুসলমানদের মাঝে সন্ত্রাস ও ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে। তিনি কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি(সুযোগ পেয়ে) যখন আক্রমণ করি(সে তরবারি দেখে ফেলে), অমনি বলে উঠে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে? উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে? তিনি এর থেকে আর কোন কিছু বাড়িয়ে বলেননি যে, “কিয়ামতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি জবাব দিবে?
(ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়েত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 1/68 ( 97 ) ( 160 )]
[মুসলিম: ১/৬৮(৯৭)(১৬০)]
আব্দুল্লাহ উতবা ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মানুষকে ওহীর মাধ্যমে যাচাই করা হতো। আর এখন তো ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা এখন থেকে তোমাদের যাচাই করবো তোমাদের বাহ্যিক কাজ-কর্মের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভাল কাজের প্রকাশ ঘটাবে, আমরা তাত বিশ্বাস করবো এবংতাকে নিকটবর্তী বলে গ্রহণ করে নেবো, আর তার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার দেখার আমাদের দরকার নেই। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের প্রকাশ ঘটাবে অর্থাৎ বাহ্যত মন্দ কাজ করবে,তবে সে যদিও বলে যে, তার অভ্যন্তরীণ অবস্থা খুবই ভাল, তবুও আমরা তার কথা মানবো না এবং তার কথা বিশ্বাসও করবো না। (ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[أخرجه : البخاري 3/221 ( 2641 )]
[বুখারী: ৩/২২১ ( ২৬৪ )]
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বসমর্থিত সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেককে তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র আকারে জমা রাখা হয়। অতঃপর তা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়ে এই পরিমাণ সময় থাকে এবং পরে তা মাংসপিণ্ড আকারে অনুরূপ সময় জমা রাখা হয়। অতঃপর একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। তিনি তাতে আত্মা ফুঁকে দেন এবং চারটি বিষয় লেখার আদেশ করা হয়। তাহলোঃ তার রিযিক, তার হায়াত, তার আমল ও সে দুর্ভাগ্যবান হবে অথবা সৌভাগ্যবান হবে। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! তোমাদের কেউ জান্নাতবাসীদের আমল করবে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করবে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জান্নাতীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। (ইমাম বুখারী: ৩২০৮ ও ইমাম মুসলিম: ২৬৪৩ এ হাদীস রিওয়ায়েত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 9/165 ( 7454 ) ، ومسلم 8/44 ( 2643 ) ( 1 )]
[বুখারী: 9/165 ( 7454 ), মুসলিম: 8/44 ( 2643 )]
ইবনে মাসউদরাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম হবে, আবার প্রতিটি লাগামের জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে এবং এ লাগাম ধরে এটাকে টানবে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/149 ( 2842 ) ( 29 )]
[মুসলিম: 8/149 ( 2842 ) ( 29 )]
নুমান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/144 ( 6562 ) ، ومسلم 1/135 ( 213 ) ( 363 )و( 364 )]
[বুখারী: 8/144 ( ৬৫৬২ ), মুসলিম: 1/135 ( ২১৩ ) ( 363 ) ও ( 364 )]
সামুরা ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নামের আগুনে দোযখীদের কারো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো গলা পর্যন্ত পুড়তে থাকবে (প্রত্যেকে নিজ নিজ গুনাহ অনুযায়ী শাস্তিতে পতিত হবে)। (ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2845 ) ( 33 )]
[মুসলিম: 8/150 ( 2845 ) ( 33 )]
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে, সেদিন তাদের কেউ কেউ তার নিজের ঘামে কানের অর্ধাংশ পর্যন্ত ডুবে যাবে। [ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর রাশুহ্ অর্থ ঘাম।]
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/207 ( 4938 ) ، ومسلم 8/157 ( 2862 ) ( 60 )]
[বুখারী: 6/207 ( 4938 ), মুসলিম: 8/157 ( 2862 )]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন যার অনুরূপ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেনঃ আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে পারতে, তবে নিশ্চয়ই খুব কম হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ কাপড়ে মুখ ঢেকে ফেললেন এবং ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
অপর এক বর্ণনায় আছেঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কিছু শুনতে পেয়ে একটি।ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেনঃ আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। সেদিনের মতো ভালো আর মন্দ আর কখনো দেখিনি। আমি এ ব্যাপারে যা জানি, তোমরাও যদি তা জানতে পারতে তবে অবশ্যই হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে খুব বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদেও উপর এদিনের মতো কঠিন দিন আর আসেনি। তাই তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন। আল খানিন অর্থ নাকের বাঁশির শব্দসহ ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করা।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/68 ( 4621 ) ، ومسلم 7/92 ( 2359 ) ( 134 )]
[বুখারী: 6/68 ( 4621 ), মুসলিম: 7/92 ( 2359 ) ( 134 )]
মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এতো কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে যে, তা তাদের থেকে এক মাইলের ব্যবধানে অবস্থান করবে। এ হাদীসের রাবী সুলাইম ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানিনা, মাইল বলতে এটা কি জমিনের দূরত্ব বুঝানোর মাইল বলা হয়েছে নাকি চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা বুঝানো হয়েছে? (রাসূল সাঃ আরো বলেনঃ) অতঃপর মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামের ভেতর ডুবতে থাকবে। তাদের কেউ গোড়ালি পর্যন্ত, কেউ হাটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর তাদের মধ্যে কাউকে ঘামের লাগাম পড়ানো হবে। একথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত দিয়ে তার মুখের দিকে ইশারা করেন অর্থাৎ কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/158 ( 2864 ) ( 62 )]
[মুসলিম: 8/158 ( 2864 ) ( 62 )]
[1- أي مَعقِد الإزار . النهاية 1/417]
[1. @]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের এত ঘাম বেরুবে যে, তা জমীনে সত্তর গজ উঁচু হয়ে বইতে থাকবে এবং তাদেরকে ঘামের লাগাম পরানো হবে, এমনকি তা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/138 ( 6532 ) ، ومسلم 8/158 ( 2863 ) ( 61 )]
[বুখারী: 8/38 ( 6532 ), মুসলিম: 8/158 ( 2863 )]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি কোন বস্তুর গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কিসের শব্দ তা কি তোমরা জানো? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ এটা একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অদ্যাবদি তা জাহান্নামেই গড়াচ্ছিল এবং এখন গিয়ে তার গর্তে পতিত হয়েছে।তোমরা এর পতনের শব্দই শুনতে পেলে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2844 )]
[মুসলিম: 8/150 ( 2844 )]
[1- قال النووي في شرح صحيح مسلم 9/154 عقيب ( 2845 ) : (( معناها السّقطة ))]
[১. ইমাম নওয়াবী @]
আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের সাথে তার রব কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডাইনে তাকিয়ে তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না এবং বাঁয়ে তাকিয়ে ও তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না, আর সামনে তাকিয়ে তার চোখের সামনে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। তাই তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো। (ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[انظر الحديث ( 139 )]
[দেখুন হাদীস নং ( 139 )]
আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছো না। আকাশ উচ্চঃস্বরে শব্দ করছে, আর এর উচ্চ স্বরে শব্দ করার অধিকার আছে। কেননা তাতে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই, বরং ফেরেশতারা তাতে আল্লাহর জন্য সিজদায় তাদের কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি, যদি তোমরা তা জানতে পারতে, তাহলে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম কাঁদতে বেশি; আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বিছানায় শুয়ে আমোদ-আহলাদও করতে না এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য বনে-জঙ্গলে বেরিয়ে যেতে। (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান। )
_____________________________
[أخرجه : ابن ماجه ( 4190 ) ، والترمذي ( 2312 ) وقال : (( حديث حسن غريب ))]
[ইবনে মাজাহ্: ( 4190 ), তিরিমিযী: ( 2312 ) তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]
আবূ বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দাহ তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ তার জীবনকাল কিরূপে অতিবাহিত করেছে, তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে এবং কিসে খরচ করেছে এবং তার শরীর কিভাবে পুরানো করেছে? (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীস টি হাসান ও সহীহ।)
_____________________________
[رواه الترمذي: 2417 ، وَقالَ : (( حديث حسن صحيح ))]
[তিরমিযী: ( 2417 ) তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ্।]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সেদিন তা(যমীন) তার সমস্ত বিষয় বর্ণনা করবে” (সূরা যিলযালঃ ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জানো সেদিন জমীন কি বর্ণনা করবে? উপস্থিত সবাই বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ যমীন যে বিষয় বর্ণনা করবে তা এই যে, তার উপরে নর-নারী কি কি করেছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তুমি এই দিন এই এই কাজ করেছ। এগুলো হলো তার বর্ণনা। [ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।]
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2429 ) ، والنسائي في " الكبرى " ( 11693 ) وقال الترمذي عنه : (( حديث حسن غريب صحيح )) على أنَّ سند الحديث ضعيف]
[তিরমিযী: ( 2429 ), নাসায়ী আলকোবরা: ( 11693 ) এবং তিরমিযী এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব সহীহ্ @]
সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্ত বসে থাকতে পারি? অথচ শিঙ্গাধারী ফেরেশতা (ইসরাফীল ) মুখে শিঙ্গা লাগিয়ে কান খুলে অপেক্ষা করছেন কখন তাকে ফুঁ দেয়ার আদেশ করা হবে, আর তিনি তাতে ফুঁ দিবেন? মনে হলো যেন একথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বলো, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ এবং তিনি খুবই উত্তম অভিভাবক। (ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2431 )]
[তিরমিযী: ( 2431 )]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহঃসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (শেষ রাতে শত্রুও লুটতরাজ কে) ভয় করে, সে সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয় এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয়, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখো, আল্লাহর সামগ্রী খুবই মূল্যবান। জেনো রাখো, আল্লাহর সামগ্রী হলো জান্নাত। (ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান হাদীস। )
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2450 ) وقال : (( حديث حسن غريب ))]
[তিরমিযী: ( 2450 ) তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]
হযরত আইশা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন লোকদের খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে এবং খাতনাহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,ইয়া রাসূলুল্লাহ! সমস্ত নারী-পুরুষ একসাথে হলে তো তারা একে অপরকে দেখবে? তিনি বলেনঃ হে আইশা! মানুষ যা কল্পনা করে সেদিনের পরিস্থিতি তার চাইতেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, মানুষ একে অপরের দিকে তাকানোর চাইতেও সেদিনের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/136 ( 6527 ) ، ومسلم 8/156 ( 2859 ) ( 56 )]
[বুখারী: 8/136 ( 6527 ), মুসলিম: 8/156 ( 2857 ) ( 56 )]