Sunday 23 September 2018

গুরুত্বপূর্ণ সহীহ বাংলা হাদিস প্রয়োজনীয় হাদীস

গুরুত্বপূর্ণ  সহীহ বাংলা হাদিস প্রয়োজনীয় হাদীস

জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুশরিকদের একটি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি মুসলিম বাহিনী প্রেরণ করলেন। তাদের মোকাবেলা হল। মুশরিকদের এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত সাহসী। সে মুসলমানদের যাকে পেতো তাকেই হত্যা করতো। মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, তিনি তো উসামা ইবনে যায়েদ। (সুযোগ পেয়ে) তিনি যখন তরবারি উঠান, সে বলে উঠলো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। তদুপরি তিনি তাকে হত্যা কর ফেললেন। তারপর বিজয়ের সুসংবাদ বাহক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে পৌঁছল। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে সব অবহিত করলো, এমনকি সেই লোকটি কিরূপ করেছিল, তাও বললো। তিনি তাকে(উসামাকে) ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে হত্যা করলে কেন? তিনি বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে তো মুসলমানদের মাঝে সন্ত্রাস ও ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে। তিনি কয়েক জনের নাম উল্লেখ করলেন। আমি(সুযোগ পেয়ে) যখন আক্রমণ করি(সে তরবারি দেখে ফেলে), অমনি বলে উঠে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি তাকে হত্যা করলে? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে? উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি বলেনঃ কিয়ামতের দিন তুমি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”র কি উত্তর দিবে? তিনি এর থেকে আর কোন কিছু বাড়িয়ে বলেননি যে, “কিয়ামতের দিন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি জবাব দিবে?
(ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি রিওয়ায়েত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 1/68 ( 97 ) ( 160 )]
[মুসলিম: ১/৬৮(৯৭)(১৬০)]



আব্দুল্লাহ উতবা ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মানুষকে ওহীর মাধ্যমে যাচাই করা হতো। আর এখন তো ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা এখন থেকে তোমাদের যাচাই করবো তোমাদের বাহ্যিক কাজ-কর্মের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি আমাদের সামনে ভাল কাজের প্রকাশ ঘটাবে, আমরা তাত বিশ্বাস করবো এবংতাকে নিকটবর্তী বলে গ্রহণ করে নেবো, আর তার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার দেখার আমাদের দরকার নেই। আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজের প্রকাশ ঘটাবে অর্থাৎ বাহ্যত মন্দ কাজ করবে,তবে সে যদিও বলে যে, তার অভ্যন্তরীণ অবস্থা খুবই ভাল, তবুও আমরা তার কথা মানবো না এবং তার কথা বিশ্বাসও করবো না। (ইমাম বুখারী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[أخرجه : البخاري 3/221 ( 2641 )]
[বুখারী: ৩/২২১ ( ২৬৪ )]



ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সর্বসমর্থিত সত্যবাদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেককে তার মায়ের পেটে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্র আকারে জমা রাখা হয়। অতঃপর তা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়ে এই পরিমাণ সময় থাকে এবং পরে তা মাংসপিণ্ড আকারে অনুরূপ সময় জমা রাখা হয়। অতঃপর একজন ফেরেশতা পাঠানো হয়। তিনি তাতে আত্মা ফুঁকে দেন এবং চারটি বিষয় লেখার আদেশ করা হয়। তাহলোঃ তার রিযিক, তার হায়াত, তার আমল ও সে দুর্ভাগ্যবান হবে অথবা সৌভাগ্যবান হবে। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! তোমাদের কেউ জান্নাতবাসীদের আমল করবে, এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। আর তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের কাজ করবে, এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত ব্যবধান থাকবে। অতঃপর তার কিতাবের লিখন সামনে এসে উপস্থিত হবে। ফলে সে জান্নাতীদের আমল করবে এবং তাতে প্রবেশ করবে। (ইমাম বুখারী: ৩২০৮ ও ইমাম মুসলিম: ২৬৪৩ এ হাদীস রিওয়ায়েত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 9/165 ( 7454 ) ، ومسلم 8/44 ( 2643 ) ( 1 )]
[বুখারী: 9/165 ( 7454 ), মুসলিম: 8/44 ( 2643 )]



ইবনে মাসউদরাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম হবে, আবার প্রতিটি লাগামের জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে এবং এ লাগাম ধরে এটাকে টানবে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/149 ( 2842 ) ( 29 )]
[মুসলিম: 8/149 ( 2842 ) ( 29 )]



নুমান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে লঘু শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে এই যে, তার দুই পায়ের তালুর নিচে আগুনের দু’টি অংগার রাখা হবে এবং তাতে তার মস্তিষ্ক সিদ্ধ হতে থাকবে। সে মনে করবে, তার চাইতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি আর কেউ হয়নি। অথচ সে-ই জাহান্নামীদের মধ্যে সবচাইতে হালকা শাস্তিপ্রাপ্ত।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/144 ( 6562 ) ، ومسلم 1/135 ( 213 ) ( 363 )و( 364 )]
[বুখারী: 8/144 ( ৬৫৬২ ), মুসলিম: 1/135 ( ২১৩ ) ( 363 ) ও ( 364 )]



সামুরা ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জাহান্নামের আগুনে দোযখীদের কারো গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো গলা পর্যন্ত পুড়তে থাকবে (প্রত্যেকে নিজ নিজ গুনাহ অনুযায়ী শাস্তিতে পতিত হবে)। (ইমাম মুসলিম এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2845 ) ( 33 )]
[মুসলিম: 8/150 ( 2845 ) ( 33 )]



ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ মানুষ যেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে দাঁড়াবে, সেদিন তাদের কেউ কেউ তার নিজের ঘামে কানের অর্ধাংশ পর্যন্ত ডুবে যাবে। [ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আর রাশুহ্ অর্থ ঘাম।]
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/207 ( 4938 ) ، ومسلم 8/157 ( 2862 ) ( 60 )]
[বুখারী: 6/207 ( 4938 ), মুসলিম: 8/157 ( 2862 )]

 আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন যার অনুরূপ আমি আর কখনো শুনিনি। তিনি বলেনঃ আমি  যা জানি তোমরা যদি তা জানতে পারতে, তবে নিশ্চয়ই খুব কম হাসতে  এবং খুব বেশি কাঁদতে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ কাপড়ে মুখ ঢেকে ফেললেন এবং ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)

 অপর এক বর্ণনায় আছেঃ একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের কাছ থেকে কোন ব্যাপারে কিছু শুনতে পেয়ে একটি।ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেনঃ আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছে। সেদিনের মতো ভালো আর মন্দ আর কখনো দেখিনি। আমি এ ব্যাপারে যা জানি, তোমরাও যদি তা জানতে পারতে তবে অবশ্যই হাসতে খুব কম এবং কাঁদতে খুব বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদেও উপর এদিনের মতো কঠিন দিন আর আসেনি। তাই তারা তাদের মাথা ঢেকে ফেলেন এবং ডুকরে কাঁদতে থাকেন। আল খানিন অর্থ নাকের বাঁশির শব্দসহ ফুঁপিয়ে কান্নাকাটি করা।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 6/68 ( 4621 ) ، ومسلم 7/92 ( 2359 ) ( 134 )]
[বুখারী: 6/68 ( 4621 ), মুসলিম: 7/92 ( 2359 ) ( 134 )]

 মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন সূর্যকে  সৃষ্টজীবের এতো কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে যে, তা তাদের থেকে এক মাইলের ব্যবধানে অবস্থান করবে। এ হাদীসের রাবী সুলাইম ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানিনা, মাইল বলতে এটা কি জমিনের দূরত্ব বুঝানোর মাইল বলা হয়েছে নাকি চোখে সুরমা দেয়ার শলাকা বুঝানো হয়েছে? (রাসূল সাঃ আরো বলেনঃ) অতঃপর মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ঘামের ভেতর ডুবতে থাকবে। তাদের কেউ গোড়ালি পর্যন্ত, কেউ হাটু পর্যন্ত, কেউ কোমর পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। আর তাদের মধ্যে কাউকে ঘামের লাগাম পড়ানো হবে। একথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত দিয়ে তার মুখের দিকে ইশারা করেন অর্থাৎ কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/158 ( 2864 ) ( 62 )]
[মুসলিম: 8/158 ( 2864 ) ( 62 )]
[1- أي مَعقِد الإزار . النهاية 1/417]
[1. @]
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের এত ঘাম বেরুবে যে, তা জমীনে সত্তর গজ উঁচু হয়ে বইতে থাকবে এবং তাদেরকে ঘামের লাগাম পরানো হবে, এমনকি তা তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/138 ( 6532 ) ، ومسلم 8/158 ( 2863 ) ( 61 )]
[বুখারী: 8/38 ( 6532 ), মুসলিম: 8/158 ( 2863 )]

 আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি কোন বস্তুর গড়িয়ে পড়ার শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কিসের শব্দ তা কি তোমরা  জানো? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ এটা একটি পাথর যা সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। অদ্যাবদি তা জাহান্নামেই গড়াচ্ছিল এবং এখন গিয়ে তার  গর্তে পতিত হয়েছে।তোমরা এর পতনের শব্দই শুনতে পেলে। (ইমাম মুসলিম এ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : مسلم 8/150 ( 2844 )]
[মুসলিম: 8/150 ( 2844 )]
[1- قال النووي في شرح صحيح مسلم 9/154 عقيب ( 2845 ) : (( معناها السّقطة ))]
[১. ইমাম নওয়াবী @]

 আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকের  সাথে তার রব কথা বলবেন। তার ও আল্লাহর মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডাইনে তাকিয়ে তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না এবং বাঁয়ে তাকিয়ে ও তার পূর্বে পাঠানো আমল ছাড়া আর কিছুই দেখবে না, আর সামনে তাকিয়ে তার চোখের সামনে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। তাই তোমরা এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো। (ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। )
_____________________________
[انظر الحديث ( 139 )]
[দেখুন হাদীস নং ( 139 )]

 আবূ যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যা দেখতে পাচ্ছি, তোমরা তা দেখতে পাচ্ছো না। আকাশ উচ্চঃস্বরে শব্দ করছে, আর এর উচ্চ স্বরে শব্দ করার অধিকার আছে। কেননা তাতে চার আঙ্গুল পরিমাণ জায়গাও খালি নেই, বরং ফেরেশতারা তাতে আল্লাহর জন্য সিজদায় তাদের কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন। আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি, যদি তোমরা তা জানতে পারতে, তাহলে তোমরা অবশ্যই হাসতে কম কাঁদতে বেশি; আর তোমরা স্ত্রীদের সাথে বিছানায় শুয়ে আমোদ-আহলাদও করতে না এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়ার জন্য বনে-জঙ্গলে বেরিয়ে যেতে। (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীসটি হাসান। )
_____________________________
[أخرجه : ابن ماجه ( 4190 ) ، والترمذي ( 2312 ) وقال : (( حديث حسن غريب ))]
[ইবনে মাজাহ্: ( 4190 ), তিরিমিযী: ( 2312 ) তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]

আবূ বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের  দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দাহ তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা  হবেঃ তার জীবনকাল কিরূপে অতিবাহিত করেছে, তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে এবং কিসে খরচ করেছে এবং তার শরীর কিভাবে পুরানো করেছে? (ইমাম তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, হাদীস টি হাসান ও সহীহ।)
_____________________________
[رواه الترمذي: 2417 ، وَقالَ : (( حديث حسن صحيح ))]
[তিরমিযী: ( 2417 ) তিরমিযী বলেন: হাদীসটি হাসান সহীহ্।]

 আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেনঃ “সেদিন তা(যমীন) তার সমস্ত বিষয় বর্ণনা করবে” (সূরা যিলযালঃ ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি জানো সেদিন জমীন কি বর্ণনা করবে? উপস্থিত সবাই বললেনঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বলেনঃ যমীন যে বিষয় বর্ণনা করবে তা এই যে, তার উপরে নর-নারী কি কি করেছে সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়ে বলবে, তুমি এই দিন এই এই কাজ করেছ। এগুলো হলো তার বর্ণনা। [ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান ও সহীহ হাদীস।]
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2429 ) ، والنسائي في " الكبرى " ( 11693 ) وقال الترمذي عنه : (( حديث حسن غريب صحيح )) على أنَّ سند الحديث ضعيف]
[তিরমিযী: ( 2429 ), নাসায়ী আলকোবরা: ( 11693 ) এবং তিরমিযী এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব সহীহ্ @]



সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্ত বসে থাকতে পারি? অথচ শিঙ্গাধারী ফেরেশতা (ইসরাফীল ) মুখে শিঙ্গা লাগিয়ে কান খুলে অপেক্ষা করছেন কখন তাকে ফুঁ দেয়ার  আদেশ করা হবে, আর তিনি তাতে ফুঁ দিবেন? মনে হলো যেন একথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সাহাবীগণ সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা বলো, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ঠ এবং তিনি খুবই উত্তম অভিভাবক। (ইমাম তিরমিযী এটি বর্ণনা করে বলেন, হাদীসটি হাসান।
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2431 )]
[তিরমিযী: ( 2431 )]

 আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহঃসাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি (শেষ রাতে শত্রুও লুটতরাজ কে) ভয় করে, সে সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয় এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা রাতেই রওয়ানা হয়, সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখো, আল্লাহর সামগ্রী খুবই মূল্যবান। জেনো রাখো, আল্লাহর সামগ্রী হলো জান্নাত। (ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করে বলেন, এটি হাসান হাদীস। )
_____________________________
[أخرجه : الترمذي ( 2450 ) وقال : (( حديث حسن غريب ))]
[তিরমিযী: ( 2450 ) তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান গরীব।]

 হযরত আইশা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন লোকদের খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে এবং খাতনাহীন অবস্থায় সমবেত করা হবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,ইয়া রাসূলুল্লাহ! সমস্ত নারী-পুরুষ একসাথে হলে তো তারা একে অপরকে দেখবে? তিনি বলেনঃ হে আইশা! মানুষ যা কল্পনা করে সেদিনের পরিস্থিতি তার চাইতেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে, মানুষ একে অপরের দিকে তাকানোর চাইতেও সেদিনের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। (ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)
_____________________________
[أخرجه : البخاري 8/136 ( 6527 ) ، ومسلم 8/156 ( 2859 ) ( 56 )]
[বুখারী: 8/136 ( 6527 ), মুসলিম: 8/156 ( 2857 ) ( 56 )]

প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য যা জানা একান্ত কর্তব্য। বাংলা হাদীস

প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য যা জানা
একান্ত কর্তব্য

মুল: আশ্‌শাইখ মুহাম্মাদ বিন সুলাইমান আত্‌তামীমী (রাহ:)

গ্রন্থনা: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন ইবরাহীম আল কারআওয়ী।

ভাষান্তর : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া মজুমদার

ভূমিকা
সর্বপ্রথম আমি আল্লাহর প্রশংসা আদায় করছি, যিনি আমাকে সঠিক পথ দিয়েছেন, সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পেশ করছি, যার অনুসরনের মধ্যেই রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। আল্লাহ তা‘আলার খাস রহমাত যে তিনি তাঁর এ বান্দাকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা করার তৌফিক দিয়েছেন তার জন্য বলি আলহামদুলিল্লাহ্। দ্বীনি জ্ঞান অর্জনের তাওফীক হওয়া যেমনি সৌভাগ্যের ব্যাপার তেমনি তা দায়িত্বও বটে। আমার জাতি যারা বাংলা ভাষাভাষি তারাই আমার গুরুত্বের বেশী হকদার। তাদের হিদায়াতের জন্য কিছু করা উচিত। পৃথিবীর এক বৃহত্তম জনগোষ্ঠী এ ভাষায় কথা বলে। তাদের সংখ্যা একশত নব্বই মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। তাদের মধ্যে রয়েছে সঠিক আক্কীদা চর্চার অভাব। তাই এ বইটি তাদের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। যা আয়তনে ছোট হলেও আক্কীদার মৌলিক বিষয়সমুহে সমৃদ্ধ।

হিজরী ১৪১৪ সালেই প্রথম এর অনুবাদ করি, এবং নিজস্ব প্রচেষ্টায় আমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজানের লাইব্রেরী থেকে ছাপানো এবং বিনামুল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করি।

ইতিমধ্যে এর সমস্ত কপি নিঃশেষ হওয়ায় দ্বিতীয়বারের মত ছাপানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি, এবং উদ্যোগ গ্রহণ করি। পূর্বের সংস্করণের চেয়ে বর্ধিতভাবে বর্তমান সংস্করণে এর মধ্যকার আয়াত সমুহকে সুরার দিকে নির্দেশ করি, আর হাদীসসমুহকে যে সমস্ত মুল গ্রন্থ থেকে তা নেওয়া হয়েছে তার দিকে নির্দিষ্ট করি। আর কিছু বানানগত ভুল - ত্রুটি শুদ্ধ করি। আল্লাহ তা‘আলা আমার এ প্রচেষ্টা কবুল করুন, এবং হাশরের মাঠে আমার জন্য নাজাতের ওসীলা বানান। আমীন ॥

-আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

তিনটি মূলনীতি
যা জানা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর একান্ত কর্তব্য
মুলনীতিগুলো হলো :

প্রত্যেকে ১। রব বা পালন কর্তা সম্পর্কে জানা।

২। দ্বীন সম্পর্কে জানা।

৩। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জানা।

রব কে জানার পদ্ধতি :

যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমার রব বা পালনকর্তা কে?

তখন উত্তরে বলবে আমার রব হলেন আল্লাহ, যিনি আমাকে এবং সমস্ত সৃষ্টি জগতকে তার অনুগ্রহে লালন করছেন, তিনিই আমার একমাত্র উপাস্য,তিনি ব্যতিত আমার অপর কোন মা’বুদ বা উপাস্য নেই।

দ্বীন জানার পদ্ধতি:

যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয়, তোমার দ্বীন কি?

উত্তরে বল : আমার দ্বীন হলো ইসলাম, যার মানে - আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে সম্পূর্নভাবে তাঁর কাছে আত্নসমর্পণ করা, তাঁর নির্দেশ অনুসরণের মাধ্যমে স্বীকার করা, এবং আল্লাহর ইবাদতে অন্য কিছুর অংশীদারীত্ব করা থেকে মুক্ত থাকা এবং যারা তা করে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানার পদ্ধতি:

যদি তোমাকে প্রশ্ন করা হয় তোমার নবী কে?

উত্তরে বল, তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম, যার পিতার নাম আবদুল্লাহ এবং দাদার নাম আবদুল মোত্তালি, প্রপিতামহের নাম হাশিম। আর হাশিম কোরাইশ গোত্রের, কোরাইশগন আরব, যারা ইব্রাহীম আলাইহিস্‌ সালাম এর পুত্র ইসমাঈলের বংশধর।

দ্বীন এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি
দ্বীন এর বুনিয়াদ বা ভিত্তি দুটি বিষয়ের উপর :

এক : আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে একমাত্র তাঁরই ইবাদতের নির্দেশ দেয়া, এ ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করা, যারা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা, এবং যারা তা ত্যাগ করে তাদেরকে কাফির মনে করা।

দুই : আল্লাহর ইবাদাতে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে সাবধান করা, এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা, এবং যারা তাঁর সাথে শির্ক করে তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা এবং যারা শির্ক করবে তাদেরকে কাফির মনে করা।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কালেমা তাইয়্যেবা) মেনে চলার শর্তাবলী
এক : কালেমা তাইয়্যেবার অর্থ জানা।

অর্থাৎ এ কালেমার দুটো অংশ রয়েছে তা পরিপূর্ণভাবে জানা।

সে দুটো অংশ হলো:

1. কোন হক্ক মা’বুদ নেই

2. আল্লাহ ছাড়া (অর্থাৎ তিনিই শুধু মা’বুদ)

দুই : কালেমা তাইয়্যেবার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

অর্থাৎ সর্ব প্রকার সন্দেহ ও সংশয়মুক্ত পরিপূর্ণ বিশ্বাস থাকা ।

তিন : কালেমার উপর এমন একাগ্রতা ও নিষ্ঠা রাখা, যা সর্বপ্রকার শিরকের পরিপন্থী।

চার : কালেমাকে মনে প্রাণে সত্য বলে জানা, যাতে কোন প্রকার মিথ্যা বা কপটতা না থাকে।

পাঁচ : এ কালেমার প্রতি ভালবাসা পোষণ এবং কালেমার অর্থকে মনে প্রাণে মেনে নেয়া ও তাতে খুশী হওয়া।

ছয় : এই কালেমার অর্পিত দায়িত্ব সমূহ মেনে নেয়া অর্থাৎ এই কালেমা কর্তৃক আরোপিত ওয়াজিব কাজসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই সন্তুষ্টির নিমিত্তে সমাধান করা।

সাত : মনে-প্রাণে এই কালেমাকে গ্রহণ করা যাতে কখনো বিরোধিতা করা না হয়।

কালেমা তাইয়্যেবার যে সমস্ত শর্ত বর্ণিত হলো, তার সমর্থনে কোরআন ও হাদীস থেকে দলিল প্রমাণাদি:
প্রথম শর্ত: কালেমার অর্থ জানা। এর দলিল : আল্লাহর বাণী:

﴿فَاعْلَمْ أَنَّهُ لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ﴾

‘জেনে রাখুন নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মা‘বুদ নেই।” [সূরা মুহাম্মাদঃ ১৯] আল্লাহ আরো বলেন:

﴿وَلا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنْ شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾

“তবে যারা হক্ক (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু) এর সাক্ষ্য দিবে এমনভাবে যে, তারা তা জেনে শুনেই দিচ্ছে অর্থাৎ তারা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।” [সূরা আয যুখরুফ: ৮৬]

এখানে জেনে শুনে সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ হলো তারা মুখে যা উচ্চারণ করছে তাদের অন্তর তা সম্যকভাবে জানে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা যায় যে সে জানে আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক উপাস্য নেই সে জান্নাতে যাবে।” [মুসলিম(১/৫৫) হাদীস নং (২৬)]

দ্বিতীয় শর্ত : কালেমার উপর বিশ্বাসী হওয়া। এর প্রমাণাদি:

আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “নিশ্চয়ই মুমীন ওরাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে , অত:পর এতে কোন সন্দেহ-সংশয়ে পড়েনি এবং তাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। তারাই তো সত্যবাদী।” [সুরা আল হুজরাতঃ (১৫)]

এ আয়াতে আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর ঈমান যথাযথভাবে হওয়ার জন্য সন্দেহ সংশয়মুক্ত হওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে, অর্থাৎ তারা সন্দেহ করেনি, কিন্তু যে সন্দেহ করবে সে মুনাফিক, ভন্ড (কপট বিশ্বাসী)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক মা’বুদ বা উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রাসূল। যে বান্দা এ দুটো বিষয়ে সন্দেহ - সংশয় মুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [মুসলিম (১/৫৬), হাদীস নং (২৭০)]

আর এক বর্ণনায় এসেছে : “কোন ব্যক্তি এ দু'টো নিয়ে সন্দেহহীন অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাতে হাজির হবে জান্নাতে যাওয়ার পথে তার কোন বাধা থাকবেনা।” [মুসলিম (১/৫৬), হাদীস নং (২৭০)]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে অপর এক হাদীসের বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছিলেনঃ “তুমি এ বাগানের পিছনে এমন যাকেই পাও, যে মনের পরিপূর্ণ বিশ্বাস এর সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সঠিক মা’বুদ নেই তাকেই জান্নাতের শুসংবাদ প্রদান করবে।” [মুসলিম (১/৫৯)]

তৃতীয় শর্ত : এ কালেমাকে ইখলাস বা নিষ্ঠা সহকারে স্বীকার করা।

এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“তবে জেনে রাখ দ্বীন খালেছ সহকারে বা নিষ্ঠা সহকারে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই।” [সূরা আয্‌যুমারঃ ৩]

আল্লাহ আরো বলেন: “তাদেরকে এ নির্দেশই শুধূ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে আল্লাহর জন্যই খালেস করে সম্পূর্ণরুপে একনিষ্ঠ ও একমুখী হয়ে তারই ইবাদাত করবে।” [সূরা আল বাইয়েনাহঃ ৫]

হাদীস শরীফে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার সুপারিশ দ্বারা ঐ ব্যক্তিই বেশী সৌভাগ্যবান হবে যে অন্তর থেকে একনিষ্ঠভাবে বলেছে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার উপাস্য নেই।” [বুখারী , হাদীস নং ৯৯]

অপর এক সহীহ হাদীসে সাহাবী উৎবান বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : “যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ( لا إله إلا الله) বা আল্লাহ ছাড়া হক্ক কোন মা’বুদ নেই বলেছে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।” [মুসলিম ১/৪৫৬, হাদীস নং- ২৬৩, বুখারী, হাদীস নং ৪২৫]

ইমাম নাসায়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত “দিন রাত্রির জিক্‌র” নামক গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি মনের নিষ্ঠা সহকারে এবং মুখে সত্য জেনে নিম্নোক্ত কলেমা সমুহ বলবে আল্লাহ সেগুলির জন্য আকাশকে বিদীর্ণ করবেন যাতে তার দ্বারা জমীনের মাঝে কে এই কালেমাগুলি বলেছে তার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। আর যার দিকে আল্লাহর নজর পড়বে তার প্রার্থিত ও কাংখিত বস্তু তাকে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। সে কালেমাগুলি হলো:

)لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير(

অর্থাৎ : “শুধুমাত্র আল্লাহ ছাড়া হক্ক কোন মা’বুদ নেই, তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই, তার জন্যই সমস্ত রাজত্ব বা একচ্ছত্র মালিকানা, তার জন্যই সমস্ত প্রশংসা আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান”। [নাসায়ী , আমালুল ইয়াওমে ওয়াল্লাইলা, হাদীস নং- ২৮]

চতুর্থ শর্ত : কলেমাকে মনে প্রাণে সত্য বলে জানা। এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “আলিফ-লাম-মীম, মানুষ কি ধারণা করেছে যে, ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে আর তাদের পরীক্ষা করা হবেনা? আমি তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি যাতে আল্লাহর সাথে যারা সত্য বলেছে তাদেরকে স্পষ্ট করে দেন এবং যারা মিথ্যা বলেছে তাদেরকেও স্পষ্ট করে দেন।” [সূরা আলআনকাবুতঃ ১-৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন : “মানুষের মাঝে কেউ কেউ বলে আমরা আল্লাহ এবং পরকালের উপর ঈমান এনেছি, অথচ তারা ঈমানদার নয়, তারা (তাদের ধারণামতে) আল্লাহ ও ঈমানদারদের সাথে প্রতারণা করছে, অথচ (তারা জানেনা) তারা কেবল তাদের আত্মাকেই প্রতারিত করছে কিন্তু তারা তা বুঝতেই পারছেনা। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি, ফলে আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর মিথ্যা বলার কারণে তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।” [সূরা আল বাকারাঃ ৮-১০]

তেমনিভাবে হাদীস শরীফে মুআ’য বিন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে কোন লোক মন থেকে সত্য জেনে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত হক্ক কোন মা’বুদ নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করেছেন।” [বুখারী , হাদীস নং- ১২৮, মুসলিমঃ ১/৬১]

পঞ্চম শর্ত : এ কালেমাকে মনে প্রাণে ভালবাসা।

এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “কোন কোন লোক আল্লাহ ছাড়া তার অনেক সমকক্ষ ও অংশীদার গ্রহণ করে তাদেরকে আল্লাহর মত ভালবাসে, আর যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে অত্যন্ত বেশী ভালবাসে” । [সূরা আল বাকারাঃ ১৬৫]

আল্লাহ আরো বলেন : “হে ঈমানদারগণ তোমাদের থেকে যদি কেহ তার দ্বীনকে পরিত্যাগ করে তবে আল্লাহ এমন এক গোষ্ঠীকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করে আনবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসেন, যারা মুমীনদের প্রতি নরম- দয়াপরবশ, কাফেরদের উপর কঠোরতা অবলম্বনকারী; তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করেনা।” [সূরা আল মায়েদাঃ ৫৪]

তেমনিভাবে হাদীস শরীফে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যার মধ্যে তিনটি বস্তুর সমাহার ঘটেছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে: (এক) তার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মহব্বত বা ভালবাসা অন্য সবকিছু থেকে বেশী হবে। (দুই) কোন লোককে শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালবাসবে। (তিন) কুফরী থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দেয়ার পর সে কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করবে।” [বুখারী, হাদীস নং- ৪৩, মুসলিমঃ ১/৬৬]

ষষ্ট শর্ত: কালেমার হকসমুহ মনে প্রাণে মেনে নেয়া

এর দলীল: আল্লাহর বাণী: “আর তোমরা তোমাদের প্রভুর দিকে ফিরে যাও, এবং তাঁর কাছে আত্নসমর্পণ করো।” [সূরা আয্‌যুমারঃ ৫৪]

আল্লাহ আরো বলেন: “আর তারচেয়ে কার দ্বীন বেশী সুন্দর যে আল্লাহর জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছে, এমতাবস্থায় যে, সে মুহসীন”, [সূরা আন্‌নিসাঃ ১২৫] মুহসীন অর্থ : নেককার, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছে।

আরও বলেন: “আর যে নিজেকে শুধুমাত্র আল্লাহর দিকেই নিবদ্ধ করে আত্নসমর্পন করেছে আর সে মুহসীন”, অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছে “সে মজবুত রশিকে আঁকড়ে ধরেছে” [ সূরা লুকমানঃ ২২] অর্থাৎ : لا إله إلا الله বা আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মাবুদ নেই এ কালেমাকেই সে গ্রহণ করেছে।

আরও বলেন: “তারা যা বলছে তা নয়, তোমার প্রভূর শপথ করে বলছি, তারা কক্ষনো ঈমানদার হবেনা যতক্ষণ আপনাকে তাদের মধ্যকার ঝগড়ার নিষ্পত্তিকারক (বিচারক) হিসাবে না মানবে, অত:পর আপনার বিচার- ফয়সালা গ্রহণ করে নিতে তাদের অন্তরে কোন প্রকার অভিযোগ থাকবেনা এবং তারা তা সম্পূর্ন কায়মনোবাক্যে নির্দ্বিধায় মেনে নিবে।” [সূরা আন্‌নিসাঃ ৬৫]

অনুরুপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমাদের মাঝে কেউই ঐ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন তার প্রবৃত্তি আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসারী হবে।” [হাদীস খানি খতিব বাগদাদী তার তারিখে বাগদাদের ৪/৩৬৯, এবং বাগাভী তার সারহুছছুন্নার ১০৪ নং এ বর্ণনা করেছেন। হাদীসটির সনদ শুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে।] আর এটাই পূর্ণ আনুগত্য ও তার শেষ সীমা।

সপ্তম শর্ত: কালেমাকে গ্রহণ করা।

এর দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর এমনিভাবে যখনই আপনার পূর্বে আমি কোন জনপদে ভয় প্রদর্শনকারী (রাসূল বা নবী) প্রেরণ করেছি তখনি তাদের মধ্যকার আয়েসী বিত্তশালী লোকেরা বলেছে : আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে একটি ব্যবস্থায় পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করবো। (ভয় প্রদর্শনকারী) বলল: আমি যদি তোমাদের কাছে বাপ-দাদাদেরকে যার উপর পেয়েছ তার থেকে অধিক সঠিক বা বেশী হেদায়েত নিয়ে এসে থাকি তারপরও? (তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার অনুকরণ করবে?) তারা বলল: তোমরা যা নিয়ে এসেছ আমরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছি, ফলে আমি (আল্লাহ) তাদের থেকে (এ কুফরীর) প্রতিশোধ নেই, সুতরাং আপনি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের পরিণামফল কেমন হয়েছে দেখে নিন।” [সূরা আযযুখরুফঃ ২৩-২৫] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “নিশ্চয়ই তারা অযথা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতো যখন তাদেরকে বলা হত যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ক মা’বুদ নেই, এবং বলতো: আমরা কি পাগল কবির কথা শুনে আমাদের উপাস্য দেবতাগুলিকে ত্যাগ করবো?” [সূরা আস্‌সাফ্‌ফাতঃ ৩৫-৩৭]

অনুরুপভাবে হাদীসে শরীফে আবু মুসা আশআ’রী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান বিজ্ঞান ও হেদায়েত দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হচ্ছে এমন মুষলধারার বৃষ্টির মতো যা ভূমিতে এসে পড়েছে, ফলে এর কিছু অংশ এমন উর্বর পরিষ্কার ভূমিতে পড়েছে যে ভূমি পানি চুষে নিতে সক্ষম, ফলে তা পানি গ্রহণ করেছে, এবং তা দ্বারা ফসল ও তৃণলতার উৎপত্তি হয়েছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে গর্তওয়ালা ভূমিতে (যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম) সুতরাং তা পানি সংরক্ষন করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে আল্লাহ এর দ্বারা মানুষের উপকার করেছেন তারা তা পান করেছে, ভূমি সিক্ত করিয়েছে এবং ফসলাদি উৎপন্ন করতে পেরেছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে এমন অনুর্বর সমতল ভূমিতে যাতে পানি আটকে থাকেনা, ফলে তাতে পানি আটকা পড়েনি, ফসলও হয়নি। ঠিক এটাই হলো ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আল্লাহর দ্বীনকে বুঝতে পেরেছে এবং আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হতে পেরেছে, ফলে সে নিজে জেনেছে এবং অপরকে জানিয়েছে। (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর ভূমি)। এবং ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এই হিদায়েত এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়নি, ফলে আল্লাহ যে হিদায়েত নিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তা গ্রহণ করেনি। (তৃতীয় শ্রেনীর ভূমি) ।” [সহীহ বুখারী, ১/১৭৫ হাদীস নং ৭৯, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২২৮২]

Friday 23 March 2018

রাসূলুল্লাহ (ছা.) এর মুজিজা _গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

রাসূলুল্লাহ (ছা.) এর মুজিজা _গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রা.) বলতেন, আল্লাহ্র কসম, যিনি ছাড়া কোন (হক্ব) ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদা আমি তাঁদের (রাসূলুল্লাহ (ছা.) এবং ছাহাবীদের) রাস্তায় বসেছিলাম, যেখান দিয়ে তারা বের হ’তেন। আবূ বকর (রা.) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর (রা.) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। অতঃপর আবুল কাসেম [অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (ছা.)] আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, ‘হে আবূ হির (রা.)! আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্র রাসূল (ছা.)! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন,‘তুমি আমার সঙ্গে চল’! অতঃপর তিনি চললেন, আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম।

তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুধ কোথা থেকে এসেছে’? বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, ‘অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা আপনার জন্য হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছে’। তিনি বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা.)’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘আহলে ছুফ্ফা’র লোকদেরকে গিয়ে এখানে ডেকে আন’। (রাবী বলেন) ‘আহলে ছুফ্ফা’ ছিল ইসলামের মেহমান। তাদের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। আর এমন কেউ ছিল না, যার উপর ভরসা করা যায়। যখন কোন ছাদাক্বার মাল রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিকট আসত, তখন তিনি তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোন হাদিয়া (উপঢৌকন) আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাদেরকে শরীক করতেন এবং নিজে এক অংশ গ্রহণ করতেন।

(আবু হুরায়রা বলেন) রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর আদেশ শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা ‘আহলে ছুফ্ফা’র কি হবে? আমিই এ দুধ পানের বেশী হকদার। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাদেরকে দুধ পান করতে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছা.)-এর আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার কোন গত্যন্তর ছিল না।

সুতরাং আমি ‘আহলে ছুফ্ফার নিকট গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম’। তারা এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাযির হে আল্লাহ্র রাসূল! রাসূলুল্লাহ (ছা.) আমাকে বললেন, এটি তাদেরকে দাও। আমি (দুধের) পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, সে পান করে পরিতৃপ্ত হ’ল এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিল। অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, সেও তৃপ্তি সহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিল। তৃতীয় জনকে দিলে সেও তাই করল। এভাবে আমি (সর্বশেষে) রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিকট পৌঁছলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হ’ল। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘এখন আমি আর তুমি বাকী’। আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহ্র রাসূল’। তিনি বললেন, ‘বসে পড় এবং পান কর’। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘পান কর’। আমি পান করলাম। তিনি একথা বলতেই থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হ’লাম যে, ‘আল্লাহ্র শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই’। তিনি বললেন, ‘তাহলে আমাকে দাও’। আমি তাঁকে দিলে তিনি আল্লাহ্র প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকী দুধ পান করলেন।

গীবতের ভয়াবহতা _গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

গীবতের ভয়াবহতা _গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আরবরা সফরে গেলে একে অপরের খিদমত করত। আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সাথে একজন লোক ছিল যে তাদের খিদমত করত। তারা ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর জাগ্রত হলে লক্ষ করলেন যে, সে তাদের জন্য খাবার প্রস্ত্তত করেনি (বরং ঘুমিয়ে আছে)। ফলে একজন তার অপর সাথীকে বললেন, এতো তোমাদের নবী (ছাঃ)-এর ন্যায় ঘুমায়। অন্য বর্ণনায় আছে তোমাদের বাড়িতে ঘুমানোর ন্যায় ঘুমায় (অর্থাৎ অধিক ঘুমায় এমন ব্যক্তি)।

অতঃপর তারা তাকে জাগিয়ে বললেন, তুমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে বল যে, আবুবকর ও ওমর (রাঃ) আপনাকে সালাম প্রদান করেছেন এবং আপনার নিকট তরকারী চেয়েছেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, যাও, তাদেরকে আমার সালাম প্রদান করে বলবে যে, তারা তরকারী খেয়ে নিয়েছে। (একথা শুনে) তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট গমন করে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমরা আপনার নিকট তরকারী চাইতে ওকে পাঠালাম। অথচ আপনি তাকে বলেছেন যে তারা তরকারী খেয়েছে। আমরা কি তরকারী খেয়েছি? তিনি (ছাঃ) বললেন, তোমাদের ভাইয়ের গোস্ত দিয়ে। যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোস্ত দেখতে পাচ্ছি। তারা বললেন, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি (ছাঃ) বললেন, না বরং সেই তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬০৮)।

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বললাম, ‘আপনার জন্য ছাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট’। কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ছাফিয়া বেঁটে। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহ’লে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে’।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি করলাম। তিনি বললেন, ‘কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্ত হই, এটা আমি আদৌ পসন্দ করি ন’ (আবুদাউদ হা/৪৮৭৭, সনদ ছহীহ)।

কায়স বলেন, আমর ইবনুল আছ (রাঃ) তার কতিপয় সঙ্গী-সাথীসহ ভ্রমণ করছিলেন। তিনি একটি মৃত খচ্চরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যা ফুলে উঠেছিল। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! কোন ব্যক্তি যদি পেট পুরেও এটা খায়, তবুও তা কোন মুসলমানের গোশত খাওয়ার চেয়ে উত্তম’ (আদাবুল মুফরাদ হা/৭৩৬, সনদ ছহীহ)।

দাজ্জালের আগমন নিয়ে রাসূল (ছাঃ) যা বলে গেছেন

দাজ্জালের আগমন নিয়ে রাসূল (ছাঃ) যা বলে গেছেন

এ নশ্বর পৃথিবীর যেদিন ধ্বংস হবে, সেদিনের নাম ক্বিয়ামত। ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিনক্ষণ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। তবে এর কিছু পূর্বলক্ষণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে দাজ্জালের আগমন অন্যতম। এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীছ।-
ফাতিমা বিনতে কায়েস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর ঘোষককে এ ঘোষণা দিতে শুনলাম যে, ‘ছালাতের জন্য মসজিদে যাও’। সুতরাং আমি মসজিদে গেলাম এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম। ছালাত শেষে তিনি মিম্বারে উঠে বসলেন এবং মৃদু হেসে বললেন, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ ছালাতের স্থানে বসে থাক। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন একত্রিত করেছি? ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)ই অধিক জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদেরকে কিছু দেওয়ার জন্য বা কোন ভয়-ভীতি প্রদর্শনের জন্য সমবেত করিনি। বরং তামীম দারীর একটি ঘটনা তোমাদের শুনানোর জন্য তোমাদেরকে একত্রিত করেছি। তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে আমাকে এমন একটি ঘটনা শুনিয়েছে, তা ঐ কথার সাথে মিল রাখে, যা দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে শুনিয়েছি। সে বলল, একদা সে ‘লাখাম’ ও ‘জুজাম’ গোত্রের ত্রিশজন লোকের সঙ্গে একটি সামুদ্রিক নৌকায় সফরে বের হয়েছিল। সাগরের তরঙ্গ তাদেরকে দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত এদিক সেদিক ঘুরাতে থাকে। অবশেষে একদিন সূর্যাস্তের সময় একটি দ্বীপের কাছে গিয়ে পৌঁছল। অতঃপর তারা উক্ত বড় নৌকার গায়ের সাথে বাঁধা ছোট ছোট নৌকা যোগে দ্বীপটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করল এবং সেখানে এমন একটি প্রাণীর সাক্ষাত পেল, যার সারা শরীর বড় বড় লোমে আবৃত। অধিক পশমের কারণে তার মুখ ও পিছন বুঝা যাচ্ছিল না। তখন তারা তাকে লক্ষ্য করে বলল, তোর অমঙ্গল হোক, তুই কে? সে বলল, আমি জাসসাস বা গুপ্ত সংবাদ অন্বেষণকারী। তোমরা ঐ ঘরে আবদ্ধ লোকটির কাছে যাও, সে তোমাদের সংবাদ জানার প্রত্যাশী। তামীম দারী বলেন, উক্ত প্রাণীর কাছে লোকটির কথা শুনে আমাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার হ’ল যে, সে শয়তান হ’তে পারে। তখন আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং সে ঘরে প্রবেশ করলাম। সেখানে এমন একটি প্রকান্ড দেহ বিশিষ্ট মানুষ দেখতে পেলাম, যা ইতিপূর্বে কোনদিন দেখিনি। সে খুব শক্তভাবে বাঁধা অবস্থায় ছিল। তার হাত ঘাড়ের সাথে এবং হাঁটুদ্বয় নীচের উভয় গিটের সাথে লোহার শিকল দ্বারা একত্রে বাঁধা ছিল। আমরা তাকে বললাম, তোর অমঙ্গল হোক! তুই কে? সে বলল, নিশ্চয়ই তোমরা আমার সম্পর্কে জানতে পারবে, আমি তা গোপন করব না। তবে তোমরা আমাকে প্রথমে বল তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা আরবের লোক। আমরা সমুদ্রে একটি নৌকায় আরোহী ছিলাম। দীর্ঘ এক মাস সাগরের ঢেউ আমাদেরকে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে এখানে এনে পৌঁছিয়েছে। তারপর আমরা অত্র দ্বীপে প্রবেশ করলাম। এরপর ঘনপশমে সারা দেহ আবৃত একটি প্রাণীর সাথে আমাদের সাক্ষাত হ’ল। সে বলল, আমি গুপ্ত সংবাদ অন্বেষণকারী। সে আমাদেরকে এ ঘরে আসতে বললে আমরা দ্রুত তোমার নিকট এসে উপস্থিত হ’লাম। সে বলল, আচ্ছা তোমরা আমাকে বল দেখি, বায়সান এলাকার খেজুর গাছে ফল আসে কি? (বায়সান হেজাযের একটি জায়গার নাম)। আমরা বললাম, হ্যাঁ আসে। সে বলল, অদূর ভবিষ্যতে সে গাছে আর ফল ধরবে না। তারপর সে বলল, আচ্ছা বল দেখি, তাবারিয়া নামক বিলে পানি আছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ তাতে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। সে বলল, অচিরেই তার পানি শেষ হয়ে যাবে। তারপর সে বলল, আচ্ছা বল দেখি, যোগার নামক ঝর্ণায় পানি আছে কি এবং সেখানকার অধিবাসীরা সে ঝরণার পানি দ্বারা কি জমি চাষ করে? আমরা বললাম, হ্যাঁ তাতে প্রচুর পানি আছে এবং সেখানকার লোকেরা পানি দ্বারা জমি চাষাবাদ করে। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বল দেখি, নিরক্ষর নবীর সংবাদ কি? আমরা বললাম, তিনি এখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় অবস্থান করছেন। সে জিজ্ঞেস করল, বল দেখি আরবেরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছিল? আমরা বললাম, হ্যাঁ করেছে। সে জিজ্ঞেস করল, তিনি তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? আমরা বললাম, তিনি আশপাশের আরবদের প্রতি জয়ী হয়েছেন এবং তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেছে। এসব শুনে সে বলল, তোমরা জেনে রাখ! তাঁর আনুগত্য করা তাদের জন্য মঙ্গলজনক। আচ্ছা এবার আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি- আমি দাজ্জাল। অদূর ভবিষ্যতে আমাকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি বের হয়ে যমীনে বিচরণ করব, মক্কা মদীনা ব্যতীত। চল্লিশ দিনের মধ্যে পৃথিবীর সব স্থান বিচরণ করব। এ দু’স্থানে আমার জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখনই আমি তার কোন একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারী হাতে নিয়ে আমাকে প্রবেশ করা হ’তে বাধা প্রদান করবে। বস্ত্তত তার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতা পাহারা রত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত বর্ণনা করে রাসূল আপন লাঠি দ্বারা মিম্বারে ঠোকা দিয়ে তিনবার বললেন, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা। তারপর তিনি বললেন, বল দেখি ইতিপূর্বে আমি কি তোমাদেরকে এ হাদীছটি বর্ণনা করিনি? লোকেরা বলল, জি হ্যাঁ। তারপর তিনি বললেন, দাজ্জাল সিরিয়ার কোন এক সাগরে অথবা ইয়ামনের কোন এক সাগরে আছে। পরে বললেন, বরং সে পূর্ব দিক হ’তে আগমন করবে। এই বলে তিনি হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করলেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৪৮)।
উপরোক্ত হাদীছের ন্যায় নিম্নোক্ত হাদীছটিতেও দাজ্জালের পৃথিবীতে অবস্থান, ঈসা (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন ও অবস্থান সহ ক্বিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে।-
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, দাজ্জাল বের হবে এবং চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমি অবগত নই যে, রাসূল (ছাঃ) চল্লিশ দিন বললেন, না চল্লিশ মাস বললেন, না চল্লিশ বছর বললেন। তারপর আল্লাহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন। দেখতে তিনি উরওয়া ইবনে মাস‘ঊদের মত। তিনি দাজ্জালের খোঁজ করবেন এবং তিনি তাকে হত্যা করবেন। ঈসা (আঃ) ৭ বছর এ যমীনে অবস্থান করবেন। সে সময় মানুষের মধ্যে এমন শান্তি বিরাজ করবে যে, দু’জনের মধ্যেও কোন শত্রুতা থাকবে না। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা সিরিয়ার দিক হ’তে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। সে বাতাস ভূপৃষ্ঠে এমন একজন লোককেও জীবিত রাখবে না, যার অন্তরে রেণু-কণা পরিমাণ নেকী বা ঈমান থাকবে। অর্থাৎ তোমাদের কেউ যদি পাহাড়ের মধ্যে আত্মগোপন করে তবুও সেখানে এ বাতাস প্রবেশ করবে এবং তাকে মেরে ফেলবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তারপর কেবল মাত্র নিকৃষ্ট ফাসেক ও বদকার লোকগুলি অবশিষ্ট থাকবে। তারা ব্যভিচারে পাখিদের ন্যায় দ্রুতগামী হবে এবং খুনখারাবীতে হিংস্র প্রাণীর ন্যায় পাষাণ হবে। ভাল-মন্দ তারতম্য করার কোন যোগ্যতা তাদের থাকবে না। তখন শয়তান একটি আকৃতি ধারণ করে তাদের নিকট আসবে এবং বলবে তোমাদের কি লজ্জাবোধ হয় না? তখন লোকেরা বলবে আচ্ছা তুমিই বল, আমাদের কি করা উচিত? তখন শয়তান তাদেরকে মূর্তিপূজার আদেশ দিবে। এ অবস্থায় তারা অতি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে ও ভোগবিলাসে জীবন যাপন করতে থাকবে। অতঃপর সিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তিই উক্ত ফুঁক শুনবে, সে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এদিক সেদিক মাথা ঘুরাতে থাকবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, সর্ব প্রথম উক্ত আওয়ায সে ব্যক্তিই শুনতে পাবে যে তার উটের জন্য পানির চৌবাচ্চা মেরামত কাজে রত। তখন সে ভীত হয়ে সেখানেই মৃত্যুবরণ করবে এবং তার সাথে সাথে অন্যান্য লোকও মারা যাবে। অতঃপর আল্লাহ্ কুয়াশার ন্যায় খুব হালকা ধরনের বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এতে ঐ সমস্ত দেহগুলি সজীব হয়ে উঠবে, যেগুলি কবরের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর দ্বিতীয়বার সিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সমস্ত লোক উঠে দাঁড়াবে। এরপর ঘোষণা দেওয়া হবে, হে লোক সকল! তোমরা দ্রুত তোমাদের প্রতিপালোকের দিকে ছুটে আস। ফেরেশতাদের আদেশ দেওয়া হবে তাদেরকে এখানে থামিয়ে রাখ, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতঃপর ফেরেশ্তাদের বলা হবে, ঐ সমস্ত লোকদের বের কর, যারা জাহান্নামের উপযোগী হয়েছে। তখন ফেরেশতাগণ বলবেন, কতজন হ’তে কতজন বের করব? বলা হবে, প্রত্যেক হাযার হ’তে নয়শত নিরানববই জনকে জাহান্নামের জন্য বের কর। এ পর্যন্ত বলার পর রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা সেই দিন যেদিন সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, يَوْمَ يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيْبًا ‘সেদিন শিশুদেরকে বৃদ্ধ করে দেওয়া হবে’ (মুয্যাম্মিল ১৭)। অর্থাৎ সেদিনের বিভীষিকায় শিশুও বৃদ্ধ হয়ে যাবে। সেদিন হবে খুব সংকটময়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৮৬)।
ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, এ সত্যকে মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে। আর তার জন্য যথাসাধ্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে হবে এবং তার ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে আমলে ছালেহ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন!

সৎ লোকের দোয়া_গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

সৎ লোকের দোয়া_গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

এ পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে প্রেরণ করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। কিন্তু মানুষ তাদের কর্তব্য ভুলে গিয়ে বিভিন্ন অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত হয়। এরূপ মানুষ আল্লাহর নিকট ঘৃনিত এবং জনসমাজেও ধিকৃত। তবে যারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে, তাঁর অনুগত থেকে ইবাদত-বন্দেগী করে, আল্লাহ তাদের ভালবাসেন, তাদের যেকোন দো‘আ কবুল করেন। এ সম্পর্কেই নিম্নের হাদীছ।-
উসায়র ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তাকে ইবনু জাবিরও বলা হয়, তিনি বলেন, ইয়েমেনের বসবাসকারীদের পক্ষ থেকে ওমর (রাঃ)-এর নিকট সাহায্যকারী দল আসলে তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করতেন, তোমাদের মাঝে উয়াইস ইবনু আমির আছে কি? অবশেষে (একদিন) উয়াইস (রাঃ) এসে গেলেন। তাকে তিনি (ওমর) প্রশ্ন করলেন, আপনি কি উয়াইস ইবনু আমির? সে বলল হ্যাঁ। ওমর (রাঃ) আবার বললেন, ‘মুরাদ’ সম্প্রদায়ের উপগোত্র ‘কারনের’ লোক? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনার কি কুষ্ঠরোগ হয়েছিল, তা হ’তে সুস্থ হয়েছেন এবং মাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকী আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আপনার মা জীবিত আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (ওমর) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘ইয়ামানের সহযোগী দলের সাথে উয়াইস ইবনু আমির নামক এক লোক তোমাদের নিকট আসবে। সে ‘মুরাদ’ জাতির উপজাতি ‘কারনের’ লোক। তার কুষ্ঠরোগ হবে এবং তা হ’তে সে মুক্তি পাবে, শুধুমাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তার মা বেঁচে আছে, সে তার মায়ের খুবই অনুগত। সে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে তা আল্লাহ তা‘আলা পূরণ করে দেন। তুমি যদি তাকে দিয়ে তোমার গুনাহ মাফের জন্য দো‘আ করাবার সুযোগ পাও তাহ’লে তাই করবে’। ওমর (রাঃ) বলেন, কাজেই আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য আপনি দো‘আ করুন। অতএব তিনি (উয়াইস) ওমরের অপরাধের ক্ষমা চেয়ে দো‘আ করলেন। ওমর (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি কোথায় যেতে চান? তিনি বললেন, কূফা (যাবার ইচ্ছা আছে)। তিনি (ওমর) বলেন, আমি সেখানকার গভর্ণরকে আপনার (সাহায্যের) জন্য লিখে দেই? তিনি বললেন, আমার নিকট গরীব-মিসকীনদের মাঝে বসবাস করাই বেশী পসন্দীয়। পরের বছর কূফার এক নেতৃস্থানীয় লোক হজ্জে এলো। তার সাথে ওমরের দেখা হ’লে তিনি উয়াইস সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করলেন। সে বলল, আমি তাকে এরকম অবস্থায় দেখে এসেছি যে, তার ঘরটা অত্যন্ত জীর্ণ অবস্থায় আছে এবং তার জীবন-যাপনের উপকরণসমূহ খুবই নগণ্য। ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘উয়াইস ইবনু আমির নামক এক লোক ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সাথে তোমাদের নিকট আসবে। সে ‘মুরাদ’ জাতির উপজাতি ‘কারন’ বংশীয় লোক। তার কুষ্ঠ রোগ হবে এবং তা থেকে সে মুক্তি পাবে, শুধুমাত্র এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তার মা বেঁচে আছে এবং সে তার মায়ের খুবই অনুগত। সে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) কোন কিছুর শপথ করলে তা আল্লাহ পূরণ করে দেন। তুমি যদি তোমার গুনাহ মাফের জন্য তাকে দিয়ে দো‘আ করানোর সুযোগ পাও, তাহ’লে তাই করবে’। লোকটি ফিরে এসে উয়াইসের নিকট গিয়ে বলল, আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য আপনি দো‘আ করুন। তিনি (উয়াইস) বললেন, এইমাত্র মঙ্গলময় সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন; বরং আপনি আমার অপরাধ ক্ষমার জন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি কি ওমরের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সে বলল, হ্যাঁ। তার জন্য উয়াইস দো‘আ করলেন। উয়াইসের মর্যাদা সম্পর্কে লোকেরা সচেতন হ’লে সেখান থেকে উয়াইস অন্য স্থানে চলে গেলেন। হাদীছটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
মুসলিমের আরেক বর্ণনায় উসায়র ইবনু জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, ওমর (রাঃ)-এর নিকট কূফার অধিবাসীরা একটি সাহায্যকারী দল পাঠায়। দলের এক লোক উয়াইসকে বিদ্রূপ করত। ওমর (রাঃ) বললেন, এখানে ‘কারন’ বংশীয় কেউ আছে কি? ঐ ব্যক্তিটি উঠে আসলে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ইয়েমেন থেকে উয়াইস নামে এক লোক তোমার নিকট আসবে। সে তার মাকে ইয়ামানে একা রেখে আসবে। তার কুষ্ঠরোগ হবে। সে আল্লাহর নিকট দো‘আ করবে, আল্লাহ তার রোগমুক্তি দান করবেন, শুধুমাত্র এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ছাড়া। তোমাদের মধ্যে যে কেউ তার দেখা পেলে, তাকে দিয়ে সে যেন তার গুনাহ মাফের জন্য দো‘আ করায়’।
মুসলিমের আরেক বর্ণনায় ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘পরবর্তীদের (তাবিঈ) মধ্যে উয়াইস নামে এক সৎ লোক হবে। তার মা বেঁচে আছে। তার শরীরে কুষ্ঠের চিহ্ন থাকবে। তার নিকট গিয়ে নিজের গুনাহ মাফের জন্য তাকে দিয়ে প্রার্থনা করাও’ (মুসলিম হা/২৫৪২/২২৫)।
পরিশেষে বলব, আল্লাহ আমাদেরকে উয়াইস ইবনু আমিরের মত সৎ কর্মশীল বান্দা হওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন!

Thursday 22 March 2018

অন‍্যের উপর নিজেকে প্রাধান্য দেওয়া গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

অন‍্যের উপর নিজেকে প্রাধান্য দেওয়া গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একজন লোক রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমাকে ক্ষুধা পেয়েছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি ক্ষুধায় কাতর। তিনি তার স্ত্রীদের নিকট (খাবারের সন্ধানে) লোক পাঠালেন। তারা বলল, ঐ সত্তার কসম যিনি আপনাকে সত্য সহ পাঠিয়েছেন। আমাদের নিকট পানি ব্যতীত অন্য কোন খাদ্য নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে, যে এর মেহমানদারী করবে? আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন। তখন আনছারী ছাহাবী (আবু তালহা) বললেন, আমি করব। অতঃপর তিনি তাকে সাথে নিয়ে তার স্ত্রীর নিকট গেলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহর মেহমানকে সম্মান কর। কোন খাদ্য জমা রাখবে না। সে (স্ত্রী) বলল, আল্লাহর কসম! শিশুদের জন্য রাখা খাদ্য ব্যতীত আমাদের নিকট কোন খাদ্য নেই। তিনি বললেন, তোমার খাবার প্রস্ত্তত কর, বাতি জ্বালিয়ে দাও এবং তোমার সন্তানরা যখন রাতের খাবার খেতে চাইবে তখন তাদের ঘুম পাড়িয়ে দিবে। সে খাবার প্রস্ত্তত করল, বাতি জ্বালালো এবং তার শিশুদের ঘুম পাড়িয়ে দিল। অতঃপর সে দাঁড়াল এবং বাতি ঠিক করার ভাব দেখিয়ে তা নিভিয়ে দিল। অতঃপর তারা উভয়ে (অন্ধকারে) খাবার খাচ্ছে বলে তাকে প্রদর্শন করলো। মেহমান খেল এবং তারা উভয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত্রি যাপন করল। অতঃপর সকালে সে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গমন করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, গত রাতে মেহমানের সাথে তোমাদের উভয়ের কর্মকান্ড দেখে আল্লাহ হেসেছেন বা অবাক হয়েছেন এবং নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল করেছেন,وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্থ হ’লেও। যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য হ’তে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম’ (হাশর ৫৯/৯)। (বুখারী হা/৩৭৯৪; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৭৮০২; সিলসিলা ছহীহা হা/৩২৭২)।

মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার ফযীলত :
মালেক ইবনু মারছাদ তার পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু যার (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কোন আমল মানুষকে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ দিবে? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করা। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (ছাঃ)! নিশ্চয় ঈমানের সাথে কোন আমল আছে? তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে যে সম্পদ দান করেছেন তা থেকে দান করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে যদি দরিদ্র হয়, তার নিকট দান করার মত কিছু না থাকে, (তাহ’লে সে কি করবে)? তিনি বললেন, সে সৎ কাজের আদেশ দিবে ও অসৎ কাজ হ’তে নিষেধ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে যদি অপারগ হয়, সৎ কাজের আদেশ প্রদান ও অসৎ কাজ হ’তে নিষেধ করতে অক্ষম হয়? তাহ’লে তার করণীয় সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনি বললেন, তাহ’লে সে মূর্খের জন্য কিছু করবে। আমি বললাম, যদি সে নিজে মূর্খ হয়, কারো জন্য কিছু করতে সক্ষম না হয়। তাহ’লে কি করবে বলে আপনি মনে করেন? তিনি বললেন, অত্যাচারিতকে সাহায্য করবে। আমি বললাম, সে যদি দুর্বল হয়, অত্যাচারিতকে সাহায্য করতে সক্ষম না হয়, তাহলে কি করবে? তখন তিনি বললেন, তুমি কি তাহ’লে তোমার ভাইয়ের জন্য কল্যাণকর কিছু করবে না? তুমি অন্তত মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে ঐটা করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, যে মুসলিম উপরোক্ত কর্মসমূহের কোন একটি করবে, (ক্বিয়ামতের দিন) তার হাত ধরে সেগুলো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে (তাবারাণী, মু‘জামুল কাবীর হা/১৬৫০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬৯)।

রসুলাল্লাহ (স:) এর নিকট এক যুবক _ গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

রসুলাল্লাহ (স:) এর নিকট এক যুবক _ গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, এক তরুণ যুবক রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে যেনা করার অনুমতি দিন। একথা শুনে উপস্থিত লোকজন তার নিকটে এসে তাকে ধমক দিয়ে বলল, থাম! থাম! রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খুব নিকটে এসে বসল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি তোমার মায়ের জন্য এটা (অন্যের সাথে যেনা করা) পসন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! মানুষেরা এটা তাদের মায়েদের জন্য পসন্দ করবে না। তিনি বললেন, তোমার কন্যার জন্য কি তা পসন্দ করবে? সে বলল, না, আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন মানুষ এটা তাদের মেয়েদের জন্য পসন্দ করবে না। তিনি বললেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য এটা পসন্দ করবে? সে বলল, না আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন ব্যক্তিই এটা তাদের বোনদের জন্য পসন্দ করবে না। তিনি বললেন, তাহ’লে তোমার ফুফুর জন্য কি এটা পসন্দ করবে? সে বলল, না আল্লাহর কসম! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন পুরুষ এটা তাদের ফুফুদের জন্য পসন্দ করবে না।

তিনি বললেন, তবে তোমার খালার জন্য কি এটা পসন্দ করবে? সে বলল, না আল্লাহর কসম। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন! কোন মানুষ এটা তাদের খালাদের জন্য পসন্দ করবে না। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি তার ওপর হাত রেখে দো‘আ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তার গুনাহ ক্ষমা করে দাও, তার হৃদয় পবিত্র করে দাও এবং তার লজ্জাস্থানকে হেফাযত করো’। এরপর ঐ যুবক আর কারো (কোন মহিলার) প্রতি দৃষ্টিপাত করেনি (মুসনাদে আহমাদ হা/২২২৬৫; সিলসিলা ছহীহা হা/৩৭০)

আক্ববার বায়াত , গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

 আক্ববার বায়াত ,  গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

নবী করীম (ছাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পূর্বে ইয়াছরিবের কতিপয় লোক হজ্জের মৌসুমে মক্কায় এসে আক্বাবা নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাতে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণ করেন। যার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর মদীনায় হিজরতের সূচনা হয়। সে সম্পর্কিত দু’টি হাদীছ-

ইমাম আহমাদ কর্তৃক জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে, জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা কোন কথার উপরে আপনার নিকটে বায়‘আত করব? তিনি বললেন, (১) সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আমার কথা শুনবে ও মেনে চলবে (২) অভাবে ও সচ্ছলতায় সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ করবে (৩) সর্বদা ন্যায়ের আদেশ দিবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে (৪) আল্লাহর জন্য কথা বলবে এভাবে যে, আল্লাহর পথে কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদকে পরোয়া করবে না (৫) যখন আমি তোমাদের কাছে হিজরত করে যাব, তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করবে এবং যেভাবে তোমরা নিজেদের ও নিজেদের স্ত্রী ও সন্তানদের হেফাযত করে থাক, সেভাবে আমাকে হেফাযত করবে। বিনিময়ে তোমরা ‘জান্নাত’ লাভ করবে’ (৬) ওবাদাহ বিন ছামিত (রাঃ) বর্ণিত অপর রেওয়ায়াতে এসেছে যে, ‘আর তোমরা নেতৃত্বের জন্য ঝগড়া করবে না’।[1]

বস্ত্ততঃ প্রায় দেড় হাযার বছর পূর্বে নেওয়া বায়‘আতের শর্তগুলির প্রতিটির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এ যুগেও পুরোপুরিভাবে বিদ্যমান। সেদিনও যেমন জান্নাতের বিনিময়ে নেওয়া বায়‘আত সর্বাত্মক সমাজবিপ্লবের কারণ ঘটিয়েছিল, আজও তেমনি তা একই পন্থায় সম্ভব, যদি আমরা আন্তরিক হই।

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কায় দশ বছর অবস্থান করেছিলেন। [মক্কায় দশ বছর তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার করেন। প্রথম অহী লাভের পর তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচার করেন। সম্ভবত এই তিন বছর হিসাবে ধরা হয়নি] তিনি উকায, মাজান্না ও হজ্জ মৌসুমে মিনায় জনসমাগম স্থলে লোকদের অনুসরণ করতেন। তিনি তাদের বলতেন, এমন কে আছে যে আমাকে আশ্রয় দিবে এবং আমাকে সাহায্য করবে, যাতে আমি আমার প্রভুর বার্তা (মানুষের নিকট) পৌঁছে দিতে পারি আর বিনিময়ে সে জান্নাত লাভ করবে? এমনি করে হয়তো একজন লোক ইয়ামন প্রদেশ কিংবা মুযার গোত্র থেকে আসে আর তিনি তাকে এভাবে বলেন, অতঃপর সে তার গোত্রে ফিরে যায় তখন গোত্রের লোকেরা বলে, কুরাইশদের ঐ নওজওয়ানকে তুমি এড়িয়ে চলবে, সে যেন তোমাকে ফিতনায় না ফেলে। তিনি তাদের সওয়ারি/কাফেলাগুলোর মাঝে হেঁটে চলেন; তারা তখন তাকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে। এমনি করে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াছরিব থেকে আমাদেরকে তাঁর নিকট পাঠালেন। আমরা তাঁকে আশ্রয় দিলাম এবং তাঁকে সত্য বলে মানলাম। আমাদের কোন লোক তাঁর নিকট গেলে সে তাঁর উপর ঈমান আনত, তিনি তাকে কুরআন শিখাতেন। তারপর সে তার পরিবারে ফিরে এলে তার ইসলাম গ্রহণের কারণে তারাও ইসলাম গ্রহণ করত। এমনিভাবে আনছারদের এমন কোন বাড়ি বাকী ছিল না, যেখানে একদল মুসলিম ছিল না। তারা তাদের ইসলাম (গ্রহণের বিষয়) প্রকাশ করত। তারপর তারা সবাই মিলে পরামর্শ করল। আমরা বললাম, কতকাল আর আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ছেড়ে থাকব আর তিনিই বা কতকাল মক্কার পাহাড়গুলোতে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ঠেলা খেয়ে ফিরবেন। তখন আমাদের মধ্য হ’তে সত্তর জন লোক তাঁর নিকট যাত্রা করলাম। হজ্জ মৌসুমে আমরা তাঁর সঙ্গে মিলিত হ’লাম। আমরা তাঁর সঙ্গে মিলিত হ’তে আক্বাবার গিরিপথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হ’লাম। আমরা একজন দু’জন করে সবাই তাঁর সঙ্গে মিলিত হ’লাম। আমরা তাঁকে বললাম, আমরা আপনার হাতে কিসের উপরে বায়‘আত গ্রহণ করব। তিনি বললেন, তোমরা আমার নিকট এই শর্তে বায়‘আত গ্রহণ কর যে, তোমরা আমীরের কথা শুনবে ও মানবে কর্মমুখর সময়ে ও অলস মুহূর্তে, অর্থ ব্যয় করবে সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায়, আদেশ করবে সৎ কাজের এবং নিষেধ করবে অসৎ কাজের। তোমরা আল্লাহর পক্ষে কথা বলবে। আল্লাহর পক্ষে কথা বলতে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করবে না। আর আমি যখন তোমাদের ওখানে যাব তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করবে এবং যা কিছু থেকে তোমরা নিজেদের জীবন, স্ত্রী ও সন্তানদের রক্ষা কর, তৎসমুদয় থেকে আমাকে রক্ষা করবে। (এ সবের বিনিময়ে) তোমাদের জন্য জান্নাত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর নিকট উঠে গেলাম এবং বায়‘আত গ্রহণ করলাম। আস‘আদ ইবনু যারারাহ তাঁর হাত ধরল। সে ছিল দলের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট। সে বলল, হে ইয়াছরিববাসী একটু থাম। তিনি যে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সে কথা জেনেই আমরা উট হাঁকিয়ে এখানে এসেছি। আজ তাঁকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার অর্থ সারা আরবের বিরোধিতা কাঁধে তুলে নেওয়া, তোমাদের শ্রেষ্ঠজনদের নিহত হওয়া এবং তোমাদের তলোয়ারের পাকড়াওয়ের মুখোমুখি হওয়া। এখন ভেবে চিন্তে বল, তোমরা কি এসব বিষয়ে ধৈর্য ধরে থাকবে এবং আল্লাহর নিকট থেকে পুরস্কার লাভ করবে, নাকি কাপুরুষতা বশত নিজেদের জীবন বাঁচানোর ভয় করবে? এটা আল্লাহর নিকট তোমাদের ওযর হ’তে পারে। তারা বলল, হে আস‘আদ, আমাদের থেকে দূর হও। আল্লাহর কসম! আমরা এই বায়‘আত কখনই ত্যাগ করব না এবং কখনই তা ছিন্ন করব না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর নিকট উঠে গেলাম এবং বায়‘আত করলাম। তিনি আমাদের থেকে শর্তমূলে বায়‘আত গ্রহণ করলেন এবং বিনিময়ে তিনি আমাদের জান্নাত দিলেন। অর্থাৎ জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি দিলেন’।[2]

মুসা আঃ এর লজ্জশীলতা ....গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

মুসা আঃ এর লজ্জশীলতা ....গল্পের সাথে হাদিস শিক্ষা

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মূসা (আঃ) ছিলেন খুব লজ্জাশীল ও পর্দানশীন ব্যক্তি। তাঁর লজ্জাশীলতার কারণে তাঁর দেহের কোন অংশ দেখা যেত না। ফলে বনী ইসরাঈলের লোকেরা তাঁকে যা কষ্ট দেয়ার দিল। তারা বলল, তাঁর চামড়ায় কোন দোষ-ত্রুটি থাকার কারণেই তিনি এ পর্দা করছেন। তাঁর চামড়ায় কুষ্ঠরোগ বা তাঁর হার্নিয়া রয়েছে কিংবা সে মহামারীতে আক্রান্ত। অন্যদিকে আল্লাহ তা‘আলা চান যে, তারা মূসা (আঃ)-কে যা বলছে তা থেকে তাঁকে মুক্ত করবেন। অতঃপর তিনি একদিন একাকী (গোসলের উদ্দেশ্যে) নির্জনে গেলেন। অতঃপর তিনি তাঁর কাপড় একটা পাথরের উপর রেখে গোসল করতে লাগলেন। অতঃপর তিনি গোসল শেষ করে কাপড় নেয়ার জন্য পাথরের নিকট আসলেন। আর পাথর তাঁর কাপড় নিয়ে দূরে সরতে লাগল। অতঃপর তিনি তাঁর লাঠি নিয়ে পাথরের খোঁজে ছুটলেন এবং বলতে শুরু করলেন, হে পাথর! আমার কাপড়, হে পাথর! আমার কাপড় (লুঙ্গি)। অবশেষে বনী ইসরাঈলের একটা দলের নিকটে গিয়ে থামল। ফলে তারা তাঁকে বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখল যে, আল্লাহ তাকে কতই না সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি তাকে তাদের কথিত দোষ থেকে মুক্ত করলেন। তারা বলল, আল্লাহর কসম! মূসা (আঃ)-এর কোন রোগ-ব্যাধি নেই। পাথর দাঁড়াল, মূসা (আঃ) তাঁর কাপড় নিয়ে পরলেন এবং তাঁর লাঠি দিয়ে পাথরকে কঠিনভাবে প্রহার শুরু করলেন। আল্লাহর কসম! তাঁর প্রহারে পাথরে তিন, চার বা পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। আর এটাই প্রমাণ বহন করে আল্লাহর বাণী- ‘হে মুমিনগণ! যারা মূসাকে কষ্ট দিয়েছে, তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না। অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের কথিত অপবাদ থেকে মুক্ত করলেন, আর তিনি ছিলেন আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান’ (বুখারী হা/২৭৮, ৩৪০৪; তিরমিযী হা/৩২২১; মিশকাত হা/৫৭০৬)।

টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা


টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি কি? কিন্তু যদি অহংকার বশতঃ না হয় তবে তার শাস্তি কি? আবু বকরের হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করে তাদের দাবীর কি জবাব?
লুঙ্গি, পায়জামা, প্যান্ট ইত্যাদি কাপড় যদি পায়ের কিঞ্চিৎ নিচে ঝুলিয়ে পরিধান করা হয় এবং তাঁর উদ্দেশ্য হয় অহংকার করা, তবে তাঁর শাস্তি হল – কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর দিকে দৃষ্টি দিবেন না, তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর যদি অহংকারের সাথে নয় বরং সাধারণভাবে কাপড় ঝুলিয়ে পরে, তবে তাঁর শাস্তি হল –তাঁর টাখনুদ্বয়কে জাহান্নামের আগুনে পোড়ানো হবে। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلّمُهُمُ اللّهُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ وَلاَ يُزَكّيْهِمْ وَلَهُمْ عَذاَبٌ ألِيْم: المُسْبِلُ وَالمَنَّانُ وَالْمُنْفِقُ سِـلْعَتَهُ بـاِلْحَلِفِ الكـاَذِبِ

“কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা তিনি ব্যাক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেই তিনি ব্যাক্তি হল –
১) পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী,
২) দান করে খোটাদানকারী
৩) মিথ্যা শপথ করে পন্য বিক্রয়কারী “ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ

مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ الله إلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَـةِ

“যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করবে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না” এ বিধান ঐ ব্যাক্তির জন্য যে অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরে।
আর যে ব্যাক্তি অহংকারের উদ্দেশ্য ছাড়া কাপড় ঝুলিয়ে পরবে তাঁর ব্যাপারে হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ماَ أسْفَلَ الكعبين مِـنَ الإزاَرِ فَفِيْ النّـارِ

“যে টাখনুদ্বয়ের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হত তা আগুনের মধ্যে জ্বলবে” এ হাদিসে দোযখের আগুনে টাখনু জ্বলার ব্যাপারে অহঙ্কারের কথা উল্লেখ নেই।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِزْرَةُ الْمُؤْمِنِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ وَلا حَرَجَ أَوْ لا جُنَاحَ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْكَعْبَيْنِ ومَا كَانَ أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَمَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَرًا لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِياَمَةِ

“মুমিম ব্যাক্তির কাপড় নেসফে সাক তথা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত, এতে কোন অসুবিধা নেই” (হাঁটু থেকে পায়ের তোলার মধ্যভাগকে নেসফে সাক বলা হয়) অন্য বর্ণনায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরুপ বলেনঃ “পায়ের টাখনু এবং হাটুর মধ্যবর্তী স্থানে কাপড় পরিধান করাতে কোন অসুবিধা নেই। যে টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হবে তা জাহান্নামে যাবে, এবং যে ব্যাক্তি অহংকার বশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না”।

অনেকে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে এবং যুক্তি দেখায় যে আমি তো অহংকার বশতঃ কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিনাই, সতরাং এতে তেমন অসুবিধা নেই। উল্লেখিত হাদিসগুলি থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এ ব্যাক্তির যুক্তি সম্পূর্ণ অসাড়।

অতএব অহকারের উদ্দেশ্য ব্যাতিত এমনিই সাধারণভাবে কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। আর তাঁর সাথে যদি অহংকার যুক্ত হয় তবে তাঁর শাস্তি আরও কঠিন, তা হল – আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আবু বকর (রাঃ) এর হাদীছ দ্বারা যারা দলীল পেশ করতে চায় দু’দিক থেকে তাদের যুক্তি খন্ডনঃ

প্রথম কথাঃ আবু বকর (রাঃ) বলেছেন, আমার কাপড়ের এক পার্শ্ব (অনিচ্ছাকৃত) ঝুলে পড়ে কিন্তু আমি তা বারবার উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি।” অতএব তিনি তো ইচ্ছাকৃত একাজ করতেন না। বরং তাঁর শরীর অধিক ক্ষীণ হওয়ার কারণে অনিচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলে যেত। তাছাড়া তিনি তা উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু যারা কাপড় ঝুলিয়ে পরে এবং ধারণা করে যে তারা অহংকার করে না, তারা তো ইচ্ছাকৃত একাজ করে। অতএব তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলব, অহংকারের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইচ্ছাকৃত কাপড় ঝুলিয়ে পরলে তার টাখনু জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। যেমনটি আবু হুরায়রার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। আর যদি অহংকার বশতঃ হয় তবে তার শাস্তি হচ্ছে, আল্লাহ্‌ তাঁর সাথে কথা বলবেন না, তাঁর দিকে তাকাবেন না, তাকে পবিত্র করবেন না এবং তাঁর জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

দ্বিতীয় কথাঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেই আবু বকর (রাঃ)কে পরিশুদ্ধ করেছেন এবং সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি সেই সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত নন, যারা অহংকার বশতঃ একাজ করে থাকে। অতএব বর্তমানে এরা কি নবীজীর পক্ষ থেকে এরূপ সচ্চরিত্রের সনদ ও তাঁর সাক্ষ্য লাভ করেছে? কিন্তু শয়তান প্রবৃত্তির অনুসারী লোকদেরকে কুরআন্তসুন্নাহ্‌ থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ উক্তি সমূহকে খেয়াল-খুশির উপর ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধু করে। তখন তারা বিভ্রান্ত হয়। আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে পরিচালিত করে থাকেন।

ইসলামের দৃষ্টেতে হস্তমৈথুন ও খতিকারক দিক সমুহ:

ইসলামের দৃষ্টেতে হস্তমৈথুন ও খতিকারক দিক সমুহ:
     

ইসলামের দৃষ্টেতে হস্তমৈথুন:
আল্লাহ তা’আলার দেয়া এ সুন্দর যৌবনকালটাকে ক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি তার স্বীয় লিঙ্গের পিছনে লেগে যায় এবং নিজ হাত দিয়ে এটা চর্চা করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার এ হাত পরকালে সাক্ষী দেবে যে, সে এ পাপ কোথায় কতবার করেছে- যা পবিত্র কালামে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে। ” -(আল- কুরআন, ৩৬:৬৫) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “ যে ব্যক্তি স্বীয় জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান জামিন হবে আমি তার জাহান্নামের জন্যে জামিন হবো।” -(বুখারি, মিশকাত) উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে, মানব দেহের এ দু’টো অঙ্গ অত্যন্ত দুর্বল ও বিপদজনক। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বিশেষ করে লজ্জাস্থানের মাধ্যমে পাপ করাতে শয়তানের জন্য খুব সুবিধা। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বেশীরভাগ পাপ হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি এ দু’টো অঙ্গের হেফাজত করে, বিশেষ করে যুবক অবস্i✔উ✔মi✔ লিঙ্গের হেফাজত করে অবয়িদ কোন প্রকারেই বীর্যপাত ঘটাতে চেষ্টা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে। অন্যত্র সহীহ হাদীস থেকে আরও প্রমানিত হয়ঃ “(একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যুবকদের লক্ষ্য করে বলেন) হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে, তাদের বিবাহ করা উচিত। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর যে বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত (কামভাব দমনের জন্য) রোযা রাখা।” -(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ “তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তা’আলা নিজের দায়িত্ব মনে করেন। (১) ঐ খতদাতা ব্যক্তি, যে তার খতের মূল্য পরিশোধের চেষ্টা করে। (২) সে বিবাহিত যুবক, যে চরিত্রের হিফাজতের উদ্দেশে বিবাহ করে। (৩) সে মুজাহিদ, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” -(হাসানঃ আত-তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত) হস্তমৈথুন এমনই একটি কাজ যার অর্থ নিজেকে কলুষিত করা। এটা একটা জঘন্য কলুষ বা পাপ বোধযুক্ত কাজ। হস্তমৈথুন এমনই গোপনীইয় পাপ যা মানুষ চোরের মত চুপিসারে করে এবং প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ “উত্তম চরিত্র হল পু্ন্য। আর যে কাজ তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং লোকের কাছে প্রকাশ হওয়াকে তুমি পছন্দ কর না, তা হল পাপ।” -(মুসলিম, মিশকাত) অশালীন, অশোভনীয় ও অন্যায় কাজে মনে সঙ্কোচবোধ করার নাম হলো লজ্জা বা হায়া। যার লজ্জা নেই সে পারে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হতে। লজ্জা বা হায়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “লজ্জাশীলতা কল্যাণই বয়ে আনে । ” – [বুখারী ও মুসলিম] মুসলিমের এক বর্ণনায় এরূপ রয়েছেঃ “লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়।

ইসলামের দৃষ্টিতে হস্তমৈথুনের খতিকারক দিক সমুহ:
ইসলামের দৃষ্টিতে এটা হারাম এবংকবীরা গুনাহ। শরীয়ত অনুযায়ী যারা
হস্তমৈথুন করে তারা সীমালংগনকারী ।শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা
হয়েছে। পুরুষ হস্তমৈথুন করলে প্রধান  যে্সব সমস্যায় ভুগতে পারে তার মধ্যে একটি হল
[১ ] পুরুষ হস্তমৈথুন করতে থাকলে সে
ধীরে ধীরে নপুংসক (Impotent) হয়ে
যায়। অর্থাৎ যৌন সংগম স্থাপন করতে
অক্ষম হয়ে যায় ।[২] আরেকটি সমস্যা হল অকাল
বীর্যপাত। ফলে স্বামী তার স্ত্রীকে
সন্তুষ্ট করতে অক্ষম হয় । বৈবাহিক
সম্পর্ক বেশিদিন স্থায়ী হয় না ।[৩ ] অকাল বীর্যপাত হলে বীর্যে
শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যায় । তখন বীর্যে
শুক্রাণুর সংখ্যা হয় ২০মিলিয়নের কম ।।
যার ফলে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার
দেখা দেয় ।
(যে বীর্য বের হয় সে বীর্যে শুক্রাণুর
সংখ্যা হয় ৪২ কোটির মত ।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে কোন পুরুষের থেকেযদি ২০ কোটির কম শুক্রাণু বের হয় তাহলে সে পুরুষ থেকে কোন সন্তান হয়না। )[৪ ] । অতিরিক্ত হস্তমৈথুন পুরুষে যৌনাঙ্গকে দুর্বল করে দেয় ।Dr.Liu বলেন –

“There is a huge change in body
chemistry when one
masturbates excessively”
আর শরীরের অন্যান্য যেসব ক্ষতি হয়-
১ ) Nervous system, heart, digestive
system, urinary system এবং আরো
অন্যান্য system ক্ষতিগ্রস্ত হয় । পুরো
শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীর রোগ –
বালাইয়ের যাদুঘর হয়ে যায় ।
২ ) চোখের ক্ষতি হয় ।৩ ) স্মরণ শক্তি কমে যায় ।৪ ) মাথা ব্যথা হয় ইত্যাদি আরো অনেক
সমস্যা হয় হস্তমৈথুনের কারণে।
৫ ) আরেকটি সমস্যা হল Leakage of semen। অর্থাৎ সামান্য উত্তেজনায়
যৌনাঙ্গ থেকে তরল পদার্থ বের হয় । ফলে অনেক মুসলিম ভাই নামায পড়তে
পারেন না ।মহান আল্লাহ্ তা’ আলার স্মরণ থেকে মুসলিমদের দূরে রাখে
হস্তমৈথুন।রসূলুল্লাহ্ ( সঃ ) বলেছেন-“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের
মধ্যবর্তী জিনিস (জিহ্বার) এবং দুইপায়ের মধ্যবর্তী জিনিস (যৌনাঙ্গের)
নিশ্চয়তা (সঠিক ব্যবহারের) দেবে আমি তার বেহেশতের নিশ্চয়তা দিব । ” –
(বুখারী ও মুসলিম)

Tuesday 20 March 2018

হযরত আবু বক্কর (রা:) মৃত্যু কালীন অসিয়ত


ইসলামের ১ম খলীফা আবুবকর ছিদ্দীক্ব (রাঃ)-এর মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হ’লে তিনি সূরা ক্বাফ-এর ১৯নং আয়াতটি তেলাওয়াত করেন (‘মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে; যা থেকে তুমি টালবাহানা করে থাক’)। অতঃপর তিনি স্বীয় কন্যা আয়েশা (রাঃ)-কে বললেন, আমার পরিহিত দু’টি কাপড় ধুয়ে তা দিয়ে আমাকে কাফন পরিয়ো। কেননা মৃত ব্যক্তির চাইতে জীবিত ব্যক্তিই নতুন কাপড়ের অধিক হকদার[1]। অতঃপর তিনি পরবর্তী খলীফা হযরত ওমর (রাঃ)-কে অছিয়ত করেন এই মর্মে যে, ‘নিশ্চয়ই রাত্রির জন্য আল্লাহ এমন কিছু হক নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা তিনি দিবসে কবুল করেন না। আবার দিবসের জন্য এমন কিছু হক নির্ধারণ করেছেন, যা রাতে কবুল করেন না। কোন নফল ইবাদত কবুল করা হয় না, যতক্ষণ না ফরযটি আদায় করা হয়। নিশ্চয়ই আখেরাতে মীযানের পাল্লা হালকা হবে দুনিয়ার বুকে বাতিলকে অনুসরণ করা এবং নিজের উপর তা হালকা মনে করার কারণে। অনুরূপভাবে আখেরাতে মীযানের পাল্লা ভারী হবে দুনিয়াতে হক অনুসরণ করা এবং তাদের উপর তা ভারী হওয়ার কারণে’[2]।

শিক্ষা: রাষ্ট্রীয় গুরুদায়িত্ব পালনকারীর জন্য অলসতা ও বিলাসিতার কোন সুযোগ নেই। তাকে কোন অবস্থাতেই বাতিলের সাথে আপোষ করা চলবে না। বরং যেকোন মূল্যে সর্বাবস্থায় হক তথা আল্লাহ প্রেরিত সত্যকে কঠিনভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। কেননা দুনিয়াতে সকল কাজের উদ্দেশ্য হবে আখেরাতে মীযানের পাল্লা ভারী করা।