Tuesday 20 March 2018

সঠিকভাবে নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম

ইসলাম ডেস্ক: অনেকে ব্যক্তিই আজেন যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে থাকেন, কিন্তু তাদের নামাজ সঠিক হয়না। অপরদিকে যারা নতুন নামাজ শিখছেন কিংবা নামাজ পড়া শুরু করবেন ভাবছেন তারা অবশ্যই নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়মগুলো শিখে নিন। নিচে নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম উল্লেখ করা হলো-

কেবলামুখী হওয়া
যে জায়গায় নামাজ পড়তে দাঁড়ানো হবে, সেখানে অবশ্যই কেবলা মুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করবে না, কারণ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং বা তা বিদ’আত। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ কেউ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করেননি।
সুন্নত হলো যে, নামাযী তিনি ইমাম হয়ে নামায আদায় করুন অথবা একা তার সামনে সুত্রাহ (নামাযের সময় সামনে স্থাপিত সীমাচিহ্ন) রেখে নামায পড়বেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সামনে সুত্রাহ ব্যবহার করে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিবলামুখী হওয়া নামাযের শর্ত।

তাকবীরে তাহরীমাহ
আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে নামাযে দাঁড়াবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে নিবদ্ধ রাখবে।

তাকবীরে তাহরীমায় হাত উত্তোলণ
পুরুষ এর ক্ষেত্রেঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠানো এবং উভয় তালু কিবলামুখি হওয়া।
মহিলার ক্ষেত্রেঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো।

বুকে হাত বাঁধা
পুরুষ এর ক্ষেত্রেঃ উভয় হাত নাভীর ঠিক নিচে রেখে ডান হাতের বৃদ্ধা এবং কনিষ্ঠংগুলি দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরে ডান হাতের মধ্যের তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর থাকবে।

মহিলার ক্ষেত্রেঃ মেয়ে লোকগন বুকের উপর বামহাত রেখে হালকাভাবে ডান হাত দ্বারা ধরবে।
সানা , সূরা ফাতিহা, সূরা মিলানো
হাত বাঁধার পর সানা পড়তে হয় । সানা পড়া সুন্নাত।

( سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ )
উচ্চারণঃ(সোবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাস্মুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।)
সানা পড়ার পর আউজুবিল্লাহ পড়া সুন্নাত, বিসমিল্লাহ্‌ পড়া সুন্নাত, এর পর সূরা ফাতিহা পড়া। সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলা।
সূরা ফাতিহা পড়া শেষে সূরা মিলানোর পুর্বে বিসমিল্লাহ্‌ পড়া সুন্নাত। সূরা মিলানো ওয়াজিব।



রুকূ
উভয় হাত দু’কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকূতে যাবে। মাথাকে পিঠ বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলিকে খোলাবস্থায় উভয় হাঁটুর উপরে রাখবে। রুকূতে ইতমিনান বা স্থিরতা অবলম্বন করবে। এবং চোখের দৃষ্টি দুই পায়ের মধ্যভাগে রাখা।
এরপর বলবেঃ (সুবহানা রাব্বি’আল ‘আজীম)।
অর্থঃ (আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।)
দোয়াটি তিন বা তার অধিক পড়া ভাল

রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ওয়াজিব। দাড়ানোর সময় "সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলা এবং তারপর "রাব্বানা লাকাল হামদ" বলা সুন্নাত।

সিজদাহ
সিজদাতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত । তারপর দুই সিজদাহ করা ফরজ।
বলে যদি কোন প্রকার কষ্ট না হয় তা হলে দুই হাটু উভয় হাতের আগে (মাটিতে রেখে) সিজদায় যাবে। আর কষ্ট হলে উভয় হাত হাটুর পূর্বে (মাটিতে) রাখা যাবে। হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি কিবলামুখী থাকবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলি মিলিত ও প্রসারিত হয়ে থাকবে।সেজদাহ অবস্থায় চোখের দৃষ্টি নাকের দিকে নিবন্ধ রাখা এবং হাতের আঙ্গুলগুলি মিশিয়ে রাখা । সিজদাহ্ হবে সাতটি অঙ্গের উপর। অঙ্গগুলো হলোঃ নাক সহ কপাল, উভয় হাতুলী, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের আঙ্গুলের ভিতরের অংশ। (সেজদাহ মেয়েলোকগন শরীর একেবারে মিশিয়ে সেজদাহ করবে।)
সিজদায় গিয়ে বলবেঃ (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা) । এই দোয়াটি তিনবার বলা সুন্নত।

সিজদা থেকে উঠা
সেজদাহ হতে উঠার সময় সর্বপ্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠবে। (আল্লাহু আকবার)) বলে সিজদাহ থেকে মাথা উঠাবে। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। দু’হাত তার উভয় রান (উরু) ও হাঁটুর উপর রাখবে।

দ্বিতীয় সিজদাহ
(আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করবে। এবং দ্বিতীয় সিজদায় তাই করবে প্রথম সিজদায় যা করেছিল।
সেজদাহ শেষ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার প্রথম রাকাতের মত ২য় রাকাতের সিজদাহ পর্যন্ত হুবুহু পড়বে।

আরামের বৈঠক
২য় রাকাতের সিজদাহ থেকে ((আল্লাহু আকবার)) বলে মাথা উঠাবে। ক্ষণিকের জন্য বসবে, যে ভাবে উভয় সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসেছিল। এ ধরনের পদ্ধতিতে বসাকে ((জলসায়ে ইসতেরাহা)) বা আরামের বৈঠক বলা হয়।
এরপর আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ওয়াজিব। যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয় তবে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ শরীফ পাঠ করা এবং তারপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়া সুন্নত।
বসা অবস্থায় চোখের দৃষ্টি হাতের উপর রাখা এবং আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা ও বাম পায়ের উপর বসে ডান পা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলী ভাজ করে কিবলামুখী করে রাখা ।
[মেয়েলোকগনের ক্ষেত্রে , বসা অবস্থায় নিতম্বের উপর বসবে এবং উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে ]

তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে বাকি রাকাতগুলি আদায় করবে। "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহু" বয়লে প্রথমে ডান দিকে পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবে। সালাম ফিরানো ওয়াজিব

তারপর দুরুদ শরীফ ও ইস্তেগফার পাঠ করে মুনাজাত করবে , মুনাজাত করা নামাযের অংশ নয়।

বিঃদ্রঃ
ক. ওয়াজিব বা সুন্নত নামাজে শেষের দুই রাকাতে সূরাহ ফাতিহার পর আরেকটি সূরাহ পড়তে হবে।
খ. জামাতের নামাজে মুক্তাদিগণের কোন সূরাহ পড়তে হবেনা, ঈমাম পড়বেন। কিন্তু বাকি সব তাসবীহ পড়তে হবে।
গ. যোহর এবং আসরের ফরজ নামাজের সূরাহ গুলি নিঃশব্দে পড়তে হবে কিন্তু মাগরীব, এশা, ফজরের ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতের সূরাহগুলো উচ্চস্বরে পড়তে হবে।
ঘ. জুম'আ এবং ঈদের নামাজের সূরাহগুলো উচ্চস্বরে পড়তে হবে।
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/এমআর

এশার নামাজ আদায়ের নিয়ম এশার নামাজ কত রাকাত কি কি

এশার সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয় শাফাক অন্তর্হিত হলে। তো যাঁরা শাফাক অর্থ গ্রহণ করেছেন লালিমা তাঁদের মতে সূর্যাস্তের পর যখন সূর্যের লালিমা অন্তর্হিত হবে তখন থেকে এশার সালাতের ওয়াক্ত শুরু হবে। আর যাঁরা শাফাক অর্থ গ্রহণ করেছেন সাদা রেখা তাঁদের মতে লালিমার পরে দৃশ্য সাদা রেখাও যখন অন্তর্হিত হবে তখন এশার সালাতের ওয়াক্ত শুরু হবে। এই অনুচ্ছেদে আমাদের আলোচ্য লেখক এশার সালাতের ওয়াক্ত কখন শেষ হয় সেই আলোচনাকেই প্রাধান্য দান করেছেন। এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হল, সকল মারফূ হাদীস এবং আছারে সাহাবাকে একত্রিত করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, এশার সালাতের ওয়াক্ত তিনভাগে বিভক্ত। এক: শাফাক অন্তর্হিত হওয়ার পর থেকে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। আর এই এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করে আদায় করা সর্বোত্তম। দুই: এক তৃতীয়াংশ হতে মধ্যরাত পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত। তবে মধ্যরাত পর্যন্ত বিলম্বিত করে আদায় করা ফযীলতের দিক দিয়ে প্রথমটির তুলনায় নিম্ন পর্যায়ের। তিন: মধ্যরাতের পর থেকে সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। বিনা ওযরে এই সময়ে এশার সালাত আদায় করাটা মন্দকর্ম অথবা মাকরূহ। তবে এটি মন্দ হলেও এই সময়ে সালাত আদায় করলে তার সালাত ‘আদা’ হিসাবেই গণ্য হবে ‘কাযা’ হিসাবে নয়। কারণ, এশার সালাতের ওয়াক্ত অবশিষ্ট থাকে সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। এবার আসা যাক লেখকের লেখা ও তা নিয়ে পর্যালোচনার পর্বে। 

লেখক লিখেছেন, ‘এশার ছালাতের সময় সম্পর্কেও কিছু জাল ও যঈফ হাদীস প্রচলিত আছে।’ এরপর তিনি লিখেছেন, ‘আবু হুরায়াহ (রাঃ) বলেন, এশার ছালাতের শেষ সময় হল ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত। তাহক্বীক: যাকরিয়া বিন গোলাম কাদের এবং শায়খ আলবানী বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই। ‘হেদায়া’র ভাষ্যকার আল্লামা ইবনুল হুমাম বলেন, ছালাতের ওয়াক্ত সংক্রান্ত হাদীছের মধ্যে কোথাও এটা পাওয়া যায় না। আল্লামা যায়লাঈ বলেন, গরীব বা ভিত্তিহীন। ইবনু হাজার আসক্বালানীও  অনুরূপ বলেছেন। কিন্তু ইমাম তাহাবী মাযহাবী মোহে এর পক্ষে মত দিয়েছেন যা কাম্য নয়।’

আমার বক্তব্য

লেখক বহু জায়গায় পাঠককে সতর্ক করেছেন এই বলে যে, তাঁরা আল্লাহর নিকট কী জবাব দেবেন যদি তাঁরা সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল না করেন? কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, আল্লাহর নিকট তিনি কী জবাব দেবেন যখন আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কৈফিয়ত তলব করবেন। তা-ও আবার  শরীয়তের বিধি বিধান সম্পর্কিত বিষয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার কৈফিয়ত?

আবু হুরায়রা রা.-এর যে বক্তব্য লেখক এখানে উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ এশার সালাতের ওয়াক্ত সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকে- এটা না জাল, না ভিত্তিহীন আর না যঈফ। বরং বক্তব্যটি আবু হুরায়রা রা. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত। পাঠক সামনে এ আছারের একাধিক উদ্ধৃতি দেখতে পাবেন।

লেখক ‘তাহকীক’ শিরোনামে যতগুলো উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন, তার কোনোটিতেই এ কথা বলা হয়নি যে, আবু হুরায়রা রা.-এর উল্লিখিত বক্তব্যটি জাল, ভিত্তিহীন কিংবা  যঈফ। উদ্ধৃতিগুলোতে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে যে, ‘এশার সালাতের ওয়াক্ত সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকে’ এ কথাটি সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস কি না? যাইলাঈ, ইবনে হাজার ও ইবনে হুমাম (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেছেন, এ কথাটি  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস হিসেবে আমরা পাইনি।

তাহলে মারফ‚ হাদীসটিকেও তারা জাল কিংবা ভিত্তিহীন বলেননি। তবে এটা ঠিক যে, গোলাম কাদের এটিকে ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন। তিনি একজন সাধারণ আলেম, মুহাদ্দিস নন। তবে আবু হুরায়রা রা.-এর যে আছারটি লেখক উল্লেখ করেছেন, এই মুহাদ্দিসগণ এর উল্লেখই করেননি, ভিত্তিহীন বলা তো দূরের কথা। আর সহীহ বর্ণনাকে তারা কীভাবেই বা ভিত্তিহীন বলবেন?

তো লেখক আখেরাতে এ ভুল ব্যাখ্যার কী জবাব দেবেন?

এরপর লেখক ইমাম তাহাবী রহ. -এর ব্যাপারে যে অপবাদ আরোপ করেছেন, সে জন্য ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’র হাওয়ালা দিয়েছেন। অথচ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ গ্রন্থের প্রণেতা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী রাহ. মিথ্যাবাদীও নন এবং বেয়াদবও নন যে, তিনি ইমাম তাহাবী সম্পর্কে লিখবেন যে, ইমাম তাহাবী মাযহাবী মোহে এর পক্ষে মত দিয়েছেন। ইমাম তাহাবী রাহ. দালীলিক ভিত্তিতেই বলেছেন যে, এশার সালাতের সময় সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। তাঁর উপস্থাপিত দলীল নিয়ে মুবারকপুরী সাহেব বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং ইমাম তাহাবীর সঙ্গে সহমত পোষণ না করে তিনি তাঁর মতামত ব্যক্ত করেছেন। ব্যস, এই পর্যন্তই।

‘মাযহাবী মোহে’ কথাটি দ্বারা প্রচ্ছন্নভাবে একটি দাবী করা হল যে, মাযহাবের ভিত্তি কুরআন ও হাদীস নয়, বরং মাযহাব হচ্ছে মাযহাবের ইমামগণের নিজস্ব মত। আর মাযহাব অবলম্বনকারীরা ইমামগণের ঐ নিজস্ব মতের অনুসারী। এটিই বর্তমানকালের লা মাযহাবীদের ধারণা। এটিকে ধারণা না বলে অপপ্রচার বলাই ভালো। কারণ, তারাও জানে যে, কুরআন ও হাদীস গবেষণা করে মুজতাহিদগণ যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন সেটিকেই মাযহাব বলে। যেমন আমীন নিঃশব্দে বলা উত্তম, না সশব্দে বলা উত্তম- এই বিষয়টি নিয়ে যখন মুজতাহিদগণ হাদীসের ভাণ্ডার নিয়ে গবেষণা করেছেন তখন কারও কারও গবেষণা তাঁকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত করেছে যে, আমীন নিঃশব্দে বলা উত্তম। তখন তিনি তদনুসারে আমল করেছেন। ফলে বলা হয়েছে যে, আমীন নিঃশব্দে বলা অমুকের মাযহাব। অর্থাৎ এটি তাঁর দালীলিক বিচার-বিশ্লেষণলব্ধ মত ও সিদ্ধান্ত। তাঁর মনগড়া সিদ্ধান্ত নয়।

মুহতারাম,

আপনি জানেন যে, ইজতিহাদ একটি সুকঠিন বিষয়। ইজতিহাদের জন্য প্রয়োজন হাদীস ও কুরআনসহ শরীয়ত সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় মুজতাহিদের সামনে স্পষ্ট থাকা। প্রয়োজন অগাধ পাণ্ডিত্য এবং সেই সঙ্গে আল্লাহ প্রদত্ত ফিক্হ ও অন্যান্য প্রতিভার সঙ্গে সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টি। আর এই কারণেই বহু বিখ্যাত সব মুহাদ্দিস নিজেরা ইজতিহাদ করে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেয়ে ঐরূপ কোনো মুজতাহিদের ইজতিহাদের উপর নির্ভর করাকেই নিরাপদ মনে করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, ওয়াকী ইবনুল জাররাহ, ইয়াহইয়া ইবনে মায়ীনসহ বিখ্যাত ও প্রবাদপুরুষ মুহাদ্দিসগণও ইমাম আবূ হানীফার ইজতিহাদের উপর নির্ভর করেছেন এবং শাখা প্রশাখাগত মাসআলা মাসায়েলে তাঁরা তাঁর অবলম্বিত মত ও পথকে অবলম্বন করেছেন। তদ্রƒপ কেউ ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বলের মত ও পথকে অবলম্বন করেছেন। কেউ ইমাম শাফিঈর মত ও পথকে, কেউ ইমাম মালেকের মত ও পথকে। (রাহিমাহুমুল্লাহ)। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার জায়গা এটা নয়।

আমাদের মূল আলোচনায় ফিরে আসি। এশার সালাতের শেষ ওয়াক্ত সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকে, এ ব্যাপারে যদি শুধু আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহু আনহুর উল্লেখিত বাণীই থাকত এবং ত্বহাবী রহ. এর ভিত্তিতে এই মাযহাবকে প্রাধান্য দিতেন তারপরও আপত্তির কোন সুযোগ ছিল না। অথচ ত্বহাবী রাহ. তো আরো দলীল-প্রমাণ উল্লেখ করেছেন। এরপরও  তাঁর প্রতি এই অপবাদ! কেন এই মিথ্যাচার?!

লেখক এরপর লিখেছেন : মূলতঃ মধ্য রাত পর্যন্ত এশার ছালাতের সময় থাকে। ফজর পর্যন্ত নয়।

মধ্যরাত পর্যন্ত এশার ছালাতের সময় থাকে- এই কথাটির বরাত তিনি দিয়েছেন মুসলিম শরীফের ১৪১৯ নং হাদীসের। সে সম্পর্কে পরে আলোচনা করব। লেখক এরপর একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন, যে হাদীসটিতে একই কথা বলা হয়েছে যে, এশার সালাত মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু লেখক হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন এবং ইমাম তিরমিযীর বরাতে ইমাম বুখারী রাহ.-এর মন্তব্য উল্লেখ করেছেন। আসরের সালাতের ওয়াক্ত প্রসঙ্গে হাদীসটি নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করে এসের্ছি।  সেই আলোচনার সারসংক্ষেপ হল, ইমাম বুখারী রাহ.সহ একাধিক মুহাদ্দিসের বক্তব্য হল, হাদীসটিকে মারফূরূপে বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ ইব্ন ফুযাইল ভুল করেছেন। প্রকৃতপক্ষে হাদীসটি মুজাহিদের মুরসাল বর্ণনা। মুজাহিদ বলেছেন যে, সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এই কথার চর্চা ছিল যে, প্রতিটি সালাতের একটি আউয়াল ওয়াক্ত আছে আর একটি আখের ওয়াক্ত আছে। এরপর তিনি প্রতিটি ওয়াক্তের আউয়াল ও আখের ওয়াক্তের বিবরণ দান করেছেন। আসরের সালাতের আলোচনায় আমি বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি যে, হাদীসটি মারফূ হিসাবে সহীহ না হলেও মুজাহিদের মুরসাল বর্ণনা হিসাবে তা সহীহ এবং দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। আসরের ওয়াক্তের আলোচনাটি পুনরায় পাঠ করা যেতে পারে। লেখক শুধু এতটুকু জেনেছেন যে, মুহাম্মাদ ইব্ন ফুযাইল হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে ভুল করেছেন। কিন্তু ভুলটা কী তা লেখক জানার চেষ্টা করেননি বা জানার চেষ্টা করেও জানতে পারেননি বা সূক্ষ্ম বিষয়টি বুঝতে তাঁর মেধা ব্যর্থ হয়েছে।

যা হোক, একটি কথা না বললেই নয়। সেটি হল, লেখকের দাবী হল, এশার সালাতের ওয়াক্ত মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে। মুহাম্মাদ ইব্ন ফুযাইলের হাদীসেও একই কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু লেখক এটিকে উদ্ধৃত করে বলেছেন যে, হাদীসটি যঈফ। তদ্রƒপ মাগরিবের ওয়াক্ত সম্পর্কে লেখক যেই মত পোষণ করেন সেই মত সমর্থনকারী কিছু ভিত্তিহীন ও যঈফ হাদীসও তিনি উদ্ধৃত করেছেন। আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করাকে লেখক মুস্তাহাব বলে দাবি করছেন। আবার আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় মুস্তাহাব সম্পর্কে বেশ কিছু ভিত্তিহীন হাদীসও তিনি উল্লেখ করেছেন।  তাহলে তাঁর এই সব মত কি জাল হাদীস দ্বারা আক্রান্ত? ঐসব ভিত্তিহীন জাল ও যঈফ হাদীসের কারণে তাঁর সালাত কি জাল হাদীসের কবলে আবদ্ধ? লেখক নিশ্চয়ই বলবেন যে, না আমাদের সালাত জাল হাদীস দ্বারা আক্রান্ত নয়। আমাদের সালাত জাল হাদীসের কবলে পড়েনি। কারণ, আমাদের ঐসব মতের পক্ষে সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তা-ই যদি হয়ে থাকে তাহলে লেখক এ দেশের মানুষের সালাতকে জাল হাদীসের কবলে আখ্যায়িত করলেন কেন? এ দেশের মানুষ যে পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে থাকে সেই পদ্ধতির পক্ষেও তো সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তাঁদের সালাতের কোনো একটি বিষয়ও এমন নাই যার ভিত্তি শুধুই জাল হাদীস। লেখক এরূপ একটি মাসআলা উপস্থাপন করুন যে মাসআলার পক্ষে কোনো সহীহ দলীল নেই, শুধুই ভিত্তিহীন হাদীস রয়েছে।

এশার ছালাতের সঠিক সময়

এই শিরোনামে লেখক লিখেছেন, মাগরিবের ছালাতের সময়ের পর থেকে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে। সমস্যাজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। তবে রাসূল (ছাঃ) এশার ছালাত দেরী করে পড়াকে উত্তম মনে করতেন তাই মাগরিবের পরপরই এশার ছালাত পড়া উচিত নয়, যা এ দেশে চালু আছে।

এতে চারটি দাবী করা হয়েছে।

এক : এশার সালাতের ওয়াক্ত মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে।

দুই : এশার সালাত সমস্যাজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে।

তিন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাত দেরী করে পড়াকে উত্তম মনে করতেন।

চার : এ দেশে মাগরিবের পরপরই এশার সালাত পড়ার রীতি চালু আছে

মন্তব্য ও পর্যালোচনা

প্রথম ও দ্বিতীয় দাবীর মধ্যে স্ববিরোধিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ, ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে কথাটি দ্বারা বোঝা যায় যে, এশার সালাতের ওয়াক্ত ফজর পর্যন্ত বহাল থাকে। মধ্যরাত পর্যন্ত নয়। লেখক যদি বলেন যে, যেহেতু মধ্যরাত পর্যন্ত এশার ওয়াক্ত থাকে ফজর পর্যন্ত নয় সেই কারণেই তো আমি ‘মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে’ কথাটির সঙ্গে ‘সমস্যাজনিত কারণে’ শর্তটি যুক্ত করিনি। ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে কথাটির সঙ্গে ঐ শর্তটি যুক্ত করেছি। কারণ, ফজরের পূর্ব পর্যন্ত ওয়াক্ত থাকে না। লেখকের বিরুদ্ধে তখন প্রশ্ন দাঁড়াবে যে, তাহলে ‘সমস্যাজনিত কারণে পড়া যাবে’ কথাটিকে  ফজরের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ করে দিলেন কেন? সমস্যাজনিত কারণে কেউ যদি ফজরের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যেও সালাত আদায় করতে না পারে তাহলে কি সে ফজরের ওয়াক্ত চলে আসলে আর এশার সালাত আদায় করতে পারবে না বা আদায় করবে না? সহীহ হাদীস তো এ কথা বলে যে, নিদ্রার কারণে বা ভুলে যাওয়ার কারণে কেউ যদি ওয়াক্তের মধ্যে সালাত আদায় করতে না পারে তাহলে যখন সে জাগ্রত হবে বা তার স্মরণ হবে তখনই সে সালাত আদায় করবে। ঐ হাদীস অনুযায়ী সমস্যাজনিত কারণে তো ফজরের পরেও এশার সালাত আদায় করতে পারবে এবং আদায় করবে। তাহলে ‘ফজরের পূর্ব পর্যন্ত’ শর্তটি কেন জুড়ে দিলেন? এ কথা কেন লিখলেন না যে, সমস্যাজনিত কারণে পরের দিন যোহর পর্যন্ত আদায় করা যাবে বা পরের দিন মাগরিবের পূর্ব পযন্ত আদায় করা যাবে বরং জীবনের যে কোনো দিন যে কোনো সময়ে আদায় করা যাবে? ‘সমস্যাজনিত কারণে’ কথাটির সঙ্গে  লেখকের বিশেষ এক প্রেম রয়েছে বলে অনুমিত হয়। কারণ, তিনি না বুঝেই ফজর এবং  আসরের ওয়াক্তের আলোচনাতেও এই একই কথা বলেছেন। ঐ দুই জায়গাতেও আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি এবং লেখকের ভ্রান্তি তুলে ধরেছি। আসলে ‘সমস্যাজনিত কারণে পড়া যাবে’ কথাটির মর্ম কী তা হয়তো লেখক জানেন না ও বোঝেনই না। অথবা তিনি জেনে শুনেও শুধু মাযহাবের বিরোধিতার উদ্দেশ্যে এবং নিজ মতের পক্ষে হঠকারিতা ও গোঁড়ামিবশত স্পষ্টভাষায় স্বীকার করতে চান না যে, আসরের ওয়াক্ত সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকে এবং এশার ওয়াক্ত ফজরের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। কোনো ইমামের মাযহাব ও মতের পক্ষাবলম্বনে গোঁড়ামি নিন্দনীয় আর লেখকের নিজের মতের পক্ষাবলম্বনে তাঁর গোঁড়ামি প্রশংসনীয়? লেখক স্পষ্টভাষায় স্বীকার না করলেও প্রকারান্তরে কিন্তু স্বীকার করে নিয়েছেন যে, আসরের ওয়াক্ত সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং এশার ওয়াক্ত ফজরের পূর্ব পর্যন্ত থাকে। সুতরাং ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার ওয়াক্ত থাকার পক্ষে দলীল কী তা নিয়ে আমার আর আলোচনার প্রয়োজন থাকে না। তবে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য একটু আলোচনা করা যেতে পারে।

দেখুন, লেখক মুসলিম শরীফের যে হাদীসের প্রেক্ষিতে দাবী করেছেন যে, এশার সালাতের ওয়াক্ত মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে, ফজরের পূর্ব পর্যন্ত নয় সেই হাদীসের তিনটি হাদীস পূর্বে ১৪১৬ নং হাদীসের  আলোচনায় মুসলিম শরীফের প্রখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইমাম নববী রাহ. হাদীসের فإنه وقت إلى نصف الليل  (তো এটা এশার ওয়াক্ত, মধ্যরাত পর্যন্ত)-এই অংশের ব্যাখ্যায় লিখেছেন,

معناه وقت لأدائها اختيارا أما وقت الجواز فيمتد إلى طلوع الفجر الثاني لحديث أبي قتادة الذي ذكره مسلم بعد هذا في باب من نسي صلاة أو نام عنها إنه ليس في النوم تفريط إنما التفريط على من لم يصل حتى يجيء وقت الصلاة الأخرى وسنوضح شرحه في موضعه إن شاء الله.

অর্থাৎ, এটা এশার পছন্দনীয় ওয়াক্ত। বাকী রইল বৈধ ওয়াক্ত। তো তা ফজর পর্যন্ত প্রলম্বিত। আবূ কাতাদাহ্র ঐ হাদীসের কারণে, ইমাম মুসলিম যেটাকে পরে উল্লেখ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতের কথা ভুলে গেল বা সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ল’ এই অধ্যায়ে। হাদীসটি হল, নিদ্রায় কোনো ত্রুটি নাই। ত্রুটি হল, ঐ ব্যক্তির যে সালাত আদায় করল না অন্য আরেকটি সালাতের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত। যথাশীঘ্রই হাদীসটির মর্ম যথাস্থানে স্পষ্ট করব ইনশাআল্লাহ।

ইমাম নববী রাহ. বলতে চাচ্ছেন যে, এই হাদীসে যে মধ্যরাত পর্যন্ত এশার সালাতের কথা বলা হয়েছে তার দ্বারা এই কথা বোঝানো উদ্দেশ্য যে, মধ্যরাত পর্যন্ত ওয়াক্তটি এশার সালাতের জন্য পছন্দনীয় ওয়াক্ত। এই ওয়াক্তের মধ্যেই এশার সালাত আদায় করা উচিত। তবে বৈধ ওয়াক্ত আরও দীর্ঘ। আর তা সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। অতএব মধ্যরাতের পরে সালাত আদায় করলেও ব্যক্তির সালাত আদায় হয়ে গেছে বলা হবে। বলা হবে না যে, তার সালাত কাযা হয়ে গেছে। কারণ সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এশার সালাত আদায় করা বৈধ। তাঁর এই দাবীর পক্ষে দলীল হিসাবে তিনি আবূ কাতাদাহ রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন যেটি মুসলিম শরীফেই বিদ্যমান রয়েছে এবং সেই হাদীসটির পূর্ণ ব্যাখ্যা কী তা তিনি সেখানেই উল্লেখ করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। হাদীসটি মুসলিম শরীফের ১৫৯৪ নং হাদীস। যা উপমহাদেশীয় ছাপা কিতাবের ২৩৯ নং পৃষ্ঠায় সন্নিবেশিত হয়েছে। হাদীসটি এই:

ليس في النوم تفريط إنما التفريط على من لم يصل حتى يجيء وقت الصلاة الأخرى

‘নিদ্রায় কোনো ত্রুটি নেই। ত্রুটি ঐ ব্যক্তির যে আরেকটি সালাতের ওয়াক্ত আসার পূর্ব পর্যন্তও সালাত আদায় করেনি।’

এই হাদীসের আলোচনায় ইমাম নববী রাহ. বলেন,

فى الحديث دليل على إمتداد وقت كل صلاة من الخمس حتى يدخل وقت الأخرى وهذا مستمر على عمومه في الصلوات كلها إلا الصبح فإنها لاتمتد إلى الظهر بل يخرج وقتها بطلوع الشمس لمفهوم قوله صلى الله عليه وسلم من أدرك ركعة من الصبح قبل أن تطلع الشمس فقد أدرك الصبح وأما المغرب ففيه خلاف سبق بيانه فى بابه والصحيح المختار امتداد وقتها إلى دخول وقت العشاء للأحاديث الصحيحة السابقة في صحيح مسلم وقد ذكرنا الجواب عن حديث إمامة جبريل صلى الله عليه وسلم في اليومين في المغرب في وقت واحد.

وقال أبو سعيد الإصطخري من أصحابنا: تفوت العصر بمصير ظل الشيء مثليه وتفوت العشاء بذهاب ثلث الليل أو نصفه وتفوت الصبح بالإسفار وهذا القول ضعيف والصحيح المشهور ما قدمناه من الامتداد إلى دخول الصلوة الثانية.

অর্থ: ‘এই হাদীসে এই কথার পক্ষে দলীল রয়েছে যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রতিটির ওয়াক্ত প্রলম্বিত হয় যতক্ষণ না অপর সালাতের ওয়াক্ত আসে। আর এটা তার ব্যাপকতার কারণে প্রতিটি সালাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ফজর ব্যতীত। কেননা ফজরের ওয়াক্ত যোহর পর্যন্ত প্রলম্বিত হয় না। বরং ফজরের ওয়াক্ত সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। আর এর কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই উক্তি-‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রাকআত পেল সে ফজর পেল।’ আর মাগরিবের ব্যাপারে মতভেদ আছে। মাগরিবের আলোচনায় মতভেদটির বিবরণ গত হয়েছে। সহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত হল, মাগরিবের সালাতের ওয়াক্তও এশার ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়। আর তা ঐ সকল সহীহ হাদীসের কারণে, মুসলিম শরীফে যা পূর্বে বিবৃত হয়েছে। আর হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম কর্তৃক দুইদিন একই সময়ে মাগরিবের সালাত আদায় করণের কারণ কী, পূর্বেই আমি তার জবাব দিয়ে এসেছি। আমাদের একজন আলেম আবূ সাঈদ আল-ইসত্খরী বলেন, আসরের সালাত ফউত হয়ে যাবে বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হলে। এশার সালাত ফউত হয়ে যাবে রাতের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক অতিক্রান্ত হলেই এবং ফজরের সালাত ফউত হয়ে যাবে পূর্বাকাশ ফর্সা হয়ে গেলেই। এই মতটি যইফ। সহীহ ও প্রসিদ্ধ মত তা-ই যা আমি বর্ণনা করে এসেছি। আর তা হল, এক সালাতের ওয়াক্ত প্রলম্বিত হয় অপর সালাতের ওয়াক্ত আসার পূর্ব পর্যন্ত।’

মুহতারাম,

আপনার সামনে নিশ্চয়ই স্পষ্ট হয়েছে যে, সহীহ হাদীস আমাদেরকে জানান দেয় যে, এশার সালাতের ওয়াক্ত ফজরের পূর্ব পর্যন্ত বহাল থাকে। সমস্যাজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যাবে- এই কথা বলে লেখক প্রকারান্তরে তা স্বীকারও করে নিয়েছেন। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহর উপরিউক্ত বক্তব্যটি পাঠ করার পর আমার সামনে নতুন একটি বিষয় খোলাসা হয়েছে। আর তা হল, আমাদের আলোচ্য লেখক মূলত আবূ সাঈদ আল ইসতাখরীর এই যঈফ ও শায বা উম্মাহ-বিচিছন্ন মতটিকে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আবূ সাঈদ আল ইসতাখরীর মতকে পুরোপুরি গ্রহণ করতে সাহস পাননি উম্মাহ-বিচ্ছিন্ন মত হওয়ার কারণে। ফলে তিনি প্রতিটি জায়গাতেই আবার বলেছেন, তবে সমস্যাজনিত কারণে অমুক সময় পর্যন্ত আদায় করা যাবে। আর এরই ফলে তাঁর বক্তব্য হয়ে গেছে স্ববিরোধী।

ইমাম নববী রাহ. কর্তৃক পেশকৃত আবূ কাতাদাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু-এর হাদীস ছাড়াও হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এবং হযরত আবূ হুরায়রা রা.-এর  উক্তি প্রমাণ করে যে, এশার সালাতের ওয়াক্ত ফজর তথা সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত থাকে। ইব্ন আব্বাস রা.-এর আছর বা উক্তিটি বর্ণিত হয়েছে এই সনদে, এইভাবে:

حدثنا إسحاق عن عبد الرزاق عن معمر عن الثوري عن ليث عن طاووس عن ابن عباس قال: وقت المغرب إلى العشاء ووقت العشاء إلى الفجر.

ইব্ন আব্বাস রা. বলেন, মাগরিবের ওয়াক্ত এশা পর্যন্ত এবং এশার ওয়াক্ত ফজর পর্যন্ত।

এই একই সনদে ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. তাঁর ‘কিতাবুল হুজ্জাহ আ’লা আহলিল মাদীনাহ’ গ্রন্থে ইব্ন আব্বাস রা-এর উক্তিটি বর্ণনা করেছেন এইভাবে :

أخبرنا سفيان الثوري قال حدثنا ليث بن ابي سليم عن طاووس عن ابن عباس قال: وقت الظهر إلى العصر، ووقت العصر إلى المغرب، ووقت المغرب إلى العشاء، ووقت العشاء إلى الفجر.

অর্থ: ইব্ন আব্বাস রা. বলেন, যোহরের ওয়াক্ত আসর পর্যন্ত, আসরের ওয়াক্ত মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিবের ওয়াক্ত এশা পর্যন্ত এবং এশার ওয়াক্ত ফজর পর্যন্ত। 

হযরত আবূ হুরায়রা রা.-এর উক্তিটি বর্ণিত হয়েছে এই সনদে এইভাবে:

حدثنا إسحاق عن عبد الرزاق عن الثوري عن عثمان بن موهب قال: سمعت أبا هريرة وسأله رجل عن التفريط في الصلاة، فقال: أن تؤخروها إلى وقت التي بعدها، فمن فعل ذلك فقد فرط.

অর্থ: উসমান ইব্ন মাওহিব বলেন, আবূ হুরায়রা রা.-কে এক ব্যক্তি সালাতে চরম ত্রুটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তাঁকে আমি বলতে শুনেছি, ‘চরম ত্রুটি হল, সালাতকে তার পরবর্তী সালাতের ওয়াক্ত আসা পর্যন্ত বিলম্বিত করা। যে ব্যক্তি এরূপ করল সে চরম ত্রুটি করল।

হযরত আবূ হুরায়রা রা.-এর উক্তিটি হযরত আবূ কাতাদাহ রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মর্মকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। এছাড়া শরহু মা’আনিল আছারে (ত্বাহাবী শরীফে) আবূ হুরায়রা রা.-এর উক্তিটি আরও স্পষ্ট শব্দে ব্যক্ত করে যে, এশার সালাতের ওয়াক্ত ফজর পর্যন্ত। ইমাম ত্বাহাবী বলেন,

حدثنا يونس قال ثنا عبد الله بن يوسف قال ثنا الليث ح وحدثنا ربيع المؤذن قال ثنا شعيب بن الليث قال ثنا الليث عن يزيد بن أبي حبيب عن عبيد بن جريج أنه قال لأبي هريرة: ما إفراط صلاة العشاء قال: طلوع الفجر.

অর্থাৎ ইব্ন জুরাইজ আবূ হুরায়রা রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, এশার সালাতে কোন কর্মটি চরম ত্রুটি? হযরত আবূ হুরায়রা রা. বললেন, ফজর উদিত হওয়া।

অর্থাৎ ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্তও যদি কেউ এশার সালাত আদায় না করে তাহলে তার এই কর্মটি চরম ত্রুটি হিসাবে পরিগণিত হবে। কারণ, তখন এশার সালাত কাযা হয়ে যাবে। বুঝা গেল যে, ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত এশার সালাতের ওয়াক্ত থাকে। এই বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, ওয়াক্তের বিষয়টি ‘মুদরাক বিল কিয়াস’ নয়; যুক্তি ও বুদ্ধি দ্বারা অবগত হওয়ার মত বিষয় এটি নয়। সুতরাং হযরত ইব্ন আব্বাস রা. ও হযরত আবূ হুরায়রা রা. বিষয়টি নিশ্চয়ই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেই জেনেছেন। অতএব তাঁদের বক্তব্যটি মারফূয়ে হুকমী বা পরোক্ষ মারফূ হাদীস হিসাবে বিবেচিত হবে।

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. তাঁর খেলাফতকালে হযরত আবূ মূসা আশআরী রা.-এর উদ্দেশে একটি পত্রে লিখেছিলেন। এক বর্ণনা অনুযায়ী এই পত্রের সংশ্লিষ্ট অংশের পাঠ নিম্নরূপ:

 وَصَلِّ الْعِشَاءَ أَيَّ اللَّيْلِ شِئْتَ وَلَاتُغْفِلْها 

‘এবং এশার সালাত আদায় করবে রাতের যে কোনো অংশে তুমি আদায় করতে চাও, তবে এশার সালাতকে তোমার অবহেলার শিকার বানাবে না।’

হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর أَيَّ اللَّيْلِ شِئْتَ  কথাটি স্পষ্টরূপেই ব্যক্ত করে সমস্ত রাত-ই এশার সালাতের ওয়াক্ত।


মুহতারাম,

সন্দেহ নেই যে, ফুকাহায়ে কেরামের অনেকেই বলেছেন যে, এশার সালাতের ওয়াক্ত মধ্যরাত পর্যন্ত। কিন্তু তাঁদের এই কথার অর্থ এই নয় যে, মধ্যরাতের পরে এশার ওয়াক্ত থাকে না। বরং তাঁরা বলতে চেয়েছেন যে, এশার সালাতের মাকরূহবিহীন বা দোষবিহীন ওয়াক্ত হল মধ্যরাত পর্যন্ত। বিনা ওযরে মধ্যরাতের পরে এশার সালাত আদায় করা মাকরূহ এবং গুরুতর অন্যায়। তবে বিনা ওযরে মধ্যরাতের পরে এশার সালাত আদায় করা অন্যায় হলেও তার সালাত ‘আদা’ হিসাবেই গণ্য হবে, ‘কাযা’ হিসাবে নয়। কারণ এশার সালাতের ওয়াক্ত ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকে। আর এই কারণেই ফুকাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো ব্যক্তি যদি মধ্যরাতের পরে ইসলাম গ্রহণ করে বা কোনো বালক যদি মধ্যরাতের পরে বালেগ হয় বা কোন ঋতুবতী নারীর ঋতু যদি মধ্যরাতের পরে বন্ধ হয়ে যায় তবে তাদের উপর এশার সালাত আদায় করা ফরয হয়ে যাবে। যদি ফজর পর্যন্ত এশার সালাতের ওয়াক্ত বহাল না থাকত তাহলে এশার সালাত আদায় করা  এদের উপর ফরয হত না। ঠিক আমরাও তা-ই বলি। আমরা বলি যে, এশার সালাত আদায় করতে হবে মধ্যরাতের পূর্বেই। বিনা ওযরে মধ্যরাতের পর পর্যন্ত এশার সালাত বিলম্বিত করা মাকরূহ ও গুনাহের কারণ। কিন্তু কেউ যদি তা করে তবে বলব না যে, তার সালাত কাযা হয়ে গেছে। কারণ, এশার সালাতের ওয়াক্ত থাকে সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। জনাব মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবও বলেছেন যে, এশার সালাত সমস্যাজনিত কারণে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত পড়া যাবে। আমরাও তা-ই বলি। তাহলে বিরোধ কোথায়?  হাঁ বিরোধ এতটুকু যে, তাঁর বক্তব্য ও  মতের মধ্যে রয়েছে স্ববিরোধিতা । আমাদের বক্তব্য ও মতের মধ্যে তা নেই, আছে সংগতি ও পরিপূর্ণ ভারসাম্য।

মুহতারাম,

এরপর দেখুন যে, তিনি লিখেছেন, তাই মাগরিবের পরপরই এশার সালাত পড়া উচিত নয় যা এ দেশে চালু আছে। এবার বলুন, লেখককে আপনি কী অভিধায় অভিহিত করবেন? বিকৃত মস্তিষ্ক, না দুগ্ধপোষ্য অবোধ শিশু? মাগরিবের পরপরই এ দেশের কোন্ মসজিদে এশার সালাত আদায় করা হয়? মাগরিবের পর এক ঘন্টা আঠারো মিনিট পরে সাধারণত শাফাক অদৃশ্য হয়। এরপর এ দেশে আযান দেওয়া হয় এবং আযানের আধা ঘন্টা পরে এশার সালাত আদায় করা হয়। আজ (২১ নভেম্বর) মাগরিবের আযান হবে পাঁচটা পনের মিনিটে এবং আযানের পরপরই মাগরিবের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। আর শাফাক অদৃশ্য হবে তথা এশার সালাতের ওয়াক্ত হবে ছয়টা একত্রিশ মিনিটে। কোনো কোনো মসজিদে সাতটায় আযান হবে এবং সাড়ে সাতটায় জামাত হবে; কোনো কোনো মসজিদে আরও পরে আযান হবে এবং জামাত হবে। এরই নাম কি মাগরিবের পরপর?

আজকে এ পর্যন্তই। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। দুআ চাই। দুআ করি, আপনি ভালো থাকুন।

মাআসসালাম।

বিনীত আব্দুল গাফ্ফার, শহীদবাগ জামে মসজিদ।

Monday 19 March 2018

নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম

নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম

ইসলাম ডেস্ক: অনেকে ব্যক্তিই আজেন যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে থাকেন, কিন্তু তাদের নামাজ সঠিক হয়না। অপরদিকে যারা নতুন নামাজ শিখছেন কিংবা নামাজ পড়া শুরু করবেন ভাবছেন তারা অবশ্যই নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়মগুলো শিখে নিন। নিচে নামাজ আদায়ের সঠিক নিয়ম উল্লেখ করা হলো-

কেবলামুখী হওয়া
যে জায়গায় নামাজ পড়তে দাঁড়ানো হবে, সেখানে অবশ্যই কেবলা মুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করবে না, কারণ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং বা তা বিদ’আত। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ কেউ মুখে নিয়্যত উচ্চারণ করেননি।
সুন্নত হলো যে, নামাযী তিনি ইমাম হয়ে নামায আদায় করুন অথবা একা তার সামনে সুত্রাহ (নামাযের সময় সামনে স্থাপিত সীমাচিহ্ন) রেখে নামায পড়বেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের সামনে সুত্রাহ ব্যবহার করে নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিবলামুখী হওয়া নামাযের শর্ত।

তাকবীরে তাহরীমাহ
আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে নামাযে দাঁড়াবে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানে নিবদ্ধ রাখবে।

তাকবীরে তাহরীমায় হাত উত্তোলণ
পুরুষ এর ক্ষেত্রেঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠানো এবং উভয় তালু কিবলামুখি হওয়া।
মহিলার ক্ষেত্রেঃ তাকবীরে তাহরীমার সময় উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো।

বুকে হাত বাঁধা
পুরুষ এর ক্ষেত্রেঃ উভয় হাত নাভীর ঠিক নিচে রেখে ডান হাতের বৃদ্ধা এবং কনিষ্ঠংগুলি দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরে ডান হাতের মধ্যের তিন আঙ্গুল বাম হাতের পিঠের উপর থাকবে।

মহিলার ক্ষেত্রেঃ মেয়ে লোকগন বুকের উপর বামহাত রেখে হালকাভাবে ডান হাত দ্বারা ধরবে।
সানা , সূরা ফাতিহা, সূরা মিলানো
হাত বাঁধার পর সানা পড়তে হয় । সানা পড়া সুন্নাত।

( سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ )
উচ্চারণঃ(সোবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাস্মুকা, ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।)
সানা পড়ার পর আউজুবিল্লাহ পড়া সুন্নাত, বিসমিল্লাহ্‌ পড়া সুন্নাত, এর পর সূরা ফাতিহা পড়া। সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব।
সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলা।
সূরা ফাতিহা পড়া শেষে সূরা মিলানোর পুর্বে বিসমিল্লাহ্‌ পড়া সুন্নাত। সূরা মিলানো ওয়াজিব।



রুকূ
উভয় হাত দু’কাঁধ অথবা কান বরাবর উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে রুকূতে যাবে। মাথাকে পিঠ বরাবর রাখবে এবং উভয় হাতের আঙ্গুলগুলিকে খোলাবস্থায় উভয় হাঁটুর উপরে রাখবে। রুকূতে ইতমিনান বা স্থিরতা অবলম্বন করবে। এবং চোখের দৃষ্টি দুই পায়ের মধ্যভাগে রাখা।
এরপর বলবেঃ (সুবহানা রাব্বি’আল ‘আজীম)।
অর্থঃ (আমি আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।)
দোয়াটি তিন বা তার অধিক পড়া ভাল

রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ওয়াজিব। দাড়ানোর সময় "সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ" বলা এবং তারপর "রাব্বানা লাকাল হামদ" বলা সুন্নাত।

সিজদাহ
সিজদাতে যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত । তারপর দুই সিজদাহ করা ফরজ।
বলে যদি কোন প্রকার কষ্ট না হয় তা হলে দুই হাটু উভয় হাতের আগে (মাটিতে রেখে) সিজদায় যাবে। আর কষ্ট হলে উভয় হাত হাটুর পূর্বে (মাটিতে) রাখা যাবে। হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলি কিবলামুখী থাকবে এবং হাতের আঙ্গুলগুলি মিলিত ও প্রসারিত হয়ে থাকবে।সেজদাহ অবস্থায় চোখের দৃষ্টি নাকের দিকে নিবন্ধ রাখা এবং হাতের আঙ্গুলগুলি মিশিয়ে রাখা । সিজদাহ্ হবে সাতটি অঙ্গের উপর। অঙ্গগুলো হলোঃ নাক সহ কপাল, উভয় হাতুলী, উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের আঙ্গুলের ভিতরের অংশ। (সেজদাহ মেয়েলোকগন শরীর একেবারে মিশিয়ে সেজদাহ করবে।)
সিজদায় গিয়ে বলবেঃ (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা) । এই দোয়াটি তিনবার বলা সুন্নত।

সিজদা থেকে উঠা
সেজদাহ হতে উঠার সময় সর্বপ্রথম কপাল তারপর নাক তারপর হাত উঠবে। (আল্লাহু আকবার)) বলে সিজদাহ থেকে মাথা উঠাবে। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পা খাড়া করে রাখবে। দু’হাত তার উভয় রান (উরু) ও হাঁটুর উপর রাখবে।

দ্বিতীয় সিজদাহ
(আল্লাহু আকবার) বলে দ্বিতীয় সিজদাহ করবে। এবং দ্বিতীয় সিজদায় তাই করবে প্রথম সিজদায় যা করেছিল।
সেজদাহ শেষ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আবার প্রথম রাকাতের মত ২য় রাকাতের সিজদাহ পর্যন্ত হুবুহু পড়বে।

আরামের বৈঠক
২য় রাকাতের সিজদাহ থেকে ((আল্লাহু আকবার)) বলে মাথা উঠাবে। ক্ষণিকের জন্য বসবে, যে ভাবে উভয় সিজদার মধ্যবর্তী সময়ে বসেছিল। এ ধরনের পদ্ধতিতে বসাকে ((জলসায়ে ইসতেরাহা)) বা আরামের বৈঠক বলা হয়।
এরপর আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করা ওয়াজিব। যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয় তবে আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরুদ শরীফ পাঠ করা এবং তারপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়া সুন্নত।
বসা অবস্থায় চোখের দৃষ্টি হাতের উপর রাখা এবং আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা ও বাম পায়ের উপর বসে ডান পা খাড়া রেখে আঙ্গুলগুলী ভাজ করে কিবলামুখী করে রাখা ।
[মেয়েলোকগনের ক্ষেত্রে , বসা অবস্থায় নিতম্বের উপর বসবে এবং উভয় পা ডান দিকে বের করে দিবে ]

তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হলে আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে বাকি রাকাতগুলি আদায় করবে। "আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহু" বয়লে প্রথমে ডান দিকে পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবে। সালাম ফিরানো ওয়াজিব

তারপর দুরুদ শরীফ ও ইস্তেগফার পাঠ করে মুনাজাত করবে , মুনাজাত করা নামাযের অংশ নয়।

বিঃদ্রঃ
ক. ওয়াজিব বা সুন্নত নামাজে শেষের দুই রাকাতে সূরাহ ফাতিহার পর আরেকটি সূরাহ পড়তে হবে।
খ. জামাতের নামাজে মুক্তাদিগণের কোন সূরাহ পড়তে হবেনা, ঈমাম পড়বেন। কিন্তু বাকি সব তাসবীহ পড়তে হবে।
গ. যোহর এবং আসরের ফরজ নামাজের সূরাহ গুলি নিঃশব্দে পড়তে হবে কিন্তু মাগরীব, এশা, ফজরের ফরজ নামাজের প্রথম দুই রাকাতের সূরাহগুলো উচ্চস্বরে পড়তে হবে।
ঘ. জুম'আ এবং ঈদের নামাজের সূরাহগুলো উচ্চস্বরে পড়তে হবে।

Thursday 1 February 2018

জুম্মার সালাত নিয়ে ইসলামের হাদীস ( বুখারী শরীফ )

জুম্মার সালাত নিয়ে ইসলামের হাদীস ( বুখারী শরীফ )


৮৩২ - আবূ ইয়ামান (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ , কিন্তু কিয়ামতের দিন আমরা মর্যাদার দিক দিয়ে সবার আগে। পার্থক্য শুধু এই যে, তাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে আমাদের আগে। তারপর তাদের সেদিন যেদিন তাদের জন্য ইবাদত ফরয করা হয়েছিল তারা মতানৈক্য করেছে। কিন্তু সে বিষয়ে আল্লাহ আমাদের হিদায়াত করেছেন। কাজেই এ ব্যাপারে লোকেরা আমাদের পশ্চাতবর্তী। ইয়াহূদীদের (সম্মানিত দিন হল) আগামীকাল (শনিবার) এবং নাসারাদের আগামীপরশু (রোববার)।

৮৩৩ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) আসলে (তার আগে) সে যেন গোসল করে।

৮৩৪ - আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু আসমা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) জুম্মার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবী এলেন। উমর (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনতে পেয়ে শুধু উযূ (ওজু/অজু/অযু) করে নিলাম। উমর (রাঃ) বললেন, কেবল উযূ (ওজু/অজু/অযু)ই? অথচ আপনি জানেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসলের আদেশ দিতেন।

৮৩৫ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) --- আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুম্মার দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য।

৮৩৬ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ)--- আমর ইবনু সুলাইম আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুম্মার দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিসওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে। আমর ইবনু সুলাইম) (রহঃ) বলেন, গোসল সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তা কর্তব্য। কিন্তু মিসওয়াক ও সুগন্ধি কর্তব্য কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন। তবে হাদীসে এরূপই আছে। আবূ আবদুল্লাহ বুখারী (রহঃ) বলেন, আবূ বকর ইবনু মুনকাদির (রহঃ) হলেন মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ)-এর ভাই। কিন্তু তিনি আবূ বকর হিসাবেই পরিচিতি নন। বুকাইর ইবনু আশাজ্জ, সায়ীদ ইবনু আবূ হিলাল সহ অনেকে তাঁর থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবনু মুনকাদির (রহঃ)-এর কুনিয়াত(উপনাম) ছিল আবূ বকর ও আবূ আবদুল্লাহ।

৮৩৭ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন জানবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য আগমন করে সে যেন, একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যাক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন, একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন তখন ফিরিশতাগণ যিকর শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন।

৮৩৮ - আবূ নু’আইম (রহঃ)--- আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জুম্মার দিন উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। উমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাত (নামায/নামাজ) সময়মত আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্থ হও? তিনি বললেন, আযান শোনার সাথে সাথেই তো আমি উযূ (ওজু/অজু/অযু) করেছি। তখন উমর (রাঃ) বললেন , তোমরা কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে একথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) রওয়ানা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়।

৮৩৯ - আদম (রহঃ) সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল থেকে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে এরপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, তারপর তার নির্ধারিত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুম্মা থেকে আরেক জুম্মা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

৮৪০ - আবূল ইয়ামান (রহঃ)--- তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, সাহাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুম্মার দিন গোসল কর এবং মাথা ধুয়ে ফেল যদিও তোমরা জুনুবী না হয়ে থাক এবং সুগন্ধি ব্যবহার কর। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বললেন, গোসল সম্পর্কে নির্দেশ ঠিকই আছে, কিন্তু সুগন্ধি সম্পর্কে আমার জানানেই।

৮৪১ - ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) - তাঊস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন জুম্মার দিন গোসল সংক্রান্ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীর উল্লেখ করেন তখন আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন পরিবারবর্গের সঙ্গে অবস্থান করতেন তখনও কি তিনি সুগন্ধি বা তেল ব্যবহার করতেন? তিনি বল্লেন, আমি তা জানিনা।

৮৪২ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) মসজিদে নব্বীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোষাক (বিক্রি হতে) দেখে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন , ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি এটি আপনি খরীদ করতেন আর জুম্মার দিন এবং যখন আপনার কাছে প্রতিনিধিদল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এটি তো সে ব্যাক্তই পরিধান করে , আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। এর পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ ধরণের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি উমর (রাঃ)-কে প্রদান করেন। উমর (রাঃ) আরয করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আমাকে এটি পরিধান করতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরিধানের জন্য প্রদান করিনি। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তখন এটি মক্কায় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল।

৮৪৩ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তা হলে প্রত্যেক সালাত (নামায/নামাজ)-এর সাথে তাদের মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

৮৪৪ - আবূ মা’মার (রহঃ)--- আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মিসওয়াক সম্পর্কে তোমাদের অনেক বলেছি।

৮৪৫ - মুহাম্মাদ ইবনু কাসীর (রহঃ)--- হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য উঠতেন তখন দাঁত মেজে মুখ পরিস্কার করে নিতেন।

৮৪৬ - ইসমায়ীল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুর রাহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) একটি মিসওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে প্রবেশ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকালেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আব্দুর রাহমান! মিসওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙ্গে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –কে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিয়ে তা দিয়ে মিসওয়াক করলেন।

৮৪৭ - আবূ নু’আইম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম্মার দিন ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) (কোন সময়) এবং - এ দু’টি সূরা তিলাওয়াত করতেন। (সুরার নাম লেখা আরবি বোঝা যায় নি)

৮৪৮ - মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মসজিদে জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবূল কায়স গোত্রের মসজিদে।

৮৪৯ - বিশর ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি , তোমরা সকলেই রক্ষনাবেক্ষণকারী। লাইস ইবনু সা’দ (রাঃ) আরো অতিরিক্ত বলেন, (পরবর্তী রাবী) ইউনুস (রহঃ) বলেছেন, আমি একদিন ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে ছিলাম। তখন রুযাইক ইবনু হুকায়ম (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর নিকট লিখলেন, আপনি কি মনে করেন, আমি কি (এখানে) জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করব? রুযাইক (রহঃ) তখন সেখানে তাঁর জমির কৃষি কাজের তত্ত্বাবধান করতেন। সেখানে একদল সুদানী ও অন্যান্য লোক বাস করত। রুযাইক (রহঃ) সে সময় আইলা শহরের (আমীর) ছিলেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) তাঁকে জুম্মা কায়িম করার নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন এবং আমি তাঁকে এ নির্দেশ দিতে শুনলাম। সালিম (রহঃ) তার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই রক্ষনাবেক্ষণকারী এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইমাম একজন দায়িত্বশীল ব্যাক্তি, তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারবর্গের অভিভাবক, তাকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামীগৃহের কর্ত্রী , তাকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। খাদেম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ইবনু উমর (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা সবাই রক্ষনাবেক্ষণকারী এবং সবাইকেই তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। ‘ইমাম’ শব্দ বলতে রাষ্ট্রের কর্ণধার, যে কোন কাজের তত্ত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক ও সালাত (নামায/নামাজ)-এর ইমাম অর্থে ব্যবহৃত হয়।

৮৫০ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) - আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যাক্তি জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) আসবে সে যেন গোসল করে। ”

৮৫১ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের জন্য জুম্মার দিন গোসল করা কর্তব্য।

৮৫২ - মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষে। কিন্তু কিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবার আগে। তবে তাদের কিতাব প্রদান করা হয়েছে আমাদের আগে এবং আমাদের তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। তারপর এই দিন (শুক্রবার নির্ধারণ) সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। আল্লাহ আমাদের এ শুক্রবার সম্পর্কে হিদায়াত দান করেছেন। পরের দিন (শনিবার) ইয়াহুদীদের এবং তারপরের দিন (রোববার) নাসারাদের। এরপর কিছুক্ষন নীরব থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে। আবান ইবনু সালিহ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর আল্লাহর হক রয়েছে যে , প্রতি সাত দিনের এক দিন সে যেন গোসল করে।

৮৫৩ - আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা মহিলাগণকে রাতে (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য) মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিবে।

৮৫৪ - ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ)-এর স্ত্রী (আতিকাহ বিনত যায়িদ) ফজর ও ইশার সালাত (নামায/নামাজ)-এর জামা’আতে মসজিদে হাযির হতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, উমর (রাঃ) তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তা হলে এমন কি বাধা রয়েছে যে, উমর (রাঃ) স্বয়ং আমাকে নিষেধ করছেন না? বলা হল, তাঁকে বাধা দেয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বাণীঃ আল্লাহর দাসীদের আল্লাহর মসজিদে যেতে নিষেধ করো না।

৮৫৫ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ)---ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর মুয়াজ্জ্বীনকে এক বর্ষণ মুখর দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলবে না, বলবে, ‘সাললু ফী বুয়ুতিকুম’- তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় কর। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চাইতে উত্তম ব্যাক্তই (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করেছেন। জুম্মা নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি যে, তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলি।

৮৫৬ - আহমদ ইবনু সালিহ (রহঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ী ও উঁচু এলাকা থেকেও জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই তাঁরা ধূলি মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ থেকে ঘাম বের হত। একদিন তাদের একজন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট আসেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে।

৮৫৭ - আবদান (রহঃ) --- ইয়াহইয়া ইবনু সায়ীদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আমরাহ (রহঃ)-কে জুম্মার দিনে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। আমরাহ (রহঃ) বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুম্মার জন্য যেতেন তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নিতে।

৮৫৮ - সুরাইজ ইবনু নু’মান (রহঃ) -আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন , যখন সূর্য হেলে যেত।

৮৫৯ - আবদান (রহঃ) -আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রথম ওয়াক্তেই জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) যেতাম এবং জুম্মার পরে কাইলূলা (দুপুরের বিশ্রাম)করতাম।

৮৬০ - মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর মুকাদ্দামী (রহঃ) আনাস ইবনু মালীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচণ্ড শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তেই সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর প্রখর গরমের সময় ঠাণ্ডা করে (বিলম্ব করে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন; অর্থাৎ জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ)। ইউনুস ইবনু বুকাইর (রহঃ) আমাদের বলেছেন, আর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) শব্দের উল্লেখ করেছেন, জুম্মা শব্দের উল্লেখ করেন নি। আর বিশর ইবনু সাবিত (রহঃ) বলেন, আমাদের কাসে আবূ খালদা (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জুম্মার ইমাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তারপর তিনি আনাস (রাঃ) কে বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের সালাত (নামায/নামাজ) কিভাবে আদায় করতেন?

৮৬১ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) আবায়া ইবনু রিফা’আ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) যাওয়ার সময় আবূ আবস (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, যার দু’পা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।

৮৬২ - আদম ও আবূল ইয়ামান (রহঃ) - আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত (নামায/নামাজ) শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) যোগদান করবে। সালাত (নামায/নামাজ) ধীরস্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা’তের সাথে সালাত (নামায/নামাজ) যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ফাওত হয়ে গেছে, পরে তা পুরো করে নাও।

৮৬৩ - আমর ইবনু আলী (রহঃ) - আবূ কাতাদা (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়াবে না। তোমাদের জন্য ধীর-স্থির থাকা অপরিহার্য।

৮৬৪ - আবদান ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি জুম্মার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর (মসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমান সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুম্মা এবং পরবর্তী জুম্মার মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

৮৬৫ - মুহাম্মদ ইবনু সাল্লাম (রহঃ) -ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে তার বসার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আমি নাফি’ (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি শুধু জুম্মার ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুম্মা ও অন্যান্য (সালাত (নামায/নামাজ)-এর) ব্যাপারেও (এ নির্দেশ প্রযোজ্য)।

৮৬৬ - আদম তিনি বলেন, (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ)-এর সময় জুম্মার দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেওয়া হত। পরে যখন উসমান (রাঃ) খলীফা হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি ‘যাওরা’ থেকে তৃতীয়১ আযান বৃদ্ধি করেন। আবূ আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, ‘যাওরা’ হল মদিনার অদূরে বাজারের একটি স্থান।
[ ১। এর আগে কেবল খুতবার আযান ও ইকামাত প্রচলন ছিল। এখন থেকে তৃতীয় অর্থাৎ সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বর্তমানে প্রচলিত আযানের রেওয়াজ হয়। ]

৮৬৭ - আবূ না’আইম (রহঃ) সায়িদ ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মদিনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুম্মার দিন তৃতীয় আযান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন, উসমান ইবনু আফফান (রাঃ)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সময় (জুম্মার জন্য) একজন ব্যতীত মুয়াযযযিন ছিল না এবং জুম্মার দিন আযান দেওয়া হত যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের উপর খুতবার পূর্বে।

৮৬৮ - ইবনু মুকাতিল (রহঃ) - মু’আবিয়া ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি মিম্বরে বসা অবস্থায় মুয়াযযিন আযান দিলেন। মুয়াযযিন বললেন, “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর” মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন, “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর। ” মুয়াযযিন বললেন, “আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” তিনি বললেন এবং আমিও (বলছি “আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু”)। মুয়াযযিন বললেন, “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ” তিনি বললেন, এবং আমিও (বলছি---)। যখন (মুয়াযযিন) আযান শেষ করলেন, তখন মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার থেকে যে বাক্যগুলো শুনেছ, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মুয়াযযিনের আযানের সময় এ মজলিসে বাক্যগুলো বলতে আমি শুনেছি।

৮৬৯ - ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মসজিদে মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, উসমান (রাঃ) জুম্মার দিন দ্বিতীয় আযানের নির্দেশ দেন। ইতিপূর্বে জুম্মার দিন ইমাম যখন (মিম্বরের উপর) বসতেন , তখন আযান দেওয়া হত।

৮৭৯ - মুহাম্মদ ইবনু মুকাতিল (রহঃ) -সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ)-এর যুগে জুম্মার দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেওয়া হত। এরপর যখন উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতের সময় এল এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন উসমান (রাঃ) জুম্মার দিন তৃতীয় আযানের নির্দেশ দেন। ‘যাওরা’ নামক স্থান থেকে এ আযান দেওয়া হয়, পরে এ আযান অব্যাহত থাকে।

৮৭১ - কুতাইবা ইবনু সায়ীদ (রহঃ) - আবূ হাযিম ইবনু দীনার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, (একদিন) কিছু লোক সাহল ইবনু সা’দ সাঈদীর নিকট আগমন করে এবং মিম্বরটি কোন কাঠের তৈরী ছিল, এ নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল। তারা এ সম্পর্কে তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করল। এতে তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের ছিল। প্রথম যে দিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসেন তা আমি দেখেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদের অমুক মহিলার (বর্ণনাকারী বলেন, সাহল (রাঃ) তার নামও উল্লেখ করেছিলেন) নিকট লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস তৈরী করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলতে পারি। এরপর সে মহিলা তাকে আদেশ করেন এবং সে (মদিনা থেকে নয় মাইল দূরবর্তী)গাবা নামক স্থানের ঝাউ কাঠ দিয়ে তা তৈরী করে নিয়ে আসে। মহিলাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তা পাঠিয়েছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। এরপর আমি দেখেছি, এর উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে (দাঁড়িয়ে) রুকু করেছেন। এরপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বরের গোড়ায় সিজদা করেছেন এবং (এ সিজদা) পুনরায় করেছেন, এরপর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেনঃ হে লোকসকল! আমি এতা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার ইকতিদা করতে এবং আমার সালাত (নামায/নামাজ) শিখে নিতে পার।

৮৭২ - সায়ীদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (মসজিদে নব্বীতে) এমন একটি (খেজুর গাছের) খুঁটি ছিল যার সাথে হেলান দিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়াতেন। এরপর যখন তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করা হল, আমরা তখন খুঁটি থেকে দশ মাসের গর্ভবতী উটনীর মত ক্রন্দন করার শব্দ শুনতে পেলাম। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বর থেকে নেমে এসে খুঁটির উপর হাত রাখলেন।

৮৭৩ - আদম ইবনু ইয়াস (রহঃ) - আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে মিম্বরের উপর থেকে খুতবা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যে ব্যাক্তি জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) আসে সে যেন গোসল করে নেয়।

৮৭৪ - উবাঈদুল্লাহ ইবনু উমর কাওয়ারিরী (রহঃ) - আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। এরপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক।

৮৭৫ - মু’আয ইবনু ফাযালা (রহঃ) আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মিম্বরের উপর বসলেন এবং আমরা তাঁর চারপাশে বসলাম।

৮৭৬ - মুহাম্মদ ইবনু মা’মার (রহঃ) আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে কিছু মাল বা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী উপস্থিত করা হল তিনি তা বন্টন করে দিলেন। বন্টনের সময় কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে বাদ দিলেন। তারপর তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছলো যে, যাদের তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করলেন ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, তারপর বললেনঃ আমমা বা’দ। আল্লাহর শপথ! আমি কোন লোককে দেই আর কোন লোককে দেই না। যাকে আমি দেই না, সে যাকে আমি দেই, তার চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। তবে আমি এমন লোকদের দেই যাদের অন্তরে অধৈর্য ও মালের প্রতি লিপ্সা দেখতে পাই ; আর কিছু লোককে আল্লাহ যাদের অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা ও কল্যান রেখেছেন, তাদের সে অবস্থার উপর ন্যাস্ত করি। তাদের মধ্যে আমর ইবনু তাগলিব একজন। বর্ণনাকারী আমর ইবনু তাগলিব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর এ বাণীর পরিবর্তে আমি লাল উটও১ পছন্দ করি না।
[১। তৎকালীন আরবের সবচাইতে মূল্যবান সম্পদ। ]

৮৭৭ - ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) - আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক রাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, সকালে তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) এর চাইতে অধিক সংখ্যক সাহাবী একত্রিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। পরের দিন সকালেও তাঁরা এ সম্পর্কে আলোচনা। ফলে তৃতীয় রাতে মসজিদে লোকসংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসুল্লীগণের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য বের হলেন এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে লোকদের দিকে ফিরলেন। তারপর আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করেন। এরপর বললেনঃ আমমা বা’দ (তারপর বক্তব্য এই যে) এখানে তোমাদের উপস্থিতি আমার কাছে গোপন ছিল না, কিন্তু আমার আশংকা ছিল, তা তোমাদের জন্য ফরয করে দেওয়া হয় আর তোমরা তা আদায় করতে অসমর্থ হয়ে পড়।

৮৭৮ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) - আবূ হুমাইদ সায়ীদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক সন্ধ্যায় সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং তৌহীদের সাক্ষ্য বাণী পাঠ করলেন। আর যথাযথভাবে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, “আমমা বা’দ”।

৮৭৯ - আবূল ইয়ামান (রহঃ) মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন। এরপর আমি তাঁকে তৌহীদের সাক্ষ্য বাণী পাঠ করার পর বলতে শুনলাম, “আমমা বা’দ”।

৮৮০ - ইসমায়ীল ইবনু আবান (রহঃ) - ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর আরোহণ করলেন। এ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাঁর দু’ কাঁধের উপর বড় চাঁদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, এরপর বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন তাঁর নিকট একত্র হলেন। এরপর তিনি বললেনঃ “আমমা বা’দ”। শুনে রাখো, এ আনসার গোত্র সংখ্যায় কমতে থাকবে এবং অন্য লোকেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকবে। কাজেই যে ব্যাক্তি হযরত মুহাম্মদ -এর উম্মাতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং সে এর সাহায্যে কারো ক্ষতি বা উপকার করার সুযোগ পাবে, সে যেন এই আনসারদের সৎ লোকদের ভাল কাজগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দ কাজগুলো ক্ষমা করে দেয়।

৮৮১ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) - আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ খুতবা দিতেন আর দু’ খুতবার মাঝে বসতেন।

৮৮২ - আদম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুম্মার দিন মসজিদের দরজায় ফিরিশতাগণ অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমণকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। এরপর যে আসে সে ঐ ব্যাক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। তারপর আগমণকারী ব্যাক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। এরপর আগমণকারী ব্যাক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। তারপর ইমাম যখন বের হন তখন ফিরিশতাগণ তাঁদের দফতর বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ সহ খুতবা শুনতে থাকেন।

৮৮৩ - আবূ নু’মান (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (কোন এক) জুম্মার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে খুতবা দিচ্ছিলেন। এমনি সময় এক ব্যাক্তি আগমণ করল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও।

৮৮৪ - আলী ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক জুম্মার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দেওয়ার সময় এক ব্যাক্তি প্রবেশ করল। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেছ কি? সে বলল, না, তিনি বললেনঃ উঠ, দু’ রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নাও।

৮৮৫ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক জুম্মার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দু’আ করুন, যেন আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দু’হাত প্রসারিত করলেন এবং দু’আ করলেন।

৮৮৬ - ইবরাহীম ইবনু মুনযীর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম –এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় এক জুম্মার দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুঈন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খন্ড মেঘও দেখিনি। যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু’আ শেষে) তিনি দু’হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খন্ড উঠে আসল। তারপর তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করেন নাই , এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর পবিত্র দাঁড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুম্মা পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুম্মার দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করুন। তখন তিনি দু’হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দু’আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খন্ডের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন, আর সেখান-কার মেঘ কেতে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদিনার আকশ মেঘমুক্ত হয়ে গেল এবং কানাত উপত্যকার পানি এক মাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল, তখন (মদিনার) চতুরপাশের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে, সে এ মুষলধারে বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।

৮৮৭ - ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুম্মার দিন যখন তোমার পাশের মুসুল্লীকে বলবে চুপ থাক, অথচ ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।

৮৮৮ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র নিকট কিছু চায়, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।

৮৮৯ - মু’আবিয়া ইবনু আমর (রহঃ) - জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে (জুম্মার) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করছিলাম। এমন সময় খাদ্য দ্রব্য বহনকারী একটি উটের কাফিলা হাযির হল এবং তারা (মুসল্লীগণ) সে দিকে এত বেশী মনোযোগী হলেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “ “ এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল তামাশা দেখতে পেল, তখন সে দিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল”। (সূরা জুম্মা)

৮৯০ - আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ)--- আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বে দু’ রাকায়াত ও পরে দু’ রাকায়াত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাকায়াত এবং ইশার পর দু’ রাকায়াত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর জুম্মার দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাকায়াত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৮৯১ - সায়ীদ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) সাহল (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বসবাসকারিণী জনৈকা মহিলা একটি ছোট নহরের পাশে ক্ষেতে বীটের চাষ করতেন। জুম্মার দিনে সে বীটের মূল তুলে এনে রান্নার জন্য ডেগে চড়াতেন এবং এর উপর এক মুঠো যবের আটা দিয়ে রান্না করতেন। তখন এ বীট মূলই এর গোশত (গোশতের বিকল্প) হয়ে যেত। আমরা জুম্মার সালাত (নামায/নামাজ) থেকে ফিরে এসে তাঁকে সালাম দিতাম। তিনি তখন খাদ্য আমাদের সামনে পেশ করতেন এবং আমরা তা খেতাম। আমরা সে খাদ্যের আশায় জুম্মা বারে উদগ্রীব থাকতাম।

৮৯২ - আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ)--- সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) থেকে এ হাদীস বর্ণিত, তিনি আরো বলেছেন, জুম্মার (সালাত (নামায/নামাজ)-এর) পরই আমরা কায়লূলা (দুপুরের শয়ন ও হালকা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম।

৮৯৩ - মুহাম্মদ ইবনু উকবা শায়বানী (রহঃ)--- হুমাইদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেনঃ আমরা জুম্মার দিন সকালে যেতাম তারপর (সালাত (নামায/নামাজ) শেষে) কায়লূলা করতাম।

শত্রুভীতি অবস্থায় সালাত হাদীস ( বুখারী শরীফ )

শত্রুভীতি অবস্থায় সালাত হাদীস ( বুখারী শরীফ )


৮৯৫ - আবূ ইয়ামান (রহঃ)--- শু’আইব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যুহরী (রহঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন অর্থাৎ খাওফের সালাত (নামায/নামাজ)? তিনি বললেন, আমাকে সালিম (রহঃ) জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে নাজদ এলাকায় যুদ্ধ করেছিলাম। সেখানে আমরা শত্রুর মুখোমুখী কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। একদল তাঁর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন এবং অন্য একটি দল শত্রুর প্রতি মুখোমুখী অবস্থান করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে যারা ছিলেন তাঁদের নিয়ে রুকু ও দু’টি সিজদা করলেন। এরপর এ দলটি যারা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেনি, তাঁদের স্থানে চলে গেলেন এবং তাঁরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে এগিয়ে এলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সঙ্গে এক রুকু ও দু’টি সিজদা করলেন এবং পরে সালাম ফিরালেন। এরপর তাঁদের প্রত্যেকে উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজে নিজে একটি রুকু ও দু’টি সিজদা (সহ সালাত (নামায/নামাজ)) শেষ করলেন।

৮৯৬ - সায়ীদ ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) নাফি (রহঃ) সূত্রে ইবনু উমর (রাঃ) থেকে মুজাহিদ (রহঃ) –এর বর্ণনার মত উল্লেখ করেছেন যে, সৈন্যরা যখন পরস্পর (শত্রুমিত্র) মিলিত হয়ে যায়, তখন দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে। ইবনু উমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বলেছেন যে, যদি সৈন্যদের অবস্থা এর চেয়ে গুরুতর হয়ে যায়, তা হলে দাঁড়ানো অবস্থায় এবং আরোহী অবস্থায় সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে।

৮৯৭ - হাইওয়া ইবনু শুরু াইহ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায/নামাজ) দাঁড়ালেন এবং সাহাবীগণ তাঁর পিছনে (ইক্তিদা করে) দাঁড়ালেন। তিনি তাকবীর বললেন, তাঁরাও তাকবীর বললেন, তিনি রুকু করলেন, তারাও তাঁর সঙ্গে রুকু করলেন। এরপর তিনি সিজদা করলেন এবং তারাও তাঁর সঙ্গে সিজদা করলেন। তারপর তিনি দ্বিতীয় রাকা’আতের জন্য দাঁড়ালেন , তখন যারা তাঁর সঙ্গে সিজদা করছিলেন তারা উঠে দাঁড়ালেন এবং তাদের ভাইদের পাহারা দিতে লাগলেন। তখন অপর দলটি এসে তাঁর সঙ্গে রুকু করলেন। এভাবে সকলেই সালাত (নামায/নামাজ) অংশগ্রহণ করলেন। অথচ একদল অপর দলকে পাহারাও দিলেন।

৮৯৮ - ইয়াহইয়া ইবনু জাফর) (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন উমর (রাঃ) কুরাইশ গোত্রের কাফিরদের মন্দ বলতে বলতে আসলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে, অথচ আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে পারিনি। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমিও তা এখনও আদায় করতে পারিনি। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি মদিনার বুতহান উপত্যকায় নেমে উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন এবং সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, এরপর মাগরিবের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৮৯৯ - আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পথে আমাদেরকে বললেন, বনূ কুরাইযা এলাকায় পৌছার আগে কেউ যেন আসরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় না করে। কিন্তু অনেকের পথিমধ্যেই আসরের সময় হয়ে গেল, তখন তাদের কেউ কেউ বললেন, আমরা সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেব, আমাদের নিষেধ করার এ উদ্দেশ্য ছিল না (বরং উদ্দেশ্য ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়া)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট এ কথা উল্লেখ করা হলে, তিনি তাঁদের কারোর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন নি।

৯০০ - মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) অন্ধকার থাকতে আদায় করলেন। এরপর সাওয়ারীতে আরোহণ করলেন এবং বললেনঃ আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক! যখন আমরা কোন সম্প্রদায়ের এলাকায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃত দের প্রভাত হয় কতই না মন্দ! তখন তারা (ইয়াহূদীরা) বের হয়ে গলির মধ্যে দৌড়াতে লাগল এবং বলতে লাগল, মুহাম্মাদ ও তাঁর খামীস এসে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, খামীস হচ্ছে , সৈন্য–সামন্ত। পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর জয়লাভ করেন। তিনি যোদ্ধাদের হত্যা করলেন এবং নারী-শিশুদের বন্দী করলেন। তখন সাফিয়্যা প্রথমত দিহইয়া কালবীর এবং পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অংশে পড়ল। তারপর তিনি তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাঁর মুক্তিদানকে মাহররূপে গণ্য করেন। আবদুল আযীয (রহঃ) সাবিত (রাঃ)-এর কাছে জানতে চাইলেন, তাঁকে কি মাহর দেওয়া হয়েছিল, তা কি আপনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন? তিনি বললেন, তাঁর মুক্তই তাঁর মাহর, আর মুচকি হাসলেন।

দুই ঈদের সালাত নিয়ে হাদীস (বুখারী শরীফ)

দুই ঈদের সালাত নিয়ে হাদীস (বুখারী শরীফ)

৯০১) আবূল ইয়ামান (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে ওমর (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সংগে সাক্ষাতকালে এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তথন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন : এটি তো তার পোষাক যার (আখিরাতে) কল্যানের কোন অংশ নেই। এ ঘটনার পর ওমর (রাঃ) আল্লাহর যত দিন ইচ্ছা ততদিন অতিবহিত করলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট একটি রেশমী জুব্বা পাঠালেন, ওমর (রাঃ) তা গ্রহন করেন এবং সেটি নিয়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি তো বলেছিলেন, এটা তার পোষাক যার (আখেরাতি) কল্যানের কোন অংশ নাই। অথচ আপনি এ জু্ব্বা আমার নিকট পাঠিয়েছেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি্ এটি বিক্রি করে দাও এবং বিক্রয়লব্ধ অর্থে তোমার প্রয়োজন মিটাও।

৯০২) আহমদ ইবনু ঈসা (রাঃ)…… আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বৃ’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এলেন, তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র1 (দফ্) বাজানো হচ্ছে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। তারপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বের হয়ে গেল। আর ঈদের দিন সুদানীরা বর্শা ও ঢালের দ্বারা খেলা করত। আমি নিজে (একবার) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কছে আরয করেছিলাম অথবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তুমি কি তাদের খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ, তারপর তিনি আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গাল ছিল তার গালের সাথে লাগান। তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা করতে ছিলে তা করতে থাক, হে বণু আরফিদা। পরিশেষে আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তথন তিনি আমাকে বললেন, তোমার কি দেখা শেষ হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, তিনি বললেন, তা হলে চলে যাও।

৯০৩) হাজ্জাজইবনু মিনহাল) (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে খুতবা ‍দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন: আমাদের আজকের এ দিনে আমরা যে কাজ প্রথম শুরু করব, তা হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। এরপর ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। তাই যে এরুপ করে সে আমাদের রীতিনীতি সঠিকভাবে পালন করল।

৯০৪) উবাইদ ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, (একদিন আমার ঘরে) আবূ বকর (রাঃ) এলেন তখন আমার নিকট আনসার দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধের দিন আনসারীগণ পরস্পর যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে কবিতা আবৃত্তি করছিল। তিনি বলেন, তারা কোন পেশাগত গায়িকা ছিল না। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - এর ঘরে শয়তানী বাদ্যযন্ত্র। আর এটি ছিল ঈদের দিন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ বকর! প্রত্যেক জাতির জন্যই আনন্দ উৎসব রয়েছে আর এ হল আমাদের আনন্দ।

৯০৫) মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহীম (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়াতে আনাস (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন।

৯০৬) মূসা’দ্দাদ (রহঃ) …… আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে যে যবেহ করবে তাকে আবার যবেহ(কুরবানী) করতে হবে। তখন এক ব্যাক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আজাকের এদিন গোশত খাওয়ার আকাংক্ষা করা হয়। সে তার প্রতিবেশীদের অবস্থা উল্লেখ করল। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তার কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। সে বলল, আমার নিকট এখন ছয় মাসের এমন একটি মেষ শাবক আছে, যা আমার কাছে দু’টি হ্ষ্টপুষ্ট বকরীর চাইতেও বেশী পছন্দনীয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি দিলেন। অবশ্য আমি জানিনা, এ অনুমতি তাকে ছাড়া অন্যদের জন্যও কি না?

৯০৭) উসমান (রহঃ) …… বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন। খুতবায় বলেন: যে আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল এবং আমাদের মত কুরবানী করল, সে কুরবানীর রীতিনীতি যথাযথ পালন করল। আর যে সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে কুরবানী করল তা সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে হয়ে গেল, কিন্তু এতে তার কুরবানী হবে না। বারাআ- এর মানা আবূ বুরদাহ্ ইবনু নিয়ার (রাঃ) তখন বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার জানামতে আজকের দিনটি পানাহারের দিন। তাই আমি পছন্দ করলাম যে , আমার ঘরে সর্বপ্রথম যবেহ করা হোক আমার বকরীই। তাই আমি আমার বকরীটি যবেহ করেছি এবং সালাত (নামায/নামাজ) আসার পূর্বে তা দিয়ে নাশতাও করেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার বকরীটি গোশতের উদ্দেশ্যে যবেহ করা হয়েছে। তখন তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কাছে এমন একটি ছয় মাসের শেষ শাবক আছে যা আমার কাছে দু’টি বকরীর চাইতেও পছন্দীয়। এটি (কুরবানী দিলে) কি আমার জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তবে তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন্য যথেষ্ট কবে না।

৯০৮) সায়ীগ ইবনু আবূ মারয়াম (রহঃ) আবূ সায়ীদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গমন করে সেখানে তিনি প্রথম যে কাজ শুরু করতেন তা হল সালাত (নামায/নামাজ)। আর সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করে তিনি লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন এবং তারা তাঁদের কাতারে বসে থাকতেন। তিনি তাদের নসীহত করতেন, উপদেশ দিতেন এবং নির্দেশ দান করতেন। যদি তিনি কোন সেনাদল পাঠাবার ইচ্ছা করতেন, তবে তাদের আলাদা করে নিতেন। অথবা যদি কোন বিষয়ে নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করতেন তবে তা জারি করতেন। তারপর তিনি ফিরে যেতেন। আবূ সায়ীদ (রাঃ) বলেন, লোকেরা বরাবর এই নিয়ম অনুসরন করে আসছিল। অবশেষে যখন মারওয়ান মদিনার আমীর হলেন, তখন ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের উদ্দেশ্যে আমি তার সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন ঈদগাহে পৌছলাম তখন সেখানে একটি মিম্বর দেখতে পেলাম, সেটি কাসীর ইবনু সালত (রাঃ) তৈরী করেছিলেন। মারওয়ান সালাত (নামায/নামাজ) আদায়ের আগেই এর উপর আরোহণ করতে উদ্যত হলেন। আমি তার কাপড় টেনে ধরলাম। কিন্তু কাপড় ছাড়িয়ে খুতবা দিলেন। আমি তাকে বললাম, আল্লাহর কসম! তোমরা (রাসুলের সুন্নাত) পরিবর্তন করে ফেলেছ। সে বলল, হে আবূ সায়ীদ! তোমরা যা জানতে, তা গত হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যা জানি, তা তার চেয়ে ভাল, যা আমি জানিনা। সে তখন বলল, লোকজন সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর আমাদের জন্য বসে থাকে না, তাই আমি খুতবা সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই দিয়েছি।

৯০৯) ইবরাহীম ইবনু মুনযির (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর সালাত (নামায/নামাজ) শেষে খুতবা দিতেন।

৯১০) ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন বের হতেন। এরপর খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) শুরু করেন। রাবী বলেন, আমাকে আতা (রহঃ) বলেছেন যে, ইবনু যুবায়র (রাঃ) এর বায়’আত গ্রহনের প্রথম দিকে আব্বাস (রাঃ) এ বলে লোক পাঠালেন যে, ঈদুল ফিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আযান দেওয়া হত না এবং খুতবা দেওয়া হতো সালাত (নামায/নামাজ)-এর পরে। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে এ-ও বর্ণিত আছে যে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাড়িয়ে প্রথমে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন এবং পরে লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা শেষ করলেন, তিনি (মিম্বর থেকে) নেমে মহিলাগণের (কাতারে) আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ)- এর হাতে ভর করেছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তার কাপড় জড়িয়ে ধরলে, মহিলাগণ এতে সাদাকার বস্তু দিতে লাগলেন। আমি আতা (রহঃ) কে জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কি এখনো যরুরী মনে করেন যে, ইমাম খুতবা শেষ করে মহিলাগনের নিকট এসে তাদের নসীহত করবেন? তিনি বললেন, নিশ্চয় তা তাদের জন্য অবশ্যই যরুরী। তাদের কি হয়েছে যে, তারা তা করবে না?

৯১১) আবূ আসিম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর, এবং উসমান (রাঃ) এর সঙ্গে সালাত (নামায/নামাজ) হাযির ছিলাম। তারা সবাই খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৯১২) ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) …ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর এবং উমর (রাঃ) উভয় ঈদের সালাত (নামায/নামাজ) খুতবার পূর্বে আদায় করতেন।

৯১৩) সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরে দু রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। এর আগে ও পরে কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি। তারপর বিলাল (রাঃ)কে সঙ্গে নিয়ে মহিলাগনের কাছে এলেন এবং সাদাকা প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তারা দিতে লাগলেন। কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার।

৯১৪) আদম… বারাআ ইবনু আযিব… থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আজকের এ দিনে আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। এরপর আমরা (বাড়ী) ফিরে আসব এবং কুরবানী করব। কাজেই যে ব্যাক্তি তা করল, সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে কুরবানী করল, তা শুধু গোশত বলেই গন্য হবে, যা সে পরিবারবর্গের জন্য আগেই করে ফেলেছে। এতে কুরবানী কিছুই নেই। তখন আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) নামক এক আনসারী বললেন, ইয়া রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো (আগেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি মেষ শাবক আছে যা এক বছর বয়সের মেষের চাইতে উত্তম। তিনি বললেন, সেটির স্থলে এটিকে যবেহ করে ফেল। তবে তোমার পর অন্য কারো জন্য তা যথেষ্ঠ হবে না।

৯১৫) যাকারিয়া ইবনু ইয়াহইয়া আবূ সুকাইন (রহঃ) সায়ীদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমর (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম যখন বর্শার অগ্রভাগ তার পায়ের তলদেশে বিদ্ধ হয়েছিল। ফলে তার পা রেকাবের সাথে আটকে গিয়েছিল। আমি তখন নেমে সেটি টেনে বের করে ফেললাম। এ ঘটে ছিল মিনায়। এ সংবাদ হাজ্জাজের নিকট পৌছলে তিনি তাকে দেখতে আসেন। হাজ্জাজ বললো, যদি আমি জানতে পারতাম কে আপনাকে আঘাত করেছে, (তাকে আমি শাস্তি দিতাম)। তখন ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তুমই আমাকে আঘাত করেছে। সে বলল, তা কি ভাবে? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, তুমই সেদিন(ঈদের দিন) অস্ত্র ধারণ করেছ, যে দিন অস্ত্র ধারণ করা হত না। তুমই অস্ত্রকে হারাম শরীফে প্রবেশ করিয়েছ, অথচ হারাম শরীফে কখনো অস্ত্র প্রবেশ করা হয় না।

৯১৬) আহমদ ইবনু ইয়াকুব (রহঃ) … সায়ীদ ইবনু আস (রাঃ) এর পিতা থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) এর নিকট হাজ্জাজ এলো। আমি তখন তার কাছে ছিলাম। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কেমন আছেন? ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, ভাল। হাজ্জাজ জিজ্ঞাসা করলো, আপনাকে কে আঘাত করেছে? তিনি বললেন, আমাকে সে ব্যাক্তি আঘাত করেছে যে সে দিন অস্ত্র ধারণের আদেশ দিয়েছে, যে দিন তা ধারণ করা বৈধ নয়। অর্থাৎ হাজ্জাজ।

৯১৭) সুলাইমান ইবনু হারব (রহঃ) … বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতেন। তিনি বলেন, আজাকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। তারপর ফিরে এসে কুরবানী করা। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম পালন করল। যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই যবেহ করবে, তা শুধু গোশতের জন্যই হবে, যা সে পরিবারের জন্য তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে। কুরবানীর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তখন আমার মামা আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) দাড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি তো সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে এখন আমার নিকট এমন একটি মেষশাবক আছে যা ‘মসিন্না’1 মেষের চাইতেও উত্তম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার স্থলে এটই কুরবানী করে নাও। অথবা তিনি বললেনঃ এটই যবেহ কর। তবে তুমি ব্যতীত আর কারো জন্যই মেষশাবক যথেষ্ঠ হবে না।
১। মুসিন্না অর্থ যার বয়স এক বছর পুরে দ্বিতীয় বছরে পড়েছে।

৯১৮) মুহাম্মদ ইবনু আর’আরা (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের আমল, অনান্য দিনের আমলের তুলনায় উত্তম। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলেন: জিহাদও নয়। তবে সে ব্যাক্তির কথা স্বতন্ত্র, যে নিজের জানো ও মালের ঝুকি নিয়েও জিহাদ করে এবং কিছু্ই নিয়ে আসে না।

৯১৯) আবূ নু’আইম (রহঃ) … মুহাম্মদ ইবনু আবূ বকর সাকাফী (রহঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা সকাল বেলা মিনা থেকে যখন আরাফাতের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এর নিকট তালবিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে কিরুপ করতেন? তিনি বললেন, তালবিয়া পাঠকারী তালবিয়া পড়ত, তাকে নিষেধ করা হতো না। তাকবীর পাঠকারী তাকবীর পাঠ করত, তাকেও নিষেধ করা হতো না।

৯২০) মুহাম্মদ (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ঈদের দিন আমাদের বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহর থেকে বের করতাম এবং মাসিক মাসিক চলাকালীন মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দু’আর সাথে দু’আ করত-তারা আশা করত সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা।

৯২১) মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, ঈদুল ফিতর ও কুরবানীর দিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে বর্শা পুতে দেওয়া হত। তারপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৯২২) ইবরাহীম ইবনু মুনযিন (রহঃ) ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সকাল বেলায় ঈদগাহে যেতেন, তথন তার সামনে বর্শা বহন করা হতো এবং তার সামনে ঈদগাহে তা স্থাপন করা হতো এবং একে সামনে রেখে তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৯২৩) আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব (রহঃ) উম্মে আতীয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (ঈদের সালাত (নামায/নামাজ)-এর উদ্দেশ্যে) যুবতী ও পর্দানশীন মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আদেশ করা হত। আইয়্যুব- (রহঃ) থেকে হাফসা (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে অতিরিক্ত বর্ণনা আছে যে, ঈদগাহে মাসিকচলা মহিলারা আলাদা থাকতেন।

৯২৪) আমর ইবনু আব্বাস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঈদুল ফিতর বা আযহার দিন বের হলাম। তিনি সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর মহিলাগণের কাছে গিয়ে তাদের উপদেশ দিলেন, তাদের নসীহত করলেন এবং তাদেরকে সা’দকা দানের নির্দেশ দিলেন।

৯২৫) আবূ নু’আইম (রহঃ) বারাআ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল আযহার দিন বাকী’ (নামক কবরস্থানে) গমন করেন। তারপর তিনি দুরা’আত সালাত (নামায/নামাজ) ‍‌আদায় করেন এরপর আমাদের দিকে মুখ করে দাড়ালেন এবং তিনি বলেন, আজকের দিনের প্রথম ইবাদাত হল সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করা। এরপর (বাড়ী) ফিরে গিয়ে কুরবানী করা। যে ব্যাক্তি এরূপ করবে সে আমাদের নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। আর যে এর পূর্বেই যবেহ করবে তা হলে তার যবেহ হবে এমন একটি কাজ, যা সে নিজের পরিবারবর্গের জন্যই তাড়াতাড়ি করে ফেলেছে, এর সাথে কুরবানীর কোন সম্পর্ক নেই। তখন এক ব্যাক্তি (আবূ বুরদা ইবনু নিয়ার (রাঃ) দাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি (তো সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বেই) যবেহ করে ফেলেছি। এখন আমার নিকট এমন একটি শেষশাবক আছে যা পূর্ণবয়স্ক মেষের চাইতে উত্তম। (এটা কুরবানী করা যাবে কি?) তিনি বললেন, এটাই যবেহ কর। তবে তোমার পর আর কারো জন্য তা যথেষ্ট হবে না।

৯২৬) মূসা দ্দাস (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে কখনো ঈদে উপস্থিত হয়েছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। যদি তার কাছে আমার মর্যাদা না থাকত তা হলে কম বয়সী হওয়ার কারণে আমি ঈদে উপস্থিত হতে পারতাম না। তিনি বের হয়ে কাসীর ইবনু সালতের গৃহের কাছে স্থাপিত নিশানার কাছে এলেন এবং সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর খুতবা দিলেন। তারপর তিনি মহিলাগনের নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তার সংঙ্গে বিলাল রা ছিলেন। তিনি তখন মহিলাগনের উপদেশ দিলেন, নসীহত করলেন এবং দান সাদাকা করার জন্য নির্দেশ দিলেন। আমি তখন মহিলাগণের নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে বিলাল রা এর কাপড়ে দান সামগ্রী ফেলতে দেখলাম। এরপর তিনি এবং বিলাল রা নিজ বাড়ীর দিকে চলে গেলেন।

৯২৭) ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ইবনু নাসর (রহঃ) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন দাড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন, পরে খুতবা দিলেন। খুতবা শেষে নেমে মহিলাগণের নিকট আসলেন এবং তাদের নসীহত করলেন। তখন তিনি বিলাল (রাঃ) এর হাতের উপর ভর দিয়ে ছিলেন এবং বিলাল (রাঃ) তার কাপড় প্রসারিত করে ধরলেন। মহিলাগণ এতে দান সামগ্রী ফেলতে লাগলেন (‌আমি ইবনু জুরাইজ) আতা (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কি ঈদুল ফিতরের সাদাকা? তিনি বললেন না, বরং এ সাধারণ সাদাকা যা তারা ঐ সময় দিচ্ছিলেন। কোন মহিলা তার আংটি দান করলে অন্যান্য মহিলাগণও তাদের আংটি দান করতে লাগলেন। আমি আতা (রহঃ) কে আবার জিজ্ঞাস করলাম, মহিলাগণকে উপদেশ দেওয়া কি ইমামের জন্য জরুরী? তিনি বললেন, অবশ্যই, তাদের উপর তা জরুরী। তাদের (ইমামগণ) কি হয়েছে ‍যে, তারা এরূপ করবেন না? ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলছেন, হাসান ইবনু মুসলিম (রহঃ) তাইস (রহঃ) এর মধ্যমে ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর, উমর ও উসমান (রাঃ) এর সংঙ্গে ঈদুল ফিতরে আমি উপস্থিত ছিলাম। তারা খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, পরে খুতবা দিতেন। নাবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি তিনি হাতের ইশারায় (লোকদের) বসিয়ে দিচ্ছেন। এরপর তাদের কাতার ফাক করে অগ্রসর হয়ে মহিলাদের কাছে এলেন। বিলাল (রাঃ) তার সংঙ্গে ছিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের এ আয়াত পাঠ করলেন: অর্থ “ হে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঈমানদার মহিলাগণ আপনার নিকট এ শর্তে বায়’আত করতে আসেন (সূরা মুমতাহিনা:১২)। এ আয়াত শেষ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এ বায়’আতের উপর আছ? তদের মধ্যে একজন মহিলা বলল, হ্যাঁ, সে ছাড়া আর কেউ এর জবাব দিল না। হাসান (রহঃ) জানেন না, সে মহিলা কে? এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সাদাকা কর। সে সময় বিলাল  (রাঃ) তার কাপড় প্রসারিত করে বললেন, আমার মা-বাপ আপনাদের জন্য কুরবান হোক, আসুন, আপনারা দান করুন। তখন মহিলাগণ তাদের ছোট-বড় আংটি গুলো বিলাল (রাঃ) এর কাপড়ের মধ্যে ফেলতে লাগলেন। আবদুর রাযযাক (রহঃ) বলেন, ‘’ হল বড় আংটি যা জাহেলী যুগে ব্যবহৃত হত।

৯২৮) আবূ মা’মার (রহঃ) হাফসা বিনত সীরীন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের হতে নিষেধ করতাম। একবার জনৈক মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের প্রাসা’দ অবস্থান করলেন। আমি তার নিকট গেলে বললেন, তার ভগ্নিপতি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তার বোনও স্বামীর সাথে অংশ গ্রহন করেছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্নদের সেবা করতাম, আহতদের সেবা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হবে? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ অবস্থায় তার বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগণ যেন কল্যানকর কাজে ও মমিনদের দুআয় অংশগ্রহন করেন। হাফসা (রাঃ) বলেন, যখন উম্মে আতিয়া (রাঃ) এলেন, তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনছেন? তিনি বললেন হ্যা, হাফসা (রহঃ) বলেন, আমার পিতা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম উল্লেখ করতেন, তখনই এ কথা বলতেন। তাবুতে অবস্থান-কারিণী যুবতীগণ এবং মাসিকচলা মহিলাগণ যেন বের হন। তবে মাসিকচলা মহিলাগণ যেন সালাত (নামায/নামাজ)-এর স্থান থেকে সরে থাকেন। তারা সকলেই যেন কল্যানকর কাজে ও মমিনদের দু’আয় অংশগ্রহন করেন। হাফসা (রহঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম মাসিকচলা মহিলাগণও? তিনি বললেন, হ্যা মাসিকচলা মহিলা কি আরাফাত এবং অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না?

৯২৯) মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) উম্মে আতিয়্যা (রাঃ) থেকে বণিত, তিনি বলেন, (‌ঈদের দিন) আমাদেরকে বের হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই আমরা মাসিকচলা, যুবতী এবং তাবুতে অবস্থানকারীনী মহিলাগণকে নিয়ে বের হতাম। ইবনু আওন (রহঃ) এর এক বর্ণনায় রয়েছে, অথবা তাবুতে অবস্থানকারীনী যুবতী মহিলাগণকে নিয়ে বের হতাম। অতঃপর মাসিকচলা মহিলাগণ মুসলমানদের জামা’আত এবং তাদের দুআতে অংশ গ্রহন করতেন। তবে ঈদগাহে পৃথকভাবে অবস্থান করতেন।

৯৩০) আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে নাহর করতেন কিংবা যবেহ করতেন।

৯৩১) মূসা’দ্দাদ (রহঃ) বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, করবানীর দিন সালাত (নামায/নামাজ)-এর পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে খুতবা দিলেন। খুতবায় তিনি বললেন, যে আমাদের মত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে এবং আমাদেরে কুরবানীর মত কুরবানী করবে, তার কুরবানী যথার্থ বলে গন্য হবে। আর যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে কুরবানী করবে তার সে করবানী গোশত খাওয়া ছাড়া আর কিছু হবে না। তখন আবূ বুরদাহ ইবনু নিয়ার (রাঃ) দড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহর কসম! আমি তো সালাতে (নামাযে) বের হবার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। আমি ভেবেছি যে, আজকের দিনটি তো পানাহারের দিন। তাই আমি তাড়াতাড়ি করে ফেলেছি। আমি নিজে খেয়েছি এবং আমরা পরিবারবর্গ ও প্রতিবেশীদেরকেও আহার করায়েছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওটা গোশত খাওয়ার বকরী ছাড়া আর কিছু হয়নি। আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, তবে আমার নিকট এমন একটি শেষ শাবক আছে যা দু’টো (গোশত খাওয়ার) বকরীর চেয়ে ভাল। এটা কি আমার পক্ষে কুরবানীর জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, হ্যা তবে তোমার পরে অন্য কারো জন্য যথেষ্ট হবে না।

৯৩২) হমিদ ইবনু উমর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, তারপর খুতবা দিলেন। এরপর নির্দেশ দিলেন, যে ব্যাক্তি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে কুরবানী করেছে সে যেন পুনরায় কুরবানী করে। তখন আনসারগণের মধ্যে থেকে এক ব্যাক্তি দাড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার প্রতিবেশীরা ছিল উপবাসী অথবা বলেছেন দরিদ্র। তাই আমি সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বেই যবেহ করে ফেলেছি। তবে আমার নিকট এমন মেষশাবক আছে যা দু’টি মোটাতাজা বকরীর চাইতেও আমার নিকট অধিক পছন্দসই। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেটা কুরবানী করার অনুমতি প্রদান করেন।

৯৩৩) মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) জুনদাব ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা; কুরবানীর দিন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন, এরপর খুতবা দেন। তারপর যবেহ করেন এবং তিনি বলেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে যে ব্যাক্তি যবেহ করবে তাকে তার স্থলে ‌আর একটি যবেহ করতে হবে। এবং যে যবেহ করেনি, আল্লাহর নামে তার যবেহ করা উচিৎ।

৯৩৪) মুহাম্মদ (রহঃ) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন (বাড়ী ফেরার সময়) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইবনু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনায় আবূ তুমাইলা ইয়াহইয়া (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। তবে জাবির (রাঃ) থেকে হাদীসটি অধিকতর সহীহ।

৯৩৫) ইয়াহইয়া ইবনু বুকাইর (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আবূ বকর (রাঃ) তার নিকট এলেন। এ সময় মিনার দিবসগুলোর এক দিবসে তার নিকট দু’টি মেয়ে দফ বাজাচ্ছিল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাঁদর আবৃত অবস্থায় ছিলেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) মেয়ে দুটিকে ধমক দিলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখমন্ডল থেকে কাপড় সরিয়ে নিয়ে বললেন, হে আবূ বকর! ওদের বাধা দিও না। কেননা, এসব ঈদের দিন। আর সে দিনগুলো ছিল মিন‍ার দিন। আয়িশা (রাঃ) আরো বলেছেন, হাবশীরাা যখন মসজিদে (এর প্রাঙ্গনে) খেলাধুলা করছিল, তখন আমি তাদের দেখছিলাম এবং আমি দেখছি, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আড়াল করে রেখেছেন। উমর (রাঃ) হাবশীদের ধমক দিলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওদের ধমক দিও না। হে বণু আরফিদা! তোমরা যা করছিলে তা নিশ্চিতে কর।

৯৩৬) আবূল ওয়ালীদ (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রাঃ) কে সংঙ্গে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেন। তিনি এর আগে ও পরে কোন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করেননি।

বিতির সালাত নিয়ে হাদীস (বুখারী শরীফ)

বিতির  সালাত নিয়ে হাদীস (বুখারী শরীফ)

৯৩৭) আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , এক ব্যাক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট রাতের সালাত (নামায/নামাজ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাতের সালাত (নামায/নামাজ) দু’দু’(রাকা’য়াত) করে। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি ফজর হওয়ার আশংকা করে, সে যেন এক রাকা’য়াত মিলিয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে নেয়। আর সে যে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করল, তা তার জন্য বিতর হয়ে যাবে। নাফি (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বিতর সালাত (নামায/নামাজ)-এর এক ও দু’ রাকা’য়াতের মাঝে সালাম ফিরাতেন। এরপর কাউকে কোন প্রয়োজনীয় কাজের নির্দেশ দিতেন।

৯৩৮) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা (রহঃ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন তার খালা উম্মুল মু’মিনীন মাইমুনা (রাঃ) এর ঘরে রাত কাটান। (তিনি বলেন) আমি বালিশের প্রস্থের দিক দিয়ে শয়ন করলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবার সেটির দৈঘ্যের দিক দিয়ে শয়ন করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ঘুমালেন। এরপর তিনি জাগ্রত হলেন এবং চেহারা থেকে ঘুমের আবেশ দূর করেন। পরে তিনি সূরা আল ইমরানের (শেষ) দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তারপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ঝুলন্ত মশকের নিকট গেলন এবং উযূ (ওজু/অজু/অযু) করলেন। এরপর তিনি সালাত (নামায/নামাজ) দাড়ালেন। আমিও তার মতই করলাম এবং তার পাশেই দাড়ালাম। তিনি তার ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার কান ধরলেন। এরপর তিনি দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। এরপর দু’রাকাত, এরপর দু’রাকাত, এরপর দু’রাকাত, এরপর দু’রাকাত, এরপর তিনি বিতর আদায় করলেন। তারপর তিনি শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়াজ্জ্বীন তার কাছে এলো। তখন তিনি দাড়িয়ে দু’রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন। তারপর বের হয়ে ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলেন।

৯৩৯) ইয়াহইয়া ইবনু সুলাইমান (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতের সালাত (নামায/নামাজ) দু’দু’রাকাত করে। তারপর যখন তুমি সালাত (নামায/নামাজ) শেষ করতে চাইবে, তখন এক রাকা’য়াত আদায় করে নিবে। তা তোমার পূর্ববতী সালাত (নামায/নামাজ)কে বিতর করে দিবে। কসিম (রহঃ) বলেন, আমরা সবালক হয়ে লোকদের তিন রাকা’আত বিতর আদায় করতে দেখেছি। উভয় নিয়মেই অবকাশ রয়েছে। আমি আশা করি এর কোনটই দোষনীয় নয়।

৯৪০) আবূল ইয়ামান (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকাত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। এ ছিল তার রাত্রিকালীন সালাত (নামায/নামাজ)। এতে তিনি এমন দীর্ঘ সিজদা করতেন যে, তার মাথা উঠাবার আগে তোমাদের কেউ ৫০ আয়াত পড়তে পারে এবং ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর আগে তিনি আরো দু’রাকাত পড়তেন। ‍তারপর ডান কাত হয়ে শুয়ে বিশ্রাম করতেন, সালাত (নামায/নামাজ)-এর জন্য মুয়াজ্জ্বীনের আসা পর্যন্ত।

৯৪১) আবূ নুমান (রহঃ) ‍আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) খেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ) কে বললাম, ফজরের পূর্বের দু’রাকাতে আমি কিরায়াত দীর্ঘ করব কি না, এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’দু’রাকাত করে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন এবং এক রাকাতে মিলিয়ে বিতর পড়তেন। এরপর ফজরের সালাত (নামায/নামাজ)-এর পূর্বে তিনি দু’রাকাত এমন সময় আদায় করতেন যেন একামতের শব্দ তার কানে আসছে। রাবী হাম্মদ (রহঃ) বলেন, অর্থ্যাৎ দ্রুততার সাথে। (সংক্ষিপ্ত কিরআতে)

৯৪২) উমর ইবনু হাফস (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সকল অংশে (অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন রাতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে) বিতর আদায় করতেন আর (জীবনের) শেষ দিকে সাহরীরর সময় তিনি বিতর আদায় করতেন।

৯৪৩ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাতে) সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন, তখন আমি তার বিছানায় আড়াআড়িভাবে ঘুমিয়ে থাকতাম। এরপর তিনি যখন বিতর পড়ার ইচ্ছা করতেন, তখন আমাকে জাগিয়ে দিতেন এবং আমিও বিতর আদায় করে নিতাম।

৯৪৪ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সালাত (নামায/নামাজ) করবে।

৯৪৫ ইসমায়ীল (রহঃ) সায়ীদ ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) এর সঙ্গে মক্কার পথে সফর করছিলাম। সায়ীদ (রহঃ) বলেন, আমি যখন ফজর হওয়ার আশংকা করলাম, তখন সাওয়ারী থেকে নেমে পড়লাম এবং বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করলাম। এরপর তার সঙ্গে মিলিত হলাম। তখন আবদুল্লাহ ইবনু ‍উমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, ভোর হওয়ার আশংকা করে নেমে বিতর আদায় করেছি। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে কি তোমার জন্য ‍উত্তম আর্দশ নেই? আমি বললাম, হ্যা, আল্লাহর কসম! তিনি বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠের পিঠে (আরোহী অবস্থায়) বিতরের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।

৯৪৬ মূসা ইবনু ইসমায়ীল (রহঃ) ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে ফরজ সালাত (নামায/নামাজ) ব্যতীত তার সাওয়ারীতে থেকেই ইশারায় রাতের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। সাওয়ারী যে দিকেই ফিরুক না কেন, আর তিনি বাহনের উপরেই বিতর আদায় করতেন।

৯৪৭ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূত পড়েছেন? তিনি বললেন, হ্যা। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তিনি কি রুকূর আগে কুনূত পড়েছেন? তিনি বললেন, কিছুদিন রুকূর পরে পড়েছেন।

৯৪৮ ‍মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আসিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞারা করলাম। তিনি বললেন, কুনূত অবশ্যই পড়া হত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম। রুকূ’র আগে না পরে? তিনি বললেন, রূকূর আগে। আসিম (রহঃ) বললেন, অমুক ব্যাক্তি আমাকে আপনার বরাত দিয়ে বলেছেন যে, আপনি বলেছেন, রূকুর পরে। তখন আনাস (রাঃ) বলেন, সে ভুল বলেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূর পরে এক মাস ব্যাপি কুনূত পাঠ করেছেন। আমার জানামতে, তিনি সত্তর জন সাহাবীর একটি দল, যাদের ‍কুররা(অভিজ্ঞ কারীগণ) বলা হতো মুশরিকদের কোন এক কউমের উদ্দেশ্যে পাঠান। এরা সেই কওম নয়, যাদের বিরুদ্ধে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদ দুআ করেছিলেন। বরং তিনি এক মাস ব্যাপি কুনূতে সে সব কাফিরদের জন্য বদ দুআ করেছিলেন যাদের সাথে তার চুক্তি ছিল এবং তারা চুক্তি ভঙ্গ করে কারীগণকে হত্যা করেছিল।

৯৪৯ আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মাস ব্যাপী রি’ল ও যাকওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনূত দোয়া পাঠ করেছিলেন।

৯৫০ মূসা’দ্দাদ (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মাগরিব ও ফজরের সালাত (নামায/নামাজ) কুনূত পাঠ করা হত।